পশ্চিমবঙ্গের বাস মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর দাবীতে অনড় ছিলেন, মমতা তাদের কথা শোনেননি। তাই আগের ভাড়াতেই রাস্তায় নামছে গণপরিবহন। অথচ আমাদের দেশে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণ, মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বও...

আজ থেকে পশ্চিমবঙ্গে চালু হচ্ছে গণপপরিবহন, রাস্তায় নামছে বেসরকারী বাস। বাস মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে অনড় ছিলেন। আড়াই মাস ধরে গাড়ির চাকা ঘোরেনি, ব্যবসায় প্রচুর লস হয়েছে, তাছাড়া করোনার ভয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না, মুনাফা হবে না- এসব যুক্তি দেখিয়ে তারা বলেছিলেন, বাস ভাড়া যাতে বাড়ানো হয়। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে এ নিয়ে। কিন্ত পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোয়াধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই মুহূর্তে ভাড়া বাড়ানোর কোন উপায় নেই, কেউ একটা টাকা (রূপি) বেশি ভাড়া নিলে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে! 

বাস মালিকদের প্রতি মমতার এই হুংকার শুনে বাংলাদেশের কথা মনে পড়লো। শতকরা ষাট ভাগ ভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারী করে গণপরিবহন চালু করা হয়েছে এখানে। অথচ বাসে আদায় করা হচ্ছে ডাবল ভাড়া, ষাট পার্সেন্টের হিসেব কেউ মানছেন না। দূরপাল্লার বাসেও হিসেবটা একই, ৩০০ টাকার ভাড়া হয়ে গেছে ৬০০ টাকা, ৭০০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৪০০ টাকা করে। ঢাকা শহরের গণপরিবহনেও একই অবস্থা। দশ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২০ টাকা, আগে যেখানে যেতে ১৫ টাকা দিয়ে হতো, সেখানে এখন ৩০ টাকা লাগছে। 

মিঃ হাইজিন: জীবাণুমুক্ত হাতের প্রতিশ্রুতি

অথচ অর্ধেক যাত্রী পরিবহন বা স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা মেনে চলার যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, সেগুলো মানছে না কেউই। বাস হাউজফুল করে লোক ওঠানো হচ্ছে, যেখানে এক সিট পরপর খালি থাকার কথা, সেখানে আগের মতোই দাঁড়িয়ে যাচ্ছে যাত্রীরা। ওঠানামার সময় গাদাগাদি-ধাক্কাধাক্কি হচ্ছে। বাস মালিকদের চাপের মুখে বর্ধিত ভাড়ার বেলায় সাড়ে ষোলো আনা উসুল হচ্ছে, বাকি নির্দেশনা মনে রাখার ঠেকা কেউ নেয়নি। 

অথচ বাস মালিকরা মমতাকেও চাপ দিয়েছিলেন। দফায় দফায় বৈঠকের পরেও ভাড়া বাড়ানো ছাড়া কোনও পথই খুঁজে পাচ্ছিলেন না তারা। যে ভাবেই হোক ভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে ছিলেন মালিক সংগঠনগুলি। প্রতি বাসে বিশ জনের বেশি যাত্রী নয়- এই শর্তেও আপত্তি ছিল তাদের। কিন্ত বিপরীতে গিয়ে রাজ্যও কড়া অবস্থান নিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, এই কঠিন পরিস্থিতিতে কোনও মতেই ভাড়া বাড়ানো যাবে না। 

বাস মালিকদের যুক্তি ছিল, লোকসানে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। এমনিতেই প্রচুর লস হয়েছে গত আড়াই মাসে। জবাবে মমতা বলেছেন, লস আপনাদের একার হয়নি। এই রাজ্যের প্রতিটা মানুষ কোভিড-১৯ এর ভুক্তভোগী। মানুষের আয় কমেছে, অনেকে চাকরি হারিয়েছে। এই মুহূর্তে বাস ভাড়া বাড়ানোটা সবার জন্যেই গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াবে। সেটা আমরা করতে দিতে পারি না। আমি কথা দিচ্ছি, বাস ভাড়া বাড়বে, রাজ্যের পরিবহন দফতর ঠিক করবে কতটা বাড়বে। কিন্ত সেটা এখন নয়। 

পশ্চিমবঙ্গে ভাড়া বাড়ছে না গণপরিবহনে

বাধ্য হয়ে পরিবহন মালিকরা মেনে নিয়েছেন মমতার কথা, অনড় মুখ্যমন্ত্রীর সামনে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি তারা। বাস মালিকদের কেউ কেউ অবশ্য বাসের সামনে 'কোভিড-১৯ স্পেশাল ফেয়ার' লিখে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ এসেছে, অনেক জায়গায় যতো সিট তত যাত্রী ওঠানোর অভিযোগও এসেছে। সেসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। রাজ্যের কোন সেক্টরই যাতে জনগনকে জিম্মি করতে না পারে- সে ব্যপারে সচেষ্ট থেকেছেন তিনি। কয়েকদিনের মধ্যেই রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা ১২০০ বাস রাস্তায় নামানোর ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। 

এসব দেখেশুনে আফসোসে ভরে গেল মনটা। আমাদের দেশেও সরকার পারতো জনগনের পাশে এভাবে দাঁড়াতে। সেটা না করে বিআরটিএ উল্টো ৮০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল, যেন বিআরটিএ রাষ্ট্রের নয়, পরিবহন মালিকদের সংগঠন, তাদের ভালো-মন্দ দেখাটাই এই সংগঠনের কাজ! সামাজিক নিরাপত্তা মানা হচ্ছে না গণপরিবহনে, আগের মতোই বাস বোঝাই করে বহন করা হচ্ছে যাত্রী, অথচ সেসব দেখার কেউ নেই। ঢাকার বাইরে কয়েক জায়গায় বাড়তি ভাড়া বা বেশি যাত্রী পরিবহনের জন্যে জরিমানার খবর এসেছে। কিন্ত সংখ্যায় সেগুলো এতই নগন্য যে, আঙুলের ফাঁক গলে হারিয়ে যায় সেসব খবর। 

মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো নয় এখন। এই সময়ে গণপরিবহনের ভাড়াটা না বাড়িয়ে আমাদের সরকার পারতো এখানে ভর্তুকি দিতে। অথবা বলতে পারতো, এখন ভাড়া বাড়বে না, দুই-তিন মাস পরে পরিস্থিতি ভালো হলে তখন বাড়ানো হবে। সেরকম কিছুই হলো না এখানে। তিন মাস আগে আগে অফিসে যাওয়া-আসা মিলিয়ে যে মানুষটার দিনে একশো টাকা খরচ হতো, তাকে এখন দুইশো টাকা খরচ করতেই হবে, অংকটা দ্বিগুন হয়ে গেছে। অথচ তার আয় কিন্ত বাড়েনি। মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রমাণ করলেন, মানুষের জন্যে 'মমতা' থাকলে অনেক কিছুই করা যায়। সেই মমত্ববোধের প্রমাণ আমরা দিতে পারলাম কই? 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা