মুরাদ ভাইয়ের মন-দিল ভালো না। লোকজন আড়ালে তাকে মুরাদ টাকলা ডাকে। স্কুল জীবনে মুরাদ ভাইকে অনেক লোভ দেখানো হয়েছিলো। নাইন টেন দুটি বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের ভিত্তি।

মুরাদ ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ঝামেলায় আছেন। চার সেমিস্টার গেলো মাত্র। তাতেই তার মাথার চুল পড়তে পড়তে অবস্থা খারাপ। চুলের জায়গায় ঘাস লাগিয়ে দিলে তার মাথায় দিবারাত্রির টেস্ট ম্যাচ খেলা যাবে এমন অবস্থা। অথচ এক কালে তার মাথা ছিলো বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের অভয়ারণ্য। নানান প্রজাতির উকুন গিজ গিজ করতো তার মাথায়। সেই উকুনেরা এখন দলবদল করে সংগীত শিল্পী জিপার রহমান এর মাথায় বাসা বেঁধেছে।

মুরাদ ভাইয়ের মন-দিল ভালো না। লোকজন আড়ালে তাকে মুরাদ টাকলা ডাকে। স্কুল জীবনে মুরাদ ভাইকে অনেক লোভ দেখানো হয়েছিলো। নাইন টেন দুটি বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের ভিত্তি। মুরাদ ভাই তার ভিত্তি মজবুত করার জন্য একটি ফেসবুক একাউন্ট খুলেছিলেন। লাভার বয় মুরাদ নামে। স্কুল কলেজ মিলিয়ে মুরাদ ভাইয়ের গোল্ডেন এ+ আছে দুইটা। এর জন্য তাকে ফেসবুকে অনেক পড়াশুনা করতে হয়েছে। মাঝে মধ্যে একা একা না পারলে সিক্রেট গ্রুপ করে করে সাজেশন পড়তেন। সারারাত জেগে জেগে ফেসবুকে কঠোর পরিশ্রম এর ফলস্বরুপ তিনি এ+ পান। এবার এলাকার বড় ভাইরা বললেন, এবার তোর সুখের দিন আসলো বলে মুরাদ। আর কোনো চিন্তা নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু পড়তে হয় না। শুধু পাল্লু নিয়ে গুলু গুলু করবি। 

মুরাদ ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। তার ভিতরে আমূল পরিবর্তন দেখলাম আমরা। এখন আর এলাকায় চায়ের দোকানে আসেন না। মাঝে মধ্যে আসলে শুধু ছবি দেখিয়ে চলে যান। চার পাঁচজন মেয়ের সাথে তিনি ঘুরেন। তাদের ভ্যানিটি ব্যাগ বহন করেন। তাদের এসাইনমেন্ট নিজের হাতে তৈরি করে দেন। স্লাইড বানিয়ে দেন। মাঝে মধ্যে তাদের সাথে বিভিন্ন অংগভঙ্গি করে সেলফি দেন ফেসবুকে। আমরাও ভাবি মুরাদ ভাই খুব সুখে আছেন। 

কিছুদিন পর মুরাদ ভাইয়ের প্রথম সেমিস্টার রেজাল্ট দিলো। ফেল করলেন দুই সাবজেক্টে। এরপর থেকে উনার মাথার চুল পড়তে শুরু করলো। চার সেমিস্টার শেষে তার সিজিপিএ আর বলার মতো অবস্থায় নেই। প্রথম প্রথম সিজিপিএ জিজ্ঞেস করলে তিনি গম্ভীর গলায় বলতেন, সিজিপিএ দিয়ে কে কী করেছে কবে! রবীন্দ্রনাথ , আইনস্টাইন , নিউটন এর সিজিপিএ কেউ জিজ্ঞেস করে? করে না। কিন্তু এরাই আমাদের সিজিপিএ নস্টের মূল কারণ। তারা আগ্রুম বাগ্রুম লেখে, থিউরি দেয়। এগুলা পড়তে পড়তে এমনেই ছোট বেলায় অনেক টাইম নষ্ট করছি। আর না। এবার আমিও সিজিপিএ নস্টের কারণ হবো। 

এরপর মুরাদ ভাই কবিতা লেখার চেষ্টা করলেন কিছুদিন। কবিতা লেখার পূর্ব শর্ত হচ্ছে কাঁধে একটা ঝোলার ব্যাগ আর মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি থাকতে হবে। মুরাদ ভাই দাড়ি গজানোর জন্য মিনোক্সডিল ঔষুধ ব্যবহার করলেন। এক মাসের মধ্যে মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি উঠলো। তিনি সর্ব শক্তি দিয়ে কবিতা লেখা শুরু করলেন। কিন্তু বানান ভুলের কারণে তাকে কোনো প্রকাশক পাত্তা দিচ্ছেন না। প্রকাশকরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করেন। কেউ কেউ তাকে মুরাদ টাকলা বলেন আড়ালে। মুরাদ ভাই তবুও কবিতা লিখবেনই।

একজন তাকে বুদ্ধি দিলেন ছ্যাকা খাওয়ার জন্য। ছ্যাকা খেলে নাকি কবিতা ধারালো হয়। তিনি মেয়ে দেখা শুরু করলেন। কিন্তু চুল কম থাকায় কোনো মেয়ে তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না। মুরাদ ভাই ঘটনা বুঝতে পেরে মর্মাহত হন। তার যুক্তি হচ্ছে, “মাথার চুল দিয়ে মানুষ বিচার করা উচিত না,মাথায় মাল আছে কি না সেটি আগে দেখতে হবে।“

উপায় খুঁজে না পেয়ে চুক্তিভিত্তিক প্রেম করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেন। বিদেশে যেভাবে চুক্তি করে বিয়ে হয়, মুরাদ ভাই সেভাবে চুক্তি করে প্রেম করতে আগ্রহী। সাড়ে সাতাশি কেজি ওজনের একটি মেয়ে তার প্রস্তাবে রাজি হলো। শর্ত হলো প্রতিদিন ছয়টি বার্গার ও তিনটি পিজ্জা খাওয়াতে হবে। তবেই প্রেম হবে। মুরাদ ভাই রাজি হলেন। কিছুদিন মেয়েটির সাথে প্রেম করে মুরাদ ভাইয়ের কবিতার নেশা ছুটে গেলো। এইদিকে এই প্রেম করে তার দুটি জিনিস খোয়া গেলো। এক. আরো এক গুচ্ছ চুল, দুই. তেতাল্লিশ হাজার টাকা। 

চার সেমিস্টার শেষ হওয়ার পর মুরাদ ভাইয়ের অবস্থা বেগতিক। তিনি মাঝে মধ্যে হেরে গলায় গান ধরেন। "আমি সর্ব শান্ত বড় ক্লান্ত..." আজকাল কেউ সিজিপিএ জিজ্ঞেস করলে পাগলা গরুর মতো তেড়ে আসেন। শিং থাকলে নিশ্চিত গুতা দিয়ে দুই একজনকে গুতিয়ে মেরে দিতেন। রেজাল্ট ভালো করার জন্য মুরাদ ভাই কলিকাতা হারবালে যোগাযোগ করলেন। বিভিন্ন ভেষজ উপায়ে তাকে পানির সাথে বই এর পাতা গুলিয়ে খাওয়ালো। তাতেও হারানো সিজিপিএ ফেরত আসলো না, হারানো চুলও ফেরত আসলো না। এরপর এক পীরের কাছ থেকে তাবিজ এনে কিছুদিন কোমরে ঝুলিয়ে রাখলেন। তাতে রেজাল্ট এর আরো অবনতি হলো।

অনেকদিন পর, 

…..মুরাদ ভাই এখন বেশিরভাগ সময় চায়ের দোকানে আড্ডা দেন। উনার প্রধান কাজ হচ্ছে এলাকার ছোট ভাইদের বুঝিয়ে সুজিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অনুপ্রাণিত করা। তিনি সবাইকে একটাই কথা বলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে আর পড়ালেখা করতে হয় না...


ট্যাগঃ

শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা