৯ই মে আমি আর আব্বুর সর্বপ্রথম কোভিড-১৯ পজিটিভ হই। এর পরদিনই আম্মু এবং সেজো ভাইয়ার টেস্ট করানো হয় ঢাকা মেডিকেলে। ১১ই মে আম্মু আর ভাইয়ারও কোভিড পজিটিভ আসে। যেহেতু ভাইয়া পজিটিভ, আমরা ধরে নিয়েছিলাম ভাবীও পজিটিভ এবং ভাইয়ার তিন মাসের বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে টেস্ট করতে যাওয়াটা খুবই রিস্কি বলে মনে হওয়ায় ভাবীর টেস্ট না করিয়েই ট্রিটমেন্ট শুরু করা হয়।
আব্বু ও আম্মুকে নিয়ে বেশি টেনশন ছিল কারন আব্বুর বয়স ৭৩ ও আম্মুর ৬৩+ এবং দুইজনই ডাইবেটিক পেশেন্ট সাথে হাই ব্লাড প্রেশার এবং আম্মুর আগে থেকেই অনেক বেশি কিডনী সমস্যা ছিল। এরপর আমরা সবাই আলাদা রুমে সেলফ আইসোলেশন এ চলে যাই। বড় ভাইয়া ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তার হওয়ার সুবাদে উনি আমাদের সকল ধরনের গাইডলাইন ও ওষুধের প্রেসক্রিপশন পাঠিয়ে দেন।
আমরা সবাই নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আলাদা করে ফেলি। নিজের প্লেট, গ্লাস, কাপ, কাপড় এগুলো নিজেরা পরিষ্কার করি ও নিজের কাজ নিজে করার চেষ্টা করেছি। নিজেদের রুম থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করতাম, দরজার হাতল, ছিটকিনি ধরার পর স্প্রে করে দিতাম। যতটুকু ক্লিন থাকা যায় ততই ভালো।
সবচেয়ে বেশি সমস্যা ছিল আমার তিন মাসের ভাতিজাকে নিয়ে, যথেষ্ঠ সেফ থেকে বাচ্চাটাকে সামলাতে হতো। প্রথমে আমাদের কোন লক্ষণ ছিল না, শুধু বাবার মৃদু জ্বর, পেট খারাপ, শরীর ব্যথা, গলা ব্যাথা ছিল। আম্মুর পরে হালকা শ্বাসকষ্ট ছিল, সাথে কাশি আর জ্বর। ১৩মে হঠাৎ আব্বুর অবস্থা ক্রিটিকাল হওয়াতে আব্বুকে প্রথমে মনোয়ারাতে, তারপর ঢামেকের কেবিনে শিফট করা হয় এবং আব্বুর সাথে সেজো ভাইয়াও শিফট হয়। হাসপাতালের বাইরে থেকে যাবতীয় জিনিসপত্র মেজো ভাইয়া সরবরাহ করেন আব্বুকে।
আইসোলেশনের ১৪দিন আসলে প্যানিক না করে নিজেকে স্ট্রং রাখাটাই ইম্পরট্যান্ট, যেটা আমরা করেছি। বড় ভাইয়া-ভাবী দুইজনই ডাক্তার এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন নিজের পরিবার কে বাঁচানোর। আমরা বাসায় বসে যতটুকু সম্ভব নিয়মমতো চলেছি আর আল্লাহর কাছে নামায পড়ে দোয়া চেয়েছি যেন আমরা এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারি। আল্লাহতালার অশেষ রহমতে ২৪শে মে আমার ও ভাইয়ার টেষ্ট নেগেটিভ হয়, এর তিনদিন পর আব্বু, আম্মু ও ভাবীর নেগেটিভ আসে।
দীর্ঘ ২১দিন পর আব্বু হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছে সহী সালামতে। আমরা সবাই সুস্থ, সাথে আমার তিনমাস বয়সী ভাতিজাও। এই ১৪ দিনে যা বুঝেছি তা হলো এই একটা রোগ এক ধাক্কায় একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারে। কিছু জিনিসের কাছে আমরা মানুষ হিসেবে খুব অসহায়। তাই যতটুকু সম্ভব প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে না বের হওয়াটাই উচিত। নিজের জন্য না হলেও, নিজের পরিবারের বয়স্কদের জন্য সেফ থাকুন।
আমার ভাইয়া-ভাবী ডাক্তার হওয়ায় তাদের পরামর্শ মেনে আমরা ঔষধ নিয়েছি, দয়া করে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কেউ ঔষধ খাবেন না। একটা জিনিস মনে রাখবেন, জীবনে বেঁচে থাকলে অনেক আমোদ ফুর্তি করতে পারবেন, এখন সময় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার, নিজেকে নিরাপদে রাখার। ধন্যবাদ যারা আমাদের জন্য দোয়া করে পাশে থেকেছেন, তাদের সবাইকে। আল্লাহ সবাইকে সুস্থ রাখুক...