১৮ বছরের এই ছেলেটা ধর্ষণ করেছে নাকি নিজেদের ইচ্ছায় মিলিত হয়েছে; তার চাইতেও বড় আর গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন সবাই এডিয়ে গেছে। অথচ এ প্রশ্নটি সবার আগে তোলা দরকার ছিল!

১৮ বছরের এক যুবক ১৭ বছরের এক মেয়েকে ধর্ষণ করেছে নাকি নিজেরা নিজেদের ইচ্ছায় মিলিত হয়েছে; এই নিয়ে এখন আমাদের ঘুম হারাম হয়েছে। বাংলাদেশি ফেসবুকাররা দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। 

একদল বলছে- মেয়েটা তো স্বেচ্ছায় গিয়েছে। একদম ঠিক হয়েছে। যত দোষ মেয়েটারই। আরেকদল বলছে- মেয়েটাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সব দোষ ছেলেটার। জলজ্যান্ত মেয়েটা যে মরে গেল; এই নিয়ে অবশ্য কারো কোন মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। মেয়েটা মরে ভুত হলেই কী, অথবা ডাইনি হলেই কী! এতে আমাদের কিছু যায় আসছে না। আমাদের যত আগ্রহের বিষয়- রগরগে কিছু বিষয় নিয়ে। 

মেয়েটা স্বেচ্ছায় গেল, নাকি ধর্ষিত হলো; এই আলোচনায় একটা রগরগে ব্যাপার আছে। একদল তো দেখছি ছেলেটাকে 'হিরো' বানিয়ে দিয়েছে! কোথায় যেন পড়লাম লিখেছে- 'সাব্বাস ব্যাটা। পুরুষ হলে তো এমন শক্তিশালী পুরুষই হতে হবে!' 

আমাদের অধিকাংশ বাংলাদেশি পুরুষরা কেমন; সেটা বুঝার জন্য বেশি দূর যেতে হবে না। আজ সকালে আমার বড় বোন ও ভাগ্নি সহ ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করেছি। সে পোস্টে একজন এসে মন্তব্য করেছে- "আপনার এই ছবি নগ্নতাকে প্রমোট করে"। এই ছেলে ভাই-বোন, ভাগ্নির একটা অতি স্বাভাবিক ছবিতেও নগ্নতা  খুঁজে পাচ্ছে! চিন্তা করে দেখুন কতোটা অসুস্থ এদের মানসিকতা। 

কষ্ট করে কি একটা ঘণ্টা সময় নিয়ে একটা পর্যবেক্ষণ করবেন আজই? আপনি নিজেই বুঝে যাবেন- অধিকাংশ বাংলাদেশি পুরুষ মানে আসলে কী! 

আপনি যদি ঢাকা শহর, দেশের যে কোন বিভাগীয় কিংবা জেলা শহরে থেকে থাকেন; আপনার পাড়ার গলিতে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকুন। এরপর শুধু পর্যবেক্ষণ করুন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষগুলোকে। আপনি কী দেখতে পাবেন জানেন? রাস্তা দিয়ে যখনই কোন মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে, সেটা ১২ বছরের বাচ্চা কিংবা ৫০ বছর বয়স্ক নারী হোক; পুরুষগুলো তাকিয়ে থাকবে। তাকিয়ে থাকাটা আসলে স্বাভাবিক। এটা আসলে খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। পুরুষ মানুষ নারীর প্রতি আকর্ষণ বোধ করতেই পারে। নারীর ক্ষেত্রেও সেটা হতে পারে। বিষয়টা অন্য জায়গায়। তাকানোর ভঙ্গী! 

হ্যাঁ, আমি নিজেই সেটা পর্যবেক্ষণ করেছি শেষবার যখন দেশে গিয়েছি। এদের তাকানোর ভঙ্গী দেখে মনে হবে- হেঁটে যাওয়া মেয়েটাকে এরা চোখের দৃষ্টি দিয়েই পারলে ধর্ষণ করে বসে!  

এই যখন অবস্থা, তখন এই দেশের পুরুষ সমাজের অধিকাংশ; সে বয়েস ১৫ হোক, ২৫ হোক কিংবা ৬৫; ছোট থেকে বড় হতেই থাকে ধর্ষণ করার মানসিকতা নিয়ে। কারণ তারা রাস্তায় বসে যাদের সাথে আড্ডা দেয়; মোড়ের গলিতে চায়ের দোকানে যাদের সঙ্গে আলোচনা করে; এরা তো সবাই এভাবেই তাকায় কিংবা এইসব নিয়েই কথা বলে! 

যা হোক, ১৮ বছরের এই ছেলেটা ধর্ষণ করেছে নাকি নিজেদের ইচ্ছায় মিলিত হয়েছে; তার চাইতেও বড় বিষয় হচ্ছে- একটা জলজ্যান্ত মেয়ে কী করে মারা গেল? মেয়েটার সাথে কী এমন যৌনাচারণ করা হয়েছে যে সে মরেই গেল! 

ও আরেকটা প্রশ্ন। এই প্রশ্ন কেউ এখনও করেছে বলে মনে হচ্ছে না। পত্রিকায় পড়লাম এই ছেলের বাবা হচ্ছেন একজন জেলা রেজিস্ট্রার। তো, ছেলেটা তো মাস্টারমাইন্ড স্কুলে পড়তো। আমি স্কুলটা খুব ভালো করে চিনি ও জানি। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। মাস্টারমাইন্ড স্কুলের বেতন কতো আপনাদের কি জানা আছে? এই স্কুলে পড়াতে বাপ-মা'কে কতো টাকা খরচ করতে হয়; এই সম্পর্কে কি আপনাদের কোন ধারণা আছে? 

একজন জেলা রেজিস্ট্রারের বেতন আসলে কতো? তাঁর বেতনের চাইতেও তো ছেলের স্কুলের বেতন বেশি হবে। এই টাকা সে কোথায় পেত?

এইসব নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। আমরা আছি রগরগে বিষয় নিয়ে- সে কি ধর্ষিত হলো নাকি স্বেচ্ছায় মিলিত হলো!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা