চীনের উহান থেকে সৃষ্ট করোনাভাইরাসে থমকে গেছে পৃথিবী। করোনার ধাক্কা এখনো সামলাতে পারেনি বহু দেশ, ইউরোপ আবার লকডাউনের পথে হাঁটছে। সেই পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে, উহানের মানুষজন সব ভুলে পার্টির মেজাজে দিনানিপাত করছে এখন, নাইটক্লাব, পার্টি আর সেলিব্রেশনে মগ্ন তারা আজ!
২০২০ শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক বছরই যখন শেষ হওয়ার দোরগোড়ায় চলে আসে, কেমন এক মিশ্র অনুভূতি টের পাই। এ বছরের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরেকটু ব্যতিক্রম। মানুষ-মৃত্যুর হিসেবে আর আতঙ্কের হিসেবে আমার জীবনে ২০২০ সালের মতন এরকম থমথমে বিষাদগ্রস্ত বছর আমি আর দেখিনি। আবার পুরোপুরি খারাপও বলা যাচ্ছে না বছরকে। এত সব 'নেই নেই' এর ভীড়ে পরিবারসহ সবাই বেঁচে আছি, এও তো এক প্রাপ্তি।
২০২০ এ সবচেয়ে বেশি শুনেছি বোধহয় দুটি শব্দ- করোনাভাইরাস আর লকডাউন। করোনাভাইরাসের ভ্যাক্সিন তৈরী হচ্ছে। আগামী বছরের মাঝামাঝি অথবা শেষদিকে হয়তো সবার হাতেই চলে আসবে এ ভ্যাক্সিন৷ বছরের মতন করোনাভাইরাসেরও হয়তো বিদায়বেলা চলে এসেছে। অথবা, হয়তো আসেনি। অনেক দেশেই নতুন করে সংক্রমণ শুরু হয়েছে আবার। শীতের প্রকোপে বাংলাদেশও আছে সেই ঝুঁকিতে। এরকম একটা সময়ে আগ্রহ নিয়েই তাকালাম, চীনের উহান প্রদেশের দিকে। যে প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া ঘাতক লাখ লাখ মানুষের হন্তারক। কী অবস্থায় আছে এই এলাকার মানুষেরা? আগ্রহ ভরেই খবর নিতে গেলাম। অদ্ভুত বিস্ময়ে খেয়াল করলাম, উহানের মানুষজন পার্টি করছে!
এ বছরের ২৩ জানুয়ারি থেকে লকডাউন ছিলো উহানে। তাও মৃত্যু থামানো যায় নি। প্রায় চার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে এখানে। পরবর্তীতে মৃত্যুর হার কমার পরে লকডাউন যখন শিথিল করা হয় এই অঞ্চলে, মানুষজন আবার পুরোনো মেজাজে ফেরা শুরু করে। এক কোটি দশ লাখ মানুষ বাস করেন এই অঞ্চলে। রাস্তাঘাট ভরে যেতে তাই খুব বেশি সময় লাগে নি আর। স্বাস্থ্য-সতর্কতা, সামাজিক দূরত্ব, পরিষ্কার-পরিছন্নতা সব গিয়েছে চুলোয়। নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে দেদারসে মানুষ নেমে এসেছে রাস্তায়। ভীড়ের মুখ নিয়মিতই বাড়ছে।
রাস্তার খাবার দোকানগুলোতে ভীড় জমছে। নাইটক্লাবগুলোতে ভীড় বাড়ছে। নানারকম উৎসবে একত্রে সময় কাটাচ্ছে অজস্র মানুষ। তারা সবাই ভুলেই গিয়েছে, কয়েক মাস আগেই, তাদের এখানে মারা গিয়েছিলো চার হাজার মানু্ষ। তারা এটাও ভুলে গিয়েছে, এই জায়গা থেকে উৎপন্ন হওয়া রোগে সারা পৃথিবীর অজস্র মানুষ মারা গিয়েছেন, এখনো যাচ্ছেন।
উহান প্রদেশের মানুষদের এই উন্মাসিক আচরণকে যে কেউ যে কোনো ভাবেই বিশ্লেষণ করতে পারেন। অনেকেই বলতে পারেন, মৃত্যুতে জীবন থেমে থাকে না৷ তাই এই মহামারী থেকে যারা বেঁচে গিয়েছেন, তাদের উল্লাস করার অবশ্যই অধিকার আছে। এটা অনেকেই বলবেন। আমি নিজেও স্বীকার করি তা। অবশ্যই অধিকার আছে। অবশ্যই উল্লাস, উচ্ছ্বাস প্রকাশের অধিকার আছে সবার। কিন্তু এখনো যেই মহামারী থাবা গেড়ে আছে বিশ্ব-মানচিত্রে, তাকে এতটা হেলাফেলা করে দেখার সময় কী এখনই এসেছে? উল্লাস প্রকাশের সময়টাও কী বড্ড তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?
যে স্থান থেকে সৃষ্ট ভাইরাস এত অজস্র প্রাণহানির কারন, সে স্থানের মানুষই এত সহজে সবকিছু ভুলে গেলো? এত সহজেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যায়? পৃথিবী থেকে এ অভিশাপ নির্মূল হওয়ার আগ পর্যন্ত উল্লাস একটু কম করলে খুব বেশি কি ক্ষতি হতো কারো?
প্রশ্ন রেখে গেলাম...
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন