শি জিনপিং: যার হাত ধরে সুপারপাওয়ার হবার স্বপ্ন দেখছে চীন!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
চীনে তার ভয়াবহ জনপ্রিয়তা, আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন তিনি, জীবিত অবস্থায় তার নাম উঠে গেছে চীনের সংবিধানে! সেই শি জিনপিং কি পারবেন, আমেরিকাকে পেছনে ফেলে চীনকে সুপারপাওয়ারে পরিণত করতে?
আব্দুল মালেক: করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝেই লাদাখে ক্রমশই বাড়ছে ভারত-চিন উত্তেজনা, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ আবহ বিরাজ করছে। 'LAC- Line of Actual Control' নিয়ে বিবাদ চলছে। এবার এলএসি বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-চীন উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতা করতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চাইলে মীমাংসাও করতে পারেন। এমনটাই টুইট করেছেন ট্রাম্প। গত বুধবার একটি টুইট করে তিনি জানিয়েছেন, ভারত ও চীন দুপক্ষকেই জানিয়েছি, তাদের মধ্যে বর্তমানে যে সীমান্ত সমস্যা চলছে তার মীমাংসা বা মধ্যস্থতা করতে ইচ্ছুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
চীনের নতুন পেশিশক্তি নীতির প্রভাব ভারতসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ওপর পড়বে বলে মনে করেন এক ঊর্ধ্বতন মার্কিন কূটনীতিক। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড স্টিওয়েল বলেছেন, চীনের নেয়া ব্যবস্থার প্রভাব শুধু তাদের নিজেদের ওপর নয় বরং পুরো অঞ্চল জুড়ে পড়তে যাচ্ছে।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এর আগেও কাশ্মীর নিয়ে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। পাত্তা দেয়নি ভারত। কিন্ত এবার তারা কি করে এটা দেখার বিষয়। অন্যদিকে ভারতকে যুদ্ধের হুমকি দিয়েছে নেপাল। ভারতীয় সেনার গোর্খা রেজিমেন্টকে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করছে। মানস সরোবর পর্যন্ত তীর্থযাত্রার পথ সুগম করতে কালাপানিতে একটি রাস্তা তৈরি করেছে ভারত। তা নিয়েই নেপালের যত আপত্তি। পুঁচকে নেপালও এখন ভারতকে ছেড়ে কথা বলছে না। ভারতকে যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছে!
কালাপানি ও লিপুলেখ নিয়ে গত কিছুদিন ধরেই দুদেশের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। কালাপানিতে ভারতের রাস্তা তৈরি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল নেপাল। তাদের দাবি, ওই ভূখণ্ড নেপালের অন্তর্গত। যদিও এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে ভারতীয় সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানে বলেছিলেন, নেপাল কোনও এক তৃতীয় দেশের প্ররোচনায় পা দিয়ে এমন দাবি করছে। সেই দেশই নেপালকে ভারতের বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করছে। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে করোনার এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে এমনটা করছে কোন তৃতীয় দেশ। সেই দেশটা কি চীন? করোনার ছড়ানোর ইস্যুকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই কি এমনটা করাচ্ছে চীন। নাকি শি জিনপিং যে সুপার পাওয়ার এর অধিকারী হতে যাচ্ছেন, সেটা জানান দেওয়ার জন্যই এতসব আয়োজন?
বিশ্লেষকরা বলে থাকেন, বিংশ শতাব্দী যদি যুক্তরাষ্ট্রের হয়, একবিংশ শতাব্দী হবে চীনের। বিশ বছর আগেও যে চীনকে মনে হয়নি তারা কখনো সুপার পাওয়ার হতে পারে, সেই চীনই এখন যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিচ্ছে। বাণিজ্যযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে জবাব দিচ্ছে চীন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ককে অনেকে দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধ বলে থাকেন।
কার হাতে থাকবে সুপারপাওয়ার? এমন ধরণের প্রশ্ন ঘুরে ফিরে প্রায়শই ফেসবুকে দেখি; সঙ্গে দেখি বিভিন্ন মতামত, গবেষণা, গল্প-কথা। মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে অনেকেই নাকি ক্রমান্বয়ে চায়না এবং এরপর ইন্ডিয়াকে সিরিয়াল দিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ আমেরিকা এক সময় তার ক্ষমতা হারাবে এবং সেই সুপার পাওয়ার এর স্থানটা দখল করবে চায়না। চীন যার হাত ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপার পাওয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, তিনি চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
ফোর্বসের তথ্যমতে, শি জিনপিং বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ছয় বছরের মধ্যেই তিনি এই অবস্থানে চলে এসেছেন। অর্থাৎ, তিনি পেছনে ফেলেছেন ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। শি জিনপিং মাও সে তুং এর পর দ্বিতীয় নেতা, যার আদর্শ ও চিন্তাধারা জীবিত অবস্থায়ই চীনের সংবিধানে লেখা হয়েছে। ২০১৮ সালে চীনের সংসদে প্রেসিডেন্টদের দশ বছর মেয়াদী ক্ষমতায় থাকার আইন তুলে দেয়া হয়। অর্থাৎ, শি জিনপিং এখন আজীবন চীনের প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন। সুপার পাওয়ারের অধিকারী হবার পথে যেটা শি জিনপিংকে সাহায্য করবে অনেকটা।
কিন্তু বাস্তবতা কি বলে সেটা একটু চিন্তা করে দেখা দরকার। চায়নার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৪৩ কোটি এবং তাদের বার্ষিক মাথাপিছু (নমিনাল) আয় ১০,৮৭২ ডলার, এবং টোটাল অর্থনীতির সাইজ প্রায় ১৫ ট্রিলিয়ন ডলার। অপরদিকে আমেরিকার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৩৩ কোটি এবং তাদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৬৭,৪২৬ ডলার, এবং টোটাল অর্থনীতির সাইজ প্রায় ২২ ট্রিলিয়ন ডলার।
প্রকৃতপক্ষে বার্ষিক মাথাপিছু আয়ের হিসাবে একটা দেশের অর্থনীতি বা দেশটির আর্থিক সক্ষমতা কিছুটা উপলব্ধি করা যায়; সেই হিসাবে একজন আমেরিকানের বার্ষিক ৬৭ হাজার ডলারের বিপরীতে একজন চাইনিজের বার্ষিক আয় ১০ হাজার ডলার বা প্রায় ৭ ভাগের এক ভাগ। চায়না যতদিনে ৬৭ হাজার ডলার বার্ষিক আয়ে পৌছবে ততদিনে আমেরিকান বার্ষিক আয় কয়শ হাজার ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে! আবার আমেরিকার ৩৩ কোটি জনসংখ্যা পরিবর্তে চীনের ১৪৩ কোটি জনসংখ্যা যদি বোঝা হয়ে দাড়ায় তাহলে হিসাবটা উল্টে যেতে পারে। চায়না আরও ১ হাজার বছর ধরে তাদের বর্তমান ধারা বজায় রাখলেও আমেরিকার ধারে-কাছেও ভিড়তে পারবে না; সুপারপাওয়ার হওয়া তো অনেক দূরের হিসেব।
প্রকৃতপক্ষে আমেরিকার কোন গণ-প্রোডাক্ট নেই যেটা বিক্রি করে আমেরিকাকে চলতে হয়; যেমন রয়েছে চায়নার; তাদের ১৪৩ কোটি মানুষ পণ্য তৈরীতে ব্যস্ত; সেই প্রোডাক্ট তৈরী করে তারা টাকা ইনকাম করে। কিন্তু আমেরিকা সেভাবে কোন পণ্য তৈরীও করে না। উপরন্ত আমেরিকার নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য দ্রব্যাদির প্রায় ৭০%ই ইমপোর্ট করা হয় চায়না থেকে। তাহলে, আমেরিকা করে টা কি? এখানেই কিন্ত আমেরিকার সুপার পাওয়ার এর রহস্য।
লেখক- আব্দুল মালেক, প্রভাষক; ইংরেজি বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ