একটি শহর, দশ লাখ মানুষের একটি মাত্র হাসপাতাল ও একজন ডাক্তারের গল্প!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
পৃথিবীর 'নরক' বলে খ্যাত ইয়েমেনের মহামারীর পরিস্থিতির গল্প শুনলে আঁতকে উঠবেন যে কেউই...
আমাদের এই পৃথিবী বৈষম্যের এক বড়সড় আঁতুড়ঘর। বিভিন্ন ঘটনা, দুর্ঘটনা, সংঘাত, বিপর্যয়ে এই বৈষম্যগুলো বেশ প্রকট হয়ে আমাদের চোখে এসে ধরা পড়ে। এ বছরের শুরুটা যেমন হলো মহামারী দিয়ে। তখন যে বৈষম্য চোখে পড়লো, স্বাস্থ্যসেবার বৈষম্য। স্পেন, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যখাত দেখলাম, তাদের তৎপরতা দেখলাম এবং হুট করেই আমাদের দেশের সাথে মিলিয়ে দেখতে গিয়ে বৈষম্য হাড়েহাড়ে টের পেলাম। আবার যদি ইয়েমেনের মত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দিকে তাকাই, আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি, সে দেশের সরকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নেয় নি কোনোরকম পদক্ষেপই। সে দিক বিবেচনায় আমরা আবার ভালো অবস্থানেই আছি। অন্তত সরকার কিছু হলেও তো করার চেষ্টা করছে মানুষগুলোর জন্যে।
ইয়েমেনের গল্পই আজ বরং বলি। পৃথিবীর মধ্যে নরক যদি কেউ দেখতে চান, ইয়েমেনের দিকে তাকালেই যথেষ্ট। ২০১৫ থেকে যে দেশে যুদ্ধ চলে আসছে। যেখানে রাতে ঘুমোতে গেলে সকালের সূর্য দেখার নিশ্চয়তা থাকেনা মোটেও। পাঁচ বছরের ধ্বংসযজ্ঞ যে দেশটিকে পরিণত করেছে পৃথিবীর সবচেয়ে মর্মান্তিক দেশে। যুদ্ধ, গোলাবারুদ, দুর্ভিক্ষ, মানবতার সংকট যেখানে প্রতিনিয়তই টপকাচ্ছে বিভিন্ন সব উচ্চতা। এই দেশটিতেই মহামারী যখন হাইয়েস্ট পিকে ওঠে, ইয়েমেনের আদেন শহরে চালু ছিলো একটি মাত্র হাসপাতাল! আদেন শহরের জনগন দশ লাখেরও বেশি। এই দশ লাখ মানুষের জন্যে হাসপাতাল শুধুমাত্র একটি। ঠিকই পড়েছেন। একটিই!
এবং সেই হাসপাতালে ছিলো না কোনো পিপিই, কোনো গ্লাভস, কোনো মাস্ক। সব ডাক্তারেরা পালিয়ে গিয়েছিলেন হাসপাতাল থেকে। কী করবেন? করোনায় সংক্রমিত রোগী সংখ্যা ক্রমশ ভীড় বাড়াচ্ছিলো হাসপাতালে। ডাক্তারদেরও তো বাঁচতে হবে। তাই সরে গিয়েছিলেন তারাও। হু হু করে বাড়ছিলো করোনা-আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। দেদারসে মরেছে তারা। কিন্তু চিকিৎসা সেবা পায় নি। মহামারী মেরে একদম সাফ করে দিয়েছে সব। তবে এরমধ্যেও অন্যরকম এক গল্প আছে৷ আদেনের একমাত্র হাসপাতালের সব ডাক্তার যখন চলে গিয়েছিলেন, হাসপাতালে ছিলেন শুধুমাত্র একজন ডাক্তার। ডাক্তার জোহা। রোগীদের তিনি সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছেন, যতটুকু পারেন।
ইয়েমেনের স্বাস্থ্যখাত এমনিতেই অনেক দিন থেকেই দুর্বল। সেখানে মহামারী এলে যে জেঁকে বসবে, সেটা প্রত্যাশিতই ছিলো। আবার আদেন শহরের একটিমাত্র হাসপাতালেও যে ডাক্তার থাকবেন না, সেটাও প্রত্যাশিত ছিলো। নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই৷ কিছু নেই, তারা কীসের ভরসায় রোগীদের সেবা দেবেন। তাদেরও তো সংসার আছে। তাদের ভরসায় তো তাদের পরিবারও তাকিয়ে আছে। তারা চাইলেও তো সবকিছু পারবে না। কিন্তু এরমধ্যেও ডাক্তার জোহা হয়ে যান 'আনপ্রেডেক্টিবল এক গল্প।' সবার মত তারও যা করার কথা ছিলো, তা না করে তিনি আমাদের দেখান অন্যরকম মানবিক এক গল্প। আমরা আবার ভরসা করে উঠি মানুষের মানবিকতায়।
ভাবুন তো একবার, পুরো শহরের মানুষ আক্রান্ত হয়েছে মহামারীতে। আছড়ে পড়ছে তারা হাসপাতালের দরজায়। তাদের সাহায্য করার মত আপনি শুধু একা, আর কোথাও কেউ নেই। আপনি জানেন, এ লড়াই জেতা আপনার জন্যে সম্ভব না। তাও আপনি বুক পেতে দাঁড়িয়েছেন।
বিশ্বাস করুন, আপনাকে এ অসম লড়াইটি জিততে হবে না। আপনি যে বুক পেতে দাঁড়িয়েছেন, ঠিক তক্ষুনি লড়াইটি আপনি জিতে নিয়েছেন। ডাক্তার জোহাও ঠিক এভাবেই জিতে নিয়েছেন গোটা লড়াইটাই।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন