
বাংলাদেশে বাবার প্রবেশের সবচেয়ে বড় রুট হল টেকনাফ। টেকনাফে ঢুকেই সেখানকার অতি সজ্জন বদি সাহেব নতমস্তকে বাবার ভক্তিসেবা শুরু করলেন। বাবার কল্যানে রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠলেন দেহে এবং অর্থে...
বাবা আছে চার ধরনের-
১। জন্মদাতা বাবা
২। উকিল বাবা
৩। মাজারের বাবা
৪। ইয়াবা (বাবা ডাকা হয়)
চার নম্বর বাবার ইংরেজি নাম- ক্রেজি মেডিসিন। বাংলায়- পাগলা ঔষুধ। জন্মদাতা বাবা আছর করলে আমরা আটসাট হয়ে চুপচাপ থাকি। উকিল বাবা বিয়ে পড়ানোর সময় আমরা চুপচাপ থাকি। মাজারের গাঞ্জা বাবা কথা বলার সময়ও আমরা চুপচাপ থাকি। কিন্তু চার নম্বর বাবা আছর করলে সন্তানরা আকস্মিক উত্তেজিত হয়ে যায়। আকস্মিক উত্তেজিত করবার ক্ষমতার জন্য সবার উপরে স্থান দিয়ে এই বাবাকে বলা হয়- আপার ড্রাগ। আপার ড্রাগ তারাই যারা আকস্মিক স্নায়ুতে প্রভাব বিস্তার করে। শরীরকে উত্তেজিত করে। লোয়ার ড্রাগ হল- ঘুমের ঔষুধ।
উপরের তিন বাবা মানুষের পেটে জন্ম নিয়েছে। চতুর্থ বাবা জন্ম নিয়েছেন কারখানায়। জাপানে। ১৯১৯ সালে। তার বয়স এবার ১০০ বছর হয়েছে। তিনবাবা যুদ্ধবিগ্রহ পছন্দ না করলেও চতুর্থ বাবাকে প্রথম ম্যাসিভ আকারে ব্যবহার করা হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে। জাপান, ব্রিটিশ সেনারা প্রথমে শুরু করে। এরপর হিটলার তার কেমিস্টকে অর্ডার করেন। কেমিস্ট চতুর্থ বাবার নিজস্ব ফর্মুলা আবিষ্কার করেন। এই ফর্মুলায় পাওয়া বাবাকে হিটলার তার চীফ ডাক্তারের হাতে তুলে দিয়ে বলেন, আজ থেকে মেথঅ্যাম্ফিটামিনের ডাকনাম- পারভিটিন। যাও, সৈন্যদের পারভিটিন দাও। ওরা যেন দিনের পর দিন, রাতের পর রাত যুদ্ধবিগ্রহ করতে পারে।
বাবার জন্মের কাহিনী ছিল খুবই হাস্যকর। নাকে সর্দি জমে বন্ধ হয়ে গেলে সেটা খোলার (Nasal Decongestant) জন্য বাবাকে ব্যবহার করা হত (জীবন রক্ষার জন্য প্রধানত ব্যবহার করা হত)। কিন্তু সৈন্যরা অবাক হয়ে দেখলো এটা খেলে যৌন উত্তেজনা চলে আসে। যৌনতা আলোর চেয়েও বেশি দ্রুত ছড়ায়। যুদ্ধের পর বাবার ক্ষমতার কথাও ছড়িয়ে পড়ল বিশ্বজুড়ে।
সবচেয়ে বেশি বাবার সেবা শুরু করল থাইল্যান্ড। পাম্পে তেল নিতে নামলে ট্রাক ড্রাইভাররা বাবাকে ভক্তিভরে সেবন করত। এরপর কয়েকটা ভয়াবহ অ্যাক্সিডেন্ট ঘটার পর বাবার উপর ভক্তি নিষিদ্ধ করে থাই সরকার। থাইল্যান্ডে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাবা চলে আসলেন মায়ানমারে। মায়ানমারের পাহাড়ি এলাকায় দুই আদিবাসী (ওয়া ও কোকাং) হেরোইন-কোকেন বানানো বন্ধ করে নতুন বাবার পূজা শুরু করল।
বাবার গুনের কথা ছড়িয়ে দিতে শুরু করল ভারত ও বাংলাদেশে। বাংলাদেশে প্রবেশের সবচেয়ে বড় রুট হল টেকনাফ। টেকনাফে ঢুকেই সেখানকার অতি সজ্জন বদি সাহেব নতমস্তকে বাবার ভক্তিসেবা শুরু করলেন। বাবার কল্যানে রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠলেন দেহে এবং অর্থে। বাবার গুনের কথা এক লাখ সাতচল্লিশ হাজার বর্গমাইলের এই দেশে এই একজন মানুষ বহুকষ্টে প্রায় একাহাতে প্রচার করলেন। বিপনন করলেন। জনপ্রিয় করলেন।

বাবা যেহেতু ট্যাবলেট ফর্মে থাকে, স্বাভাবিকভাবেই সেটিকে ভক্ষণ করে নেবার নিয়ম। কিন্তু তার মুরিদরা বাবাকে ভক্তি করার বিশেষ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে গরম করে গলিয়ে ধোয়াকে মুখে টেনে নিতে হয়। চতুর্থ বাবাকে নিয়ে ছাত্রদের ধারণা, বাবার খেদমত করলে না ঘুমিয়ে একটানা কয়েকদিন পড়া যায়। তারা জানে না, মস্তিষ্ক অস্থির হলে পড়া যায় না। পুরো লস প্রজেক্ট।
মোটারা ভাবল, বাবার ভক্তি করলে শুকিয়ে যাওয়া যায়। তারা জানে না, অতিরিক্ত ভক্তিতে ক্ষুধামন্দা শুরু হয়। অরুচির জন্য খাদ্যগ্রহণ কমে যায়। তখন মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে শুরু করে। চেহারা হয়ে যায় পোলিও রোগীর মত। গায়করা ভাবে, গানের গলা ভালো হবে। তারা জানে না, বাবার ভক্তি তাকে গান থেকে অবসরে পাঠিয়ে দিবে। ধব্জরা ভাবল, যৌন উত্তেজনা যেহেতু বাড়ায়, ভক্তি করে হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। তারা জানে না, ইনিই একমাত্র বাবা যিনি সবল এবং সক্রিয় সম্পদও চিরতরে লুন্ঠণ করে নেন।
তিন বাবাকে ছাপিয়ে চতুর্থ বাবা কেন এত বিখ্যাত? দুটো কারণ-
১। ডাল (ফেন্সিডিল), ভর্তা (গাঁজা), কোকেন আকারে বড়। এদের পরিবহন কঠিন। কিন্তু বাবার সাইজ অতিশয় ক্ষুদ্র। তাকে যেকোনভাবে পরিবহণ করা যায়। ডাল ভর্তার ব্যবসায়ীরা সহজ এবং নিরাপদ ব্যবসা হিসেবে বাবার ব্যবসা শুরু করল।
২। অন্য বাবারা দেরিতে কাজ করলেও, চতুর্থ বাবাকে ডাকার এক মিনিটের মাথায় আছর করে।
এই দুটো কারণে চতুর্থ বাবা এত দ্রুত বিখ্যাত হয়েছেন।
বাবা সেবা করলে কী ঘটতে পারে? রুচি কমে যাবে। শুকিয়ে যাবেন পোলিও রোগীদের মত। যৌনক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন স্থায়ীভাবে। স্মৃতিশক্তি কাজ করবে না। ভুলে যাবেন সবকিছু। স্বাভাবিক ব্যাপারগুলোও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। দ্বিধান্বিত থাকবেন। বাবার ভক্তি করলে তার আছর মোটামুটি ২৪ ঘন্টা থাকে। এরপর? বাবার আছর আকস্মিক শেষ হয়ে যায়। শুরু হয় ডিপ্রেসিভ ফেইজ। এই মুহুর্তে আপনার মনে হবে- এ জগত সংসার কিছুই নয়। মিছে তব ভালোবাসা। আপনার সুইসাইড করতে ইচ্ছে করবে। দীর্ঘদিন পর করেও ফেলতে পারেন।
বাবার গুনগান শেষ করলাম। একটা কৌশল শিখিয়ে দিই, কীভাবে ধরে ফেলবেন আপনার সন্তান আপনি বাদেও আরেক বাবার স্নেহধন্য হয়েছে?
- ১। নগদ টাকা নিবে। টাকা কয়েকদিন পরপর না। প্রায় প্রতিদিনই নিবে। কারণ এই বাবাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ভক্তি করতে হয়।
- ২। আপনার সন্তান রাতে ঘুমুচ্ছে না। কিংবা খুব বেশি জেগে থাকে। অস্থির থাকে।
- ৩। ওজন কমে যাচ্ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে।
[নোটঃ উপরের তিনটি ব্যাপার যে সহীহ তা নয়। তবে এমন কিছু বুঝতে পারলে অবশ্যই তলিয়ে দেখতে হবে]
চার বাবার মধ্যে একজন মাত্র বাবা আছেন, যিনি জীবন দিয়ে সন্তানকে রক্ষা করেন। আরেকজন বাবা আছেন, যিনি জলের মতো সন্তানের অর্থ খেয়েও সন্তানের জীবন হরণ করেন।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন