
শুরুটা ১৯৯৫ সালে, নতুন কুঁড়িতে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। এরপর মডেলিং, বিজ্ঞাপন, নাটক, সিনেমা- অভিনয় প্রাঙ্গণের সকল ক্ষেত্রেই দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। আজ এই গুণী শিল্পীর জন্মদিন।
'একলাই খাবা, আমারে দিবা না?'- কোকাকোলার জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনে সেই সরল সুন্দর মুখের তরুণীকে দেখে সবাই মুগ্ধ হয়েছিল, কিংবা সিটিসেলের বিজ্ঞাপনে 'নিশিতে যাইয়ো ফুলো বনে'র সেই মিষ্টি হাসির কন্যা। মডেলিং জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর নাট্যজগতে পদচারণা, সেখানেও সফল। পাতার বাঁশির সুরের 'অতঃপর নুরুল হুদা'ই হোক কিংবা 'গ্র্যাজুয়েট' বা হালের 'আয়েশা', টিভি অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে শীর্ষস্থানে জায়গা করে নিলেন। 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' সহ একাধিক চলচ্চিত্রেও নিজেকে করেছেন সম্মুজ্বল, তিনি টেলিভিশন জগতের অন্যতম সেরা জনপ্রিয়তম অভিনেত্রী 'নুসরাত ইমরোজ তিশা'।
শুরুটা ১৯৯৫ সালে, নতুন কুঁড়িতে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। গান থেকে নাচ, অভিনয় সব শাখাতেই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। প্রথম টিভি নাটক 'সাতপোড়ে কাব্য', তবে শিশু শিল্পী হিসেবে আলোচনায় আসেন হুমায়ূন আহমেদের 'প্যাকেজ সংবাদ' নাটক দিয়ে। এরপর বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন।
প্রথম পরিণত অবস্থায় আসেন কোকাকোলার বিজ্ঞাপনে, শুরুতেই বাজিমাৎ। একই বছর সিটিসেলের বিজ্ঞাপনে জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়, কেয়ার বিজ্ঞাপন করে নিজেকে মডেলিং জগতে শীর্ষস্থানে নিয়ে আসেন। দেশের অন্যতম সেরা নারী মডেলদের নাম নিলে তালিকার প্রথমদিকেই থাকবেন তিনি।

মডেলিং জগতের সাফল্যের পর টিভি নাটকে নিজেকে নিয়মিত করলেন। অরণ্য আনোয়ারের 'নুরুল হুদা একদা ভালোবেসেছিল', ফারুকীর 'ক্যারাম ১ম পত্র' ও '৬৯' ছিল সেই যাত্রায় প্রথম ধাপ। মাহফুজ আহমেদের বিপরীতে 'অত:পর নুরুলহুদা'য় সফল অভিনয়ের পর ৪২০, শেষ প্রান্তে, কফি হাউজ, প্রভাতী সবুজ সংঘ, ইট কাঠের খাঁচা ছিল- একে একে নিজেকে প্রমাণ করার প্রয়াস।
শুন্য দশকে নিজের যে প্রতিভা বিকশিত করেছিলেন, সেটা পূর্ণতা পায় গত দশকের শুরুর বছরেই। আর সেটার সূচনা হয় জনপ্রিয় ধারাবাহিক 'গ্র্যাজুয়েট' দিয়ে। এরপর একে একে 'ভালোবাসি তাই', 'ভালোবাসি তাই ভালোবেসে যাই', আরমান ভাই সিরিজ, সিকান্দার বক্স সিরিজ, 'মনফড়িং এর গল্প', 'মনসুবা জংশন', 'লংমার্চ', 'মাইক', 'অ্যাংরি বার্ড', 'এলিয়েন ও রুম্পার গল্প' নাটক দিয়ে নিজের জনপ্রিয়তা আরো দ্বিগুণ করেছেন। অন্যদিকে পাড়ি, রাতারগুল, আয়েশা, বুকের ভিতর কিছু পাথর থাকা ভালো, শেফালি, আমি তৃণা ও ম্যাজিক, কিংকর্তব্যবিমূঢ় সহ অসংখ্য নাটকে নিজের অভিনয় সত্ত্বার প্রমাণ দিয়েছেন। নাট্যজগতে নিজের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিলেন অনেক বছর। সম্প্রতি 'মুখ ও মুখোশের গল্প' করে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন, দর্শকরা আজকের সময়ে এসে এমন নাটকেই যেন তাকে দেখতে চান বারবার, হোক সেটা সংখ্যায় কম।
মডেলিং, নাটকের বাইরে চলচ্চিত্রেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ফারুকীর জনপ্রিয় সিনেমা 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' দিয়ে চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেন, এরপর একে একে টেলিভিশন, অস্তিত্ব, ডুব, হালদায় নিজেকে সপ্রতিভ করেছেন, যদিও 'রানা পাগলা'য় অভিনয় করে সমালোচিত হয়েছেন। তারেক মাসুদের 'রানওয়ে'তে অতিথি শিল্পী হিসেবেও অভিনয় করেছেন। ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা 'ফাগুণ হাওয়ায়'র পর সর্বশেষ মুক্তি পেয়েছে 'মায়াবতী'। সেন্সর ছাড়পত্র পেলেই মুক্তি পাবে 'শনিবার বিকেল', কাজ করছেন 'নো ল্যান্ডস ম্যান' সিনেমায়। দীপঙ্কর দীপনের বানিজ্যিক ছবি 'ঢাকা ২০৪০'তেও অভিনয় করছেন, মুক্তি পাবে এই বছরেই।

অভিনয় করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন অভিনেতার সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন, এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে মোশাররফ করিম ও তাহসানের সঙ্গে জুটি। এছাড়া মাহফুজ আহমেদ, জাহিদ হাসান, সজলের সাথেও বেশ আলোচিত, খুব স্বল্প দিনের হলেও অপূর্বের সাথে জুটিটি দর্শকদের এখনও মনে আছে। বর্ণিল ক্যারিয়ারে পেয়েছেন সেরা অভিনেত্রী হিসেবে দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সম্মান। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বেসরকারি পুরস্কার মেরিল প্রথম আলোতে সর্বোচ্চ পুরস্কারের মালিক তিনি, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ১৪টি পুরষ্কার পেয়েছেন।
ব্যক্তিজীবনে বিয়ে করেছেন জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীকে, কোনোরকম গুজববিহীন বেশ সুখেই সংসার করছেন। ১৯৮৬ সালের আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করা এই স্বনামধন্য অভিনেত্রী আজ পেরোচ্ছেন জীবনের ৩৪ টি বছর, রইলো শুভকামনা। তাঁর মিডিয়া জীবন ও ব্যক্তিজীবনের সাফল্য কামনা করি।