দুইবার ক্যান্সার থেকে ফেরত আসা নারীর উদ্যোগ এবং একটি মেসেজ!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
প্রতিটি মেয়েরই ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন থাকে নিজ বিয়ের দিনটি নিয়ে। খাওয়া-দাওয়া, ফটোগ্রাফি, নাচ-গান, সব ছাপিয়ে যে ভাবনাটি মেয়েদের মাথায় সবচেয়ে বেশি ঘুরে, তা হলো সাজগোজ। কেমন হবে শাড়ি-গয়না, কেমন হবে মেকআপ, চুল কেমন করে সেট করা হবে- সর্বোপরি জীবনের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত দিনটিতে কেমন লাগছে তাকে দেখতে, এই নিয়ে থাকে ব্যাপক উত্তেজনা।
তার ব্যতিক্রম নয় রুপাও (ছদ্মনাম)। ভালোবাসার মানুষটির সাথে কাবিন হয়ে ছিল আগেই৷ পড়াশোনার খাতিরে উঠিয়ে নেওয়া হয়নি, আনুষ্ঠানিকতা হবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর। অনুষ্ঠান নিয়ে রুপার মনে স্বপ্নের শেষ নেই! কিন্তু সেই স্বপ্ন গুড়ো গুড়ো হয়ে যায় যেদিন ক্যান্সার ধরা পরে তাঁর। ছয় মাস মরণব্যাধির সাথে লড়ে অবশেষে স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসে রুপা, গ্র্যাজুয়েশনটাও শেষ ততদিনে৷
পারিবারিকভাবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রুপাকে উঠিয়ে নিতে চায় এখন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু সবার আগ্রহ থাকলেও কোনো রকম অনুষ্ঠান করতে রাজি হয় না রুপা৷ কেন? কারণ চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি-রেডিওথেরাপি আর কড়া পাওয়ারের ওষুধ-ইঞ্জেকশনের রিয়্যাকশনে মাথার সব চুল পরে গেছে তাঁর। আর চুলকে তো নারীর অলঙ্কার বলা হয়, বিয়ের দিন সে চুলই যদি না থাকে, তবে কেমন লাগবে তাঁকে দেখতে?
রুপার মতো হাজার নারীকে হীনমন্যতা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ভারতের এক নারী নিয়েছেন দারুণ এক উদ্যোগ। বৈষ্ণবী পুভানেদ্রান নাম তাঁর, যিনি নিজেই দুইবার ক্যান্সার থেকে ফেরত আসা এক যোদ্ধা। ওষুধের রিয়্যাকশনে তাঁরও সব চুল পড়ে গেছে। কিন্তু চুলহীন টাক মাথা নিয়েই ব্রাইডাল ফটোশুট করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। ছবিগুলো তিনি তাঁর ইন্সটাগ্রাম আইডিতে শেয়ার করেছেন, যেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তার ফটোশুটের উদ্দেশ্য হলো- চুল ছাড়াও যে বিয়ের পিড়িতে বসা যায় এবং সুন্দর দেখানো যায়, সে মেসেজটি ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের কাছে পৌছানো।
বৈষ্ণবী প্রথমবার স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হোন ২০১৫ সালে৷ সেখান থেকে সুস্থ হবার ৪ বছর পর, ২০১৯ সালে আবারও ক্যান্সার বাসা বাধে তাঁর শরীরে। এবার লিভার ও মেরুদন্ডে ধরা পরে ক্যান্সার। কেমোথেরাপি চলাকালীনই বৈষ্ণবী সিদ্ধান্ত নেন বিয়ের সাজ দিয়ে ফটোশুট করবেন তিনি৷ 'কেন এই সিদ্ধান্ত' প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন-
"ক্যান্সার চিকিৎসা আমাদের অনেক কিছু থেকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। নিজে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেক ক্যান্সার রোগীর সাথে মেলামেশা করে আমি বুঝতে পারি শুধুমাত্র 'বাজে লাগবে দেখতে' এই চিন্তা করে অনেক নারী তার বিয়ের দিন-তারিখ পেছায়, কিংবা অনুষ্ঠানটিই বাতিল করে দেয়। কিন্তু চুল ছাড়াই যে কাউকে সুন্দর দেখাতে পারে, ক্যান্সার হওয়া মানেই যে নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দেওয়া নয়, সে উপলব্ধি করানোর জন্যই আমার এ সিদ্ধান্ত।"
নিঃসন্দেহে দারুণ সিদ্ধান্ত। লাল শাড়ির সাথে মানানই গয়না, হাতভর্তি মেহেদী- সত্যিই খুব চমৎকার লেগেছে বৈষ্ণবীকে দেখতে, মুখের আত্মবিশ্বাসপূর্ণ হাসিটা সৌন্দর্যে যোগ করেছে অতিরিক্ত মাত্রা।
সবারই অধিকার আছে স্বপ্ন দেখা এবং তা বাস্তবায়ন করার৷ আপনি অবশ্যই আপনার মতো করে প্রতিদিনই সুন্দর। তবে রুপার মতো যেসব নারীরা হীনমন্যতায় ভুগছেন, বৈষ্ণবীর মতো নারীরা তাদের কাছে অনুপ্রেরণার অপর এক নাম হয়ে থাকবে।