সাজিদ-ওয়াজিদ ব্রাদার্স বলিউডে ভীষণ জনপ্রিয় জুটি। মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে সালমান খানের ফিল্মে তো তারা অটোচয়েজ ছিলেন। দুই ভাইয়ের ছোটজন, ওয়াজিদ খান চলে গেলেন ৪২ বছর বয়সে, ঘাতকের নাম করোনাভাইরাস...

দুই ভাই ছিলেন 'মানিকজোড়' টাইপের। গলায় গলায় ভাব ছিল দুজনের। একসঙ্গে কাজ করতেন, সব ফিল্মে মিউজিকও দিয়েছেন একত্রেই। আলাদাভাবে নয়, তাদের নাম উচ্চারিত হতো পাশাপাশি। বলিউডের জনপ্রিয় এই জুটির একজন গতকাল যাত্রা করলেন অসীমের পথে, সাজিদ-ওয়াজিদ ব্রাদার্সের ছোটজনের নামটা উঠে গেল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের তালিকায়। মাত্র ৪২ বছর বয়স হয়েছিল ওয়াজিদ খানের, সবাইকে অবাক করে দিয়ে, শোকস্তব্ধ করে চলে গেলেন তিনি আচমকাই! 

কিডনির সমস্যা ছিল আগে থেকেই। এর আগেও হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। ডায়ালাইসিস চলছিল। ২০১৮ সালেই একবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ওয়াজিদ খান। সেযাত্রায় যমে মানুষে টানাটানি করে ফেরানো হয়েছিল তাকে। এবার কিডনির সমস্যার সঙ্গে করোনাভাইরাস- দ্বিমুখী আক্রমণে আর পেরে উঠলেন না। অসুস্থ হয়ে পড়ায় মুম্বাইয়ের এক বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। সেখানেই করোনা টেস্ট করানো হয় তার, পজিটিভ এসেছিল ফলাফল। ডাক্তাররা চেষ্টা করেছেন, কিন্ত দুর্বল শরীর নিয়ে সেই যুদ্ধে সাধ্যমতো লড়তে পারেননি ওয়াজিদ, হেরে গেছেন জীবনযুদ্ধে। 

মিঃ হাইজিন- জীবাণুমুক্ত হাতের প্রতিশ্রুতি

সালমান খান ব্রেক দিয়েছিলেন দুই ভাইকে। ক্যারিয়ারে সালমানের সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন। ১৯৯৯ সালে সালমানের 'পেয়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া' সিনেমায় গান লেখা এবং সুর করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। সেই থেকে শুরু। সনু নিগমের একক অ্যালবামে কাজ করেছেন দুই ভাই, তারপরে আরও আরও সিনেমায় মিউজিক কম্পোজের জন্য ডাক এসেছে। 

সালমান খান বরাবরই তাদের মাথার ওপর ছায়া হয়ে ছিলেন। দুই ভাইও প্রচণ্ড সম্মান করতেন এই সুপারস্টারকে। সালমানের অজস্র সিনেমায় মিউজিক ডিরেকশন দিয়েছেন তারা। তেরে নাম, গর্ব, মুঝসে শাদী করোগী, পার্টনার, গড তুসি গ্রেট হো, ওয়ান্টেড, বীর, দাবাং, নো প্রবলেম, এক থা টাইগার- সবগুলো সিনেমাতেই কাজ করেছেন তারা। উপহার দিয়েছেন দারুণ সব গান, মানুষ পছন্দ করেছে সেগুলো। সালমানের সঞ্চালনায় জনপ্রিয় টিভি শো বিগ বসের টাইটেল মিউজিকও করেছেন তারা। করোনাভাইরাসের আক্রমণ না হলে এই ঈদে সালমানের দাবাং-৩ রিলিজ হবার কথা ছিল, সেই সিনেমাতেও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন দুই ভাই। ওয়াজিদ খান নিজের জীবনের শেষ কাজটাও করে গেলেন সালমানের জন্যেই। 

দর্শক-শ্রোতাদের পালসটা খুব ভালো বুঝতেন দুজনে। সিনেমা হলে দর্শক আসে বিনোদিন হতে, সেই দর্শককে গানের তালে কি করে চেয়ার ছেড়ে ওঠানো যায়- সেই কাজে সাজিদ-ওয়াজিদ ছিলেন ভীষণ পারদর্শী। তেরে নামের মিউজিক দিয়ে দর্শকের চোখে তারা জল এনেছেন, পান্ডে জি সিঁটি'র লিরিক দিয়ে হাসিয়েছেন, আবার 'মুন্নি বদনাম হুয়ি' বা এক থা টাইগারের 'মাশাল্লাহ' গান দিয়ে ভরপুর বিনোদন উপহার দিয়েছেন। 

সাজিদ-ওয়াজিদ ব্রাদার্স, এক ফ্রেমে

সঙ্গীত পরিচালনার বাইরে বেশ কিছু গানে কণ্ঠও দিয়েছেন ওয়াজিদ খান। সত্যমেব জয়তে সিনেমার 'তাজদারে হারাম' গানটাই যেমন ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। পপুলার জনরার গানই তার কণ্ঠে উঠে এসেছে বেশিরভাগ সময়। ফেভিকল সে থেকে শুরু করে মাশাল্লাহ, কিংবা হুড হুড দাবাং, ডু ইউ ওয়ানা পার্টনার থেকে ওয়ান্টেড সিনেমার বিখ্যাত গান জালওয়া- এগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন ওয়াজিদ। পর্দার আড়ালে কাজ করেন বলে অনেকে হয়তো জানেনও না, এই গানগুলো তার গাওয়া ছিল। 

বলিউডে এবছর একের পর এক ইন্দ্রপতন ঘটছে। ইরফান খান আর ঋষি কাপুরের পর এবার ওয়াজিদ খান। ৪২ বছর তো চলে যাওয়ার বয়স নয়। ভাই সাজিদ খান এখন একা হয়ে গেলেন, বাকীটা পথ একলাই চলতে হবে তাকে। সালমানের সিনেমাতেই হয়তো এরপরেও কাজ করবেন তিনি, কিন্ত পাশে পাবেন না ছোট ভাইটাকে। বিখ্যাত 'সাজিদ-ওয়াজিদ' জুটির গল্পটা এখানেই শেষ হচ্ছে তাই, কিন্ত এমন করুণ পরিসমাপ্তি কি আশা করেছিল কেউ? 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা