এগিয়ে চলো এক্সক্লুসিভ

দশ মাসের বাচ্চাটাকে নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তা ছিল

21 / 30

দশ মাসের বাচ্চাটাকে নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তা ছিল

দশ মাসের বাচ্চাটাকে নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তা ছিল
  • পড়তে সময় লাগবে মিনিট
  • পড়তে সময় লাগবে মিনিট

জান্নাতুল ফেরদৌস মাহিন

সব ধরণের সাবধানতা অবলম্বন করার পরেও কীভাবে করোনা আমাদের সংসারে ঢুকে পড়লো, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও আমরা জানি না। শুধু এটাই জানি যে, সপ্তাহ তিনেকের অক্লান্ত একটা লড়াই আর খোদার অশেষ মেহেরবানির কারণে বড় ধরণের কোন বিপদ ছাড়াই করোনা থেকে মুক্তি পেয়েছি সবাই। এরমধ্যে আমার দশ মাস বয়সী বাচ্চাটাও আছে।

জুলাইয়ের ১৬ তারিখে আমার স্বামীর করোনা টেস্ট করানো হয়, উপসর্গ বলতে ও শুধু ঘ্রাণ পাচ্ছিল না, জ্বর বা অন্য কোন শারীরিক সমস্যা ছিল না। আমারও জ্বর এসেছিল প্রায় একই সময়ে, সেটাও চলে গিয়েছিল। অনেকটা জোর করেই ওকে টেস্ট করতে নিয়ে যাই, সঙ্গে আমরা মা-মেয়ে দুজনের নমুনাও জমা দিই। পরদিন আমার স্বামী সন্তুর রেজাল্ট এলো, পজিটিভ। তার একদিন পরে আমার আর মেয়ের রেজাল্ট পেলাম, আমি নেগেটিভ, মেয়েরটা পজিটিভ। মেয়েটার বয়স মাত্র দশ মাস, ওর উপসর্গ বলতে শুধু পাতলা পায়খানা হচ্ছিল, আর এটাই সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে বাচ্চাটাকে। ওকে নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তা ছিল।

মা-মেয়ে

আমরা যে বিল্ডিংয়ে থাকি, সেখানে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন আমার ফুপুর পরিবার। ফুপুই নিষেধ করে দিয়েছিলেন, করোনায় আক্রান্ত হবার কথা যাতে কাউকে না বলি। অনেক জায়গাতেই করোনায় আক্রান্ত পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশীরা খারাপ আচরণ করেছে, সেরকম কিছু যাতে না ঘটে, সেই শঙ্কাতেই হয়তো।

আমার স্বামী রেজাল্ট পজিটিভ আসার পরপরই আইসোলেশনের জন্য আলাদা রুমে চলে গিয়েছে, কিন্ত মেয়ের থেকে তো আমার আলাদা হওয়া সম্ভব ছিল না। বাসার কাজে সাহায্য করার জন্য যে মেয়েটা আসতো, তাকে নিষেধ করে দেয়া হয়েছিল এই কয়েক দিনের জন্য। প্রতিদিন বাসার রুমগুলো ডিজইনিফেক্ট করা, মেয়েটাকে সামলানো, সন্তুর দিকে খেয়াল রাখা- সবকিছু করতে হয়েছে এই সময়ে। মেয়ে ঘুমিয়ে গেলেই কাজ করার সুযোগ পেতাম, যেহেতু ওর বাবা কাছে আসতে পারছে না, তাই জেগে থাকা অবস্থায় ওকে নিয়েই পড়ে থাকতে হতো। ভাগ্য ভালো যে পাশের ফ্ল্যাটে ফুপুরা ছিলেন, খাবারের চিন্তাটা তাই করতে হয়নি। প্রতি বেলায় রান্না করা খাবার পাঠিয়েছেন তারা। মাঝেমধ্যে ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের মাধ্যমেও খাবার অর্ডার করেছি, দরজার সামনে ডেলিভারি দিয়ে গেছে, যথাযথ প্রোটেকশন মেনে সেটা রিসিভ করেছি আমিই।

আমার নিজের কোন উপসর্গ ছিল না, শুধু মাঝে কয়েকদিন অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগতো, শরীর দুর্বল হয়ে যেতো। সেটা শারীরিক বা মানসিক ধকলের কারণেও হতে পারে। এমনিতে শারীরিকভাবে বড় কোন সমস্যা হয়নি আমাদের কারোরই। সন্তুর ঘ্রাণশক্তি ফিরে এসেছিল ধীরে ধীরে, তবে আমার মেয়েটা বেশ কিছুদিন ভুগেছে লুজ মোশনে। শরীর দুর্বল হয়ে গিয়েছিল এ কারণে। জ্বর ওঠানামার মধ্যে ছিল, তবে সেটা সিরিয়াস পর্যায়ে যায়নি। রাতে জ্বর এলে বাচ্চাটা কান্নাকাটি করতো। ঔষধ নেয়া হয়েছে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে, ভিডিওকলে ডাক্তার ঔষধ সাজেস্ট করেছিলেন। জিংক ট্যাবলেট এবং অন্যান্য ঔষধ সবই ডাক্তারের সাজেশান অনুযায়ী নিয়েছি। আমার ফুপাতো ভাইয়েরা ঔষধ, বাচ্চার প্যাম্পার্স সবকিছু এনে দিয়েছে বাসা পর্যন্ত। পজিটিভ রিপোর্ট পাবার প্রায় বিশ দিন পর আবার টেস্ট করাই, ততদিনে আমরা সবাই সুস্থ, কোন ধরণের জটিলতা বা উপসর্গ নেই শরীরে। সবার রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে তখন, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার শুরুটা অবশ্য এরও আগেই করে দিয়েছিলাম আমরা। মাঝে কুরবানীর ঈদ গেছে, তখনও আমার স্বামী এবং মেয়ে আক্রান্ত, তাই ঈদের আনন্দটা ছিল না সেভাবে। স্বাভাবিক খাবারই খেতে পেরেছি সবাই, খাবার নিয়ে সমস্যা হয়নি কোন। আমার মেয়েও ব্রেস্টফিডিং করেছে এই সময়ে।

বাড়তি যেটা করেছি, সেটা হচ্ছে গরম পানির ভাপ নেয়া। লেবু, আদা, লং, এলাচ সবকিছু দিয়ে পানি গরম করে সেই পানি খেয়েছি, সেটার ভাপও নিয়েছি। এবং জিনিসটা যথেষ্ট উপকারী বলেই মনে হয়েছে আমাদের কাছে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার মতো অবস্থাতেও যাইনি আমরা, যেহেতু শারীরিকভাবে সবাই মোটামুটি সুস্থই ছিলাম। আল্লাহর রহমতে বড় কোন বিপদ ছাড়াই করোনাকে মোকাবেলা করতে পেরেছি, এটাই শুকরিয়া।

শেয়ারঃ


করোনাজয়ী'র গল্প