কিডনি বেচে আইফোন কেনা নিয়ে তো অনেক ট্রল করি আমরা। কিন্তু ওয়াং শাংকুং নামের যে লোকটা সত্যি সত্যিই নিজের কিডনি বিক্রি করে আইফোন কিনে এই ট্রলের সূত্রপাত করেছিলেন, কেমন আছেন এখন তিনি? কেউ কি আমরা জানি?

বাজারে একটা আইফোন এলেই হচ্ছে। মানুষজনের ধুন্ধুমার দৌড়ঝাঁপ লেগে যায়। কিনতেই হবে। কিনতেই হবে। কিনতেই হবে। দাম বেশি থাকুক। সমস্যা নেই। ফিচার্স কম থাকুক। সমস্যা নেই। পেছনে আধখাওয়া আপেলের লোগোটা থাকলেই হচ্ছে। তাহলেই সাত খুন মাফ। এই তো দুই এক বছর আগেও যখন আইফোনের প্রি-অর্ডার চলছিলো, মানুষজন অ্যাপলের শোরুমের সামনে দীর্ঘ লাইন দিয়ে তাবু খাটিয়ে থাকা শুরু করলো। সবার আগে আইফোন কিনতে হবে। একটা মোবাইল। অথচ সারাবিশ্বের সবাইকে বেসামাল নাচাচ্ছে। অ্যাপলের ফ্যানবয়ে ছেয়ে যাচ্ছে সারাদেশ। সেরকমই এক ফ্যানবয় ছিলেন চীনের নাগরিক ওয়াং শাংকুং। আজ জানবো তাকে নিয়েই।

অ্যাপল যখনই একটা নতুন মডেলের আইফোন বাজারে ছাড়ে, একশ্রেণির মানুষ তখন ঠাট্টা করা শুরু করে-

দেখবি এইবার কিডনি বেচে আইফোন কেনার প্রতিযোগিতা শুরু হবে।

'কিডনি বেচে আইফোন কেনা' কথাটা একরকমের প্রবাদবাক্যেই রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে সময়ের ব্যবধানে। একই লাইনের মধ্যে হতাশা, বিষাদ, ব্যঙ্গ, পুঁজিবাদী সমাজ...সবকিছুকে নিয়ে এক অদ্ভুত দ্যোতনা যেন! মজার ব্যাপার হলো, এরকম একজন কিন্তু আসলেই ছিলেন যিনি কিডনি বিক্রি করে আইফোন কিনেছিলেন। সেই মানুষটিই ওয়াং শাংকুং। যার কথা একটু আগেই লিখলাম। নয় বছর আগে তিনি করেছিলেন নিজের কিডনি বিক্রি করে আইফোন কেনার কাজটি।

বর্তমানের মত সেসময়েও আইফোনের তুমুল চাহিদা ছিল। অনেকের কাছেই আইফোন বিস্ময়ের চেয়েও বড় বিস্ময়। কেউ কোনোভাবে একটা আইফোনের মালিক হলেই নিজেকে বেশ বড়সড় কেউকেটা ভাবছেন তখন। পা, মাটিতে পড়ছে না...এরকম অবস্থা। চারপাশে আইফোন নিয়ে তুমুল মাতামাতি দেখে মাথা বিগড়ে গেলো ওয়াং শাংকুংয়েরও। কী আছে জীবনে? আইফোনের জন্যে মরিয়া হয়ে গেলেন তিনি। পরবর্তীতে এক লোকের সাথে পরিচয় হয় তার। সেই লোকটি জানান- কিডনি বিক্রির ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন তিনি। পরবর্তীতে হুনান প্রদেশের এক ক্লিনিকে গোপনে অবৈধভাবে শাংকুং এর কিডনি অপারেশন করে পৃথক করা হয়। একটি কিডনি বিক্রি করে পাওয়া টাকা দিয়ে সে আইফোন ও আইপ্যাড কিনে নেয় তখন।  হাসতে হাসতেই জানিয়েছিলো ওয়াং শাংকুং-

দুইটা কিডনি দিয়ে কী হবে? একটা কিডনি হলেই হচ্ছে আমার।

এই ঘটনাটি তার পরিবার জানতে পারে কিছু দিন পরেই। যখন শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে সে হাসপাতালে এসেছে, হাসপাতালের ডাক্তারেরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন- শাংকুং এর একটি কিডনি নেই। পরিবারের সদস্যদের চাপাচাপিতে সে তখন জানায় কিডনি বেচে আইফোন কেনার গল্প। এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। তখন থেকেই 'কিডনি বিক্রি করে আইফোন কেনা' লাইনটি জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করে। এই 'কিডনি কেনা চক্র' এর সাথে যুক্ত নয়জন অপরাধীকে গ্রেফতারও করা হয়েছিলো তখন। শাংকুং এর পরিবারকে কিছু ক্ষতিপূরণও দেয়া হয়েছিলো।

ওয়াং শাংকুং এর বর্তমান অবস্থা

শাংকুং বর্তমানে আছেন খুবই অসুস্থ হওয়ায়। নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে তার। বিছানায় কাটাতে হচ্ছে অধিকাংশ সময়। এগারো বছরের আগের সেই অপারেশন করা হয়েছিলো খুবই অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে। ধারণা করা হচ্ছে, সে কারণেই সমস্যা দেখা দিয়েছে তার শরীরে। হয়েছে ইনফেকশন। তাছাড়া পোস্ট-অপারেটিভ কেয়ারও তাকে দেয়া হয়নি তখন। যেটাও একটা খারাপ প্রভাব বয়ে এনেছে শরীরে। খুব বেশি সুসংবাদ পাওয়া যাচ্ছে না মোটেও। অনিয়ন্ত্রিত জীবন আর অনিয়ম, সে সাথে এক কিডনিতে ভর করে চলতে চলতেই পুরো শরীরটি হয়ে উঠেছে নানারোগের ডিপো। অর্গান ফেইলিওর হচ্ছে ক্রমশই। এক আইফোনই জীবন প্রায় নিঃশেষ করে এনেছে। এবং এভাবে তিনি আর ক'দিন বাঁচবেন, সেটা অনেকেরই প্রশ্ন।

তবে তার জীবনগল্প যতই মর্মান্তিক হোক, আইফোন কেনার জন্যে নিজের কিডনি বিক্রি করে দেয়ার শাংকুং এর এ গল্প মানুষকে বিনোদিত করেছে প্রচণ্ড এবং সামনেও যে করতে থাকবে, তা গ্যারান্টি দেয়াই যায়। ওয়াং শাংকুং পুঁজিবাদী পৃথিবীর উন্মাদনার এক নির্মম দৃষ্টান্ত হয়ে থেকে যাবেন সেভাবেই।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা