ঊনপঞ্চাশ বাতাস: বুক ভরে শ্বাস নেবার অপেক্ষায় বাংলা চলচ্চিত্র!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ঊনপঞ্চাশ বাতাসের মাধ্যমে আমাদের চলচ্চিত্রে সুবাতাস বইবে। আসুন, সিনেমা হলমুখী হই। আমরা দর্শকরাই না হয় কিছু দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিই। ঠিক করে দিই কোন পথে এগুবে আমাদের সিনেমার ভবিষ্যত।
আমি অর্ধেকটা দম নিই। বাকীটা একসাথে নেবো বলে... একটা ডিএনএ ক্যাপসুলে প্রিয়জনের ব্লু-প্রিন্ট প্রিজার্ভ করা যাবে। এটা কিন্তু একটা বড়সড় বিপ্লব ঘটাবে জেনেটিক্সে।
...এভাবেই শুরু হয়েছে আপকামিং বাংলা মুভি ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ এর ট্রেইলার। জেনেটিক্সে বিপ্লব ঘটাবে কিনা সেটা সিনেমাটা না দেখে বলা যাচ্ছে না। তবে বাংলা চলচ্চিত্রে বিপ্লব ঘটালেও ঘটাতে পারে, অন্তত এইটুক প্রত্যাশা সকল ‘আউট অফ দ্য বক্স’ বাংলা চলচ্চিত্রকে ঘিরেই তৈরি হয় আমাদের মাঝে।
৩ মিনিট দৈর্ঘ্যের ট্রেইলারে স্পষ্ট করে গল্প বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। বরং তৈরি করা হয়েছে রহস্যের ধুম্রজাল। ভৌতিক আবহ দিয়ে শুরু করা হয়েছে ট্রেইলারের প্রথম দিকটা, এরপর কিছুটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর ছোঁয়া, অতঃপর রোমান্স সাথে বেইজবাবা সুমনের কন্ঠে ‘প্রথম’ গানটা বেজে ওঠে... এই প্রথম সিনেমার জন্য প্লেব্যাক করলেন অর্থহীনের সুমন। যাপিত জীবনের টানাপোড়ন কিংবা থ্রিলার, দুই স্বাদই পাওয়া যায় ট্রেইলার থেকে।
পুরো ট্রেইলারের কালার টোন খুব ক্লিন ছিলো, কোথাও ড্রপ হয়নি। ব্যাকরাউন্ড স্কোর যথেষ্ট সাপোর্ট দিয়েছে একটি রহস্যময় আবহ তৈরি করতে। আমরা পাশের দেশের আর্টফিল্মগুলো দেখে যে আহ্লাদ করি, তেমন ধারার নির্মাণই মনে হয়েছে ঊনপঞ্চাশ বাতাসকে। অথচ পাশের দেশের সিনেমার ট্রেইলার রিলিজ হলে একটা তোলপাড় শুরু হয়ে যায় বাঙলা সিনেমাপাড়ায়। আর নিজেদের চলচ্চিত্রকে অপমান করে খুব মজা লুটি আমরা। ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন, ওদের হিট আর আমাদের ফ্লপের মার্কেটিং আমরাই করে দিই বিনা পয়সায়। অবশ্যই সিনেমার কনটেন্ট ম্যাটার করে। তাই বলে, বনের মহিষ আমরা তাড়াবো কেন? এর চাইতে নিজেদের ঘরের যত্ন নেয়াটাই কি বেশি প্রয়োজন নয়?
সিনেমাটির মুক্তির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১৩ই মার্চ। প্রধান দুইটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন শার্লিন ফারজানা এবং ইমতিয়াজ বর্ষণ। সিনেমাটির গল্প, সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। এছাড়া সিনেমার ফটোগ্রাফি, শিল্প নির্দেশনা, সঙ্গীত রচনা ও পরিচালনা কিংবা পোস্টার ডিজাইনের মত টেকনিকাল দিকগুলো একা সামলিয়েছেন নির্মাতা নিজেই। রেড অক্টোবরের ব্যানারে নির্মিত সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন আসিফ হানিফ এবং সৈয়দা শাওন নির্বাহী প্রযোজকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
পরিচালক উজ্জ্বল সাহেবের ভাবনাটা একটু অন্যরকম চলচ্চিত্র নিয়ে। চারুকলার ছাত্র ছিলেন, রয়েছে সব্যসাচী গুণাবলী। সিনেমাটি নিয়ে প্রথম থেকেই আশাবাদী তিনি। কোনও স্টার কাস্ট করে নয়, বরং গল্পের মেধায় তার সিনেমা সফল হবে বলে মনে করেন তিনি। ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মত সিনেজগতে নিজের ছাপ রাখতে যাচ্ছেন টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ শার্লিন ফারজানা। ২০০৮ সালে ‘ইউ গট দ্যা নিউ লুক’ প্রতিযোগিতায় জয়লাভের মাধ্যমে মিডিয়া জগতে প্রবেশ করেন তিনি। জাগো সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেছিলেন তিনি।
‘‘সবার জীবনেই কিছু অনুভূতি থাকে, যা ভাষা, প্রতীক বা শব্দে প্রকাশ করা যায় না। অনুভবগুলো অনুভূত হতে হতেই যেন তার প্রকাশের আকৃতি বদলে যায়। এই রকম অনুভূতির ইংরেজি তর্জমা হতে পারে- ইনকমপ্লিট ব্রেথ। এই অসম্পূর্ণ প্রশ্বাসের চলচ্চিত্র ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। গল্পটা প্রেমের, যে প্রেম কোলাহলকে পরিণত করতে পারে নির্জনতায়।’’ এভাবেই নিজের তৈরি সিনেমাকে ব্যাখ্যা করেছেন নির্মাতা।
ইতিমধ্যেই মাসুদ হাসান উজ্জ্বল নাট্যকার ও পরিচালক হিসেবে সুপরিচিত। বানিয়েছেন ‘ছায়াফেরী’, ‘যে জীবন ফড়িংয়ের’, ‘থতমত এই শহরে’, ‘অর্থহীন মানিপ্ল্যান্ট’, ‘কাগজ কার্বনের সম্মোহন’, ‘কালো বরফ জমাট অন্ধকার’, ‘ধুলোর মানুষ মানুষের ঘ্রাণ’, ‘অক্ষয় কোম্পানির জুতা’, ‘ফসিলের কান্না’ এর মত ভালো কিছু নির্মাণ। প্রশংসিত নাটকের পাশাপাশি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করেও হাত পাকিয়েছেন তিনি। ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ তার নির্মিত প্রথম সিনেমা। তাই তার অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে একটি সুন্দর চলচ্চিত্রের আশা করা যেতেই পারে।
ঊনপঞ্চাশ বাতাসের মাধ্যমে আমাদের চলচ্চিত্রে সুবাতাস বইবে, আবারও বুক ভরে শ্বাস নেয়ার পথ খুঁজে পাবে পথ হারানো বাঙলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। আসুন, আমরা সিনেমা হলমুখী হই। এভাবে যদি নিজেরাই নিজেদের চলচ্চিত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখি তবে ভালো নির্মাণের আশা আমরা কিভাবে করবো। আমরা দর্শকরাই না হয় কিছু দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিই। ঠিক করে দিই কোন পথে এগুবে আমাদের সিনেমার ভবিষ্যত।