ভারতের হরিয়ানার ছোট্ট গ্রাম থেকে ডব্লুডব্লুই-এর মঞ্চে!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
সালওয়ার কামিজ পরিহিত অবস্থায় কবিতা নামছেন রেসলিংয়ের রিংয়ে! দেখতে অদ্ভুত লাগলেও হরিয়ানার ছোট্ট গ্রাম থেকে তার উঠে আসার গল্পটা কিন্তু চমকপ্রদ!
তার নাম কবিতা দালাল। জন্ম হরিয়ানার এক ছোট্ট গ্রামে। পারিবারিকভাবে খুব বেশি সচ্ছল না হলেও, অবস্থা একেবারে শোচনীয়ও ছিল না তাদের। কিন্তু মূল সমস্যা ছিল তাদের সমাজব্যবস্থায়। বিংশ শতকের শেষ ভাগে এসেও সেখানকার মানুষ ছিল একদমই গোঁড়া, আর নারীশিক্ষার ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। মেয়েদেরও যে শিক্ষার অধিকার আছে, এটা তাদের বিশ্বাসই হতো না। আর তাই সেখানে নারীশিক্ষার হার প্রায় শূন্যের কোঠায়। তাই ওরকম একটা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে আসা কবিতার জন্য অন্য আর সবকিছু বাকি থাক, ন্যুনতম শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়াও ছিল আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব।
কিন্তু কবিতা খুবই সৌভাগ্যবান যে সে যেই সমাজে জন্মেছে, সেই সমাজটা পচে যাওয়া হলেও, সে যেই পরিবারে জন্মেছে সেটা খুবই আধুনিক চিন্তাচেতনায় বিশ্বাসী। বিশেষ করে কবিতার বড় ভাই সন্দ্বীপ ছিলেন কবিতার ব্যাপারে খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তার অনুপ্রেরণাতেই সমাজের অকথা-কুকথাকে তোয়াক্কা না করে কবিতা লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে, এবং গ্র্যাজুয়েশনও শেষ করে। তবে মজার ব্যাপার হলো, সন্দ্বীপ শুধু তার ছোট বোনকে শিক্ষিত করাতেই থেমে থাকেননি। তিনি তার ভেতর দেখেছিলেন একজন ভারোত্তলক হিসেবেও ভালো কিছু করবার অসীম সম্ভাবনা। তাই অল্প বয়স থেকেই কবিতা ভারোত্তলনের চর্চাও শুরু করে, এবং এখানেও বাস্তবিকই সে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হয়।
গ্র্যাজুয়েশন শেষে কবিতা সশস্ত্র সীমা বাল (এসএসবি)-তে খেলাধুলা কোটায় একজন কনস্ট্যাবল হিসেবে যোগদান করে। এসএসবিতে থাকাকালীন সে বেশ কয়েকবার জাতীয় ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে। তবে সশস্ত্র সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে সে সরকারের কাছ থেকে কোন রেসলিং বা কুস্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেত না। কিন্তু ততদিনে একজন পেশাদার কুস্তিগীর হওয়ার বাসনা চেপে বসেছে তার মননে। তাই সে একজন সাব-ইন্সপেক্টর হয়ে যাওয়ার পরও সেই নিশ্চিন্ত ভবিষ্যতের চাকরি ছেড়ে দিতে দুবার ভাবেনি।
তবে রেসলিং এর জন্য চাকরি ছাড়লেও, কবিতা মূলত ভারোত্তোলনেই বেশি নিয়মিত ছিল। এবং ভারোত্তোলক হিসেবে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জনটি আসে ২০১৬ সালে গুয়াহাটি, আসামে সাউথ এশিয়ান গেমসে। সে ৭৫ কেজি ক্যাটাগরিতে ২১০ স্কোর করে স্বর্ণপদক পায়। কিন্তু তারচেয়েও বড় ব্যাপার হলো, নারীদের ভারোত্তোলনে এটা ছিল একটা বিশ্বরেকর্ড। এই অর্জন কবিতাকে আগের চেয়েও অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তবে একজন পেশাদার রেসলার হওয়ার যে সুপ্ত বাসনা, তা অধরাই থেকে যাচ্ছিল। কিন্তু শেষমেষ সেটাও পূরণ হয়। আর তা হয় খুবই নাটকীয় কায়দায়।
সালওয়ার কামিজ পরিহিত অবস্থায় কবিতার একটা রেসলিং চ্যালেঞ্জ গ্রহণের ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। আর তখনই বিশ্ববাসী তার মধ্যে একজন রেসলার হিসেবেও অমিত সম্ভাবনা দেখতে পায়। এই ভিডিওর ওপর ভিত্তি করেই তাকে WWE (World Wrestling Entertainment)-এর পক্ষ থেকে দুবাইয়ে ট্রাই-আউটের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে ভালো করার পর সে ২০১৭ সালে মে ইয়াং ক্লাসিক প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণের সুযোগ পায় 'কবিতা দেবী' নামে। সেখানে অবশ্য সে প্রথম রাউন্ডেই ডাকোটা কাইয়ের কাছে হেরে এলিমিনেট হয়ে যায়। তবে তার আগেই কিন্তু সে ইতিহাস রচনা করে ফেলে।
মে ইয়াং ক্লাসিকে অংশ নিতে সে WWE এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়, যার মাধ্যমে সে বনে যায় সবমিলিয়ে ভারতের তৃতীয় ও নারী হিসেবে প্রথম WWE সুপারস্টার। এর আগে কেবল ভারতের দ্য গ্রেট খালি ও জিন্দার মাহালই WWE-তে রেসলিং করার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু অনেকে মনে করেন, একজন নারী রেসলার হিসেবে কবিতার পক্ষে তার দুই পূর্বসূরীকেও ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই সে গত কয়েক মাস দ্য গ্রেট খালি পরিচালিত Continental Wrestling Entertainment (CWE)-তে রেসলিং এর ট্রেনিং নিয়েছে, এবং জানুয়ারি মাস থেকে সে WWE পারফরম্যান্স সেন্টারেও ট্রেনিং নেয়া শুরু করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে হয়ত এ বছরেরই কোন এক সময় তাকে টিভি পর্দায় WWE এর মেইন রোস্টারে অংশগ্রহণকারী তারকাদের সাথে এক কাতারে দেখা যাবে।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন