নিম্নমানের মাস্ক এবং পিপিইর ব্যবসায় সরকারের বরাদ্দ বিশাল অংকের টাকা কারা মেরেছে এটা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পিয়নও জানে, শুধু তিনি ছাড়া।

একদম সাম্প্রতিক ঘটনাটা বলি। মাত্র ক'দিন আগেই রাজশাহী বিভাগের সিভিল সার্জনদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সেই ভিডিও কনফারেন্সের আগে আরেকটি মিনি কনফারেন্সে বসতে হয়েছিল ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের তরফে পরিচালিত সেই কনফারেন্সে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছিলো প্রধানমন্ত্রীকে কী বলা যাবে না, কী জানানো যাবে না, কী প্রশ্ন করা যাবে না। এন-নাইনটি ফাইভ মাস্ক এবং পিপিই সম্পর্কিত কোনো তথ্য প্রদানের নিষেধাজ্ঞা ছিলো প্রচ্ছন্ন হুমকির সেই বৈঠকে। সুবাদেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জানা হলো না উত্তরবঙ্গের চিকিৎসকরা করোনা সংকটে কী ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এই ধরনের বৈঠক এর আগে আরো হয়েছে, এবং ধারণা করতে পারি সেগুলোরও একই অবস্থা ছিল।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসলেই জানতে পারছেন না। বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজ এবং তার মাঝে একটা দূর্ভেদ্য দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু দূর্নীতিবাজ আমলা এবং নীতিহীন কিছু নেতা নামের চিকিৎসক। এই কঠিন সিন্ডিকেটের বলয় এড়িয়ে কারো চিৎকারই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কানে যাবে না। আমার এই লেখার তো প্রশ্নই ওঠে না। 

এটা এখন ওপেন সিক্রেট যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী দূর্নীতিগ্রস্থ খাতটি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে। সরকারী হাসপাতালগুলোতে যদি অডিট হয়, মন্ত্রনালয়ের অনেকেরই চাকরি থাকবে না- এটা আমি আগেও লিখেছি। ভুয়া ভাউচারে অদৃশ্য চিকিৎসা সামগ্রী কিনে কোটি কোটি টাকা লোপাটের ধারাটা জনাব জাহিদ মালেক উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন মাত্র। তার আগে থেকেই এই লুটপাট চলছে। করোনা ক্রাইসিসে স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে আমাদের হাসপাতালগুলোর সত্যিকার সক্ষমতা। যদিও সেটা প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছাতে দেয়া হচ্ছে না। কোনোভাবেই না। 

এর মধ্যেই ডাক্তার ও নার্সদের মিডিয়ায় কথা বলা নিষিদ্ধ করেছে অধিদপ্তর। নিম্নমানের মাস্ক এবং পিপিইর ব্যবসায় সরকারের বরাদ্দ বিশাল অংকের টাকা কারা মেরেছে এটা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পিয়নও জানে, শুধু তিনি ছাড়া। কিন্তু কারও নাম নেয়া যাবে না। নিলে চাকরি থাকবে না। মিডিয়ায় লিখলে, ফেসবুকে লিখলে মামলা হবে, জেলে যেতে হবে। 

ডিজি সাহেব সেদিনের কনফারেন্সে বলেছিলেন- আপনারা মাস্ক নিয়ে কোনো কথাই বলবেন না পিএমকে। আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, আমাকে করবেন। অধিদপ্তরে অফিসিয়াল চিঠি দিবেন। আমি উত্তর দিবো, এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিবো। ঠিক সেটাই করেছিলেন করোনা চিকিৎসার জন্য ৫০০ শয্যার মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক শহিদ মোহাম্মদ সাদিকুল ইসলাম। তার হাসপাতালে করোনা চিকিৎসকদের জন্য কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পাঠানো নিম্নমানের মাস্ক নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, চিঠি দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে। চিঠির জবাব তিনি পেয়েছেন। তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। 

তো এই হলো পরিস্থিতি। মুখ খুললে চাকরি হারাবেন। আর নিম্নমানের ওইসব গার্বেজ পরে চিকিৎসায় নামলে প্রাণ। শ্যাম রাখবেন, না কুল রাখবেন চিকিৎসকরা! তারা তো বুঝে গেছেন যত বড় লুটেরাই হোক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আর মহাপরিচালক চাঁদকপাল নিয়ে মন্ত্রনালয়ে আছেন, সহসা তাদের হটানোর ক্ষমতা কারো নেই, ইচ্ছেও নেই...


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা