করোনার এই ক্রান্তিকালে চাচা আপন প্রাণ বাঁচা স্টাইলেও ইস্যুটা এড়িয়ে যেতে পারতেন তিনি। যেকোনো ক্রাইসিস মোমেন্টে, ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়াই তো নেতার কাজ। তাইতো হুটহাট উপস্থিত হয়ে যাচ্ছেন জনসাধারণের ভিড়ে। উজ্জীবিত করেছেন সবাইকে...

জর্জ ফ্লয়েড। এই একটি নামই কাঁপিয়ে দিয়েছে পুরো যুক্তরাষ্ট্রকে। বর্ণবাদের স্বীকার হয়ে মৃত্যুবরণ করা এই মানুষটাকে নিয়ে চলছে প্রতিবাদ। যেটা সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে ১২৫টা দেশে। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার এর হ্যাশট্যাগ ঝড়, আর রাজপথে চলছে বিক্ষোভ, আন্দোলন।

ফ্লয়েডের জন্য খোলা গো ফান্ড মি নামক ফান্ডরেইজারে ডোনেশন দিয়েছে পাঁচ লাখেরও বেশী মানুষ। আমেরিকান ডলারে অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ মিলিয়ন ডলার। এটাই কোনো ফান্ড মি পেইজের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এইতো গেলো নেটিজেনদের কথা।  

পিছিয়ে নেই ফ্লয়েডের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীও। কানাডাজুড়ে চলছে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদ। সেই কর্মসূচি ও সমাবেশগুলোতে উঠে আসছে সেখানকার আদিবাসীদের প্রতি শোষণ-নিপীড়নের বিষয়গুলোও।

কানাডার পার্লামেন্টের সামনে আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রতি নিপীড়ন ও পুলিশি বর্বরতার প্রতিবাদে ‘নো জাস্টিস, নো পিস’ শিরোনামে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কালো মাস্ক পরে আচমকাই ঐ সমাবেশে হাজির হন জাস্টিন ট্রুডো।

ফ্লয়েডের গলার ওপর যেভাবে হাঁটু গেড়ে তাকে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দেয়া হয়েছিলো, ঠিক সেভাবেই ট্রুডো তিনবার হাঁটু গেড়ে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। উদারপন্থি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত জাস্টিন ট্রুডো বরাবরই ন্যায়ের পক্ষে তার অবস্থান পরিস্কার করেছেন।

মিঃ হাইজিন জীবাণুমুক্ত হাতের প্রতিশ্রুতি

কখনো পাঞ্জাবি পরে কিংবা কখনো মাস্ক পরে। কিন্তু কখনো আপোশ করেননি অন্যায়ের সঙ্গে। কিছুদিন আগেও করোনার কারণে কানাডার জনগণের উদ্দেশ্যে দেয়া তার ভাষণ বেশ সমাদৃত হয়েছিলো। বরাবরই নিজেকে বেশ সাধারণভাবে উপস্থাপন করেন তিনি। যা কমবেশি সকলের নজর কারে।

যেকোনো ক্রাইসিস মোমেন্টে, ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়াই তো নেতার কাজ। ‘পলিটিকালি কারেক্ট’ স্টেটমেন্ট দিয়ে তিনি কখনোই সেইফ খেলেন না। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কোনো ইস্যু এড়িয়ে না গিয়ে, বরং সেটা মোকাবেলা করেন দক্ষ নেতার মতো করেই।

শুধুমাত্র কানাডার জন্য নয়, তার পদক্ষেপ কথা বলে পুরো বিশ্বের হয়েই। ক্রান্তিলগ্নে একজন বিশ্বনেতা যেমন অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন, তার মাঝেই সেই লক্ষণসমূহ তীব্রভাবে প্রকট। রাজনীতিবিদ তো সকলেই, কিন্তু এমন নেতা হতে পারে কয়জনা?  

তাইতো যুক্তরাষ্ট্রেকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, “কানাডার জনগণ ভীতি ও আতঙ্ক নিয়ে ‍যুক্তরাষ্ট্রকে দেখছে।” এভাবে সরাসরি কোনো প্রতিবেশী দেশের হঠকারিতার বিরুদ্ধে খুব কম নেতাই স্পষ্ট উচ্চারণ করেন। তার নিজ দেশেও চলছে করোনার ক্রান্তিকাল। এই সময়ে চাচা আপন প্রাণ বাঁচা স্টাইলেও এই ইস্যুটা এড়িয়ে যেতে পারতেন তিনি। 

কিছুদিন আগে তো তার স্ত্রীও আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়। নিজে আইসোলেশনে থেকেও কাজ করে গেছেন দেশের জন্য, ভাষণ দিয়ে উজ্জীবিত করেছেন জনগনকে, দেশের জ পরিকল্পনা করেছেন। বিরোধীদলীয় নেতাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। হুটহাট উপস্থিত হয়ে যাচ্ছেন জনসাধারণের ভিড়ে।  

দুর্যোগ নাগরিকদের সামনে একজন লিডারকে পরিচয় করিয়ে দেয় আর মহাদুর্যোগ সেই লিডারকে বানিয়ে তোলে কিংবদন্তি। সে পথেই যেন হাঁটছেন তিনি...   

 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা