দ্য বাগ পিট: অত্যাচারী শাসকের বর্বর টর্চার সেল থেকে জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ব্রিটেন থেকে আসা এক কর্নেলকে বাগ পিটে ফেলে দেয়া হয়েছিল শুধুমাত্র উপহার ছাড়া খালি হাতে আসার কারণে। এরকম নির্যাতনের কত অজস্র গল্প যে আছে এই অন্ধকূপ নিয়ে, তার হিসেব নেই...
আমাদের ছোটবেলা থেকেই আমরা রাজা-রাজরাদের বিভিন্ন রকম কর্মকান্ড শুনে বড় হয়েছি। তাদের বাড়াবাড়ি রকমের অর্থব্যয়, বাড়াবাড়ি রকমের অত্যাচার, বাড়াবাড়ি রকমের যৌনাচার, বাড়াবাড়ি রকমের বিলাস-ব্যসন নিয়ে আমাদের মোটামুটি সবারই বেশ ভালো ধারণা আছে। শুধু তাই না, তাদের ছিলো বাড়াবাড়ি রকমের মেজাজও। তিল থেকে তাল হলেই মানুষদের গর্দান নিতে, মানুষকে শূলে চড়াতে তাদের মতন ওস্তাদ আর কেউ ছিলো না। অন্তত ইতিহাস তাই বলে। তবে আজকে যাকে নিয়ে কথাবার্তা বলছি, তার মেজাজ ছাড়িয়ে গিয়েছিলো কাছে-দূরের প্রায় সবাইকেই।
বুখারার (বর্তমানে উজবেকিস্তানের অংশ ) আমির ছিলেন নাসরুল্লা খান। তিনি বিখ্যাত ছিলেন তার মেজাজের জন্যে। আমরা যে সময়ের কথা বলছি, সে সময়ে রাশিয়া আর ব্রিটিশদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। মধ্য এশিয়া দখলের জন্যে যুদ্ধ। সবাই সবার মত করে মিত্রশক্তি বাড়াচ্ছে। তারই জের ধরে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাদের এক কর্নেল চার্লস স্টোডার্ট কে পাঠান বুখারার আমির নাসরুল্লা খানের কাছে। এই বার্তা দেয়ার জন্যে যে- ব্রিটিশরা এ যুদ্ধে বুখারার পাশেই আছে। বুখারার সমর্থনও তারা আশা করে। স্টোডার্ট বেচারা সে বার্তা নিয়ে ১৮৩৯-এ রানি ভিক্টোরিয়ার দূত হয়ে গিয়েছিলেন নাসরুল্লার কাছে।
কিন্তু কে জানে কোন কারণে তিরিক্ষি ছিলো নাসরুল্লার মেজাজ। বুখারার আমিরের কাঁছে এসেছেন অথচ স্টোডার্ট কোনো পুরস্কার নিয়ে কেন আসেননি, সে জন্যে খেপে যান নাসরুল্লা। উপহার না নিয়ে যাওয়ার অপরাধে তিনি আদেশ দেন স্টোডার্টকে পোকামাকড়ে ভর্তি এক অন্ধকূপে ফেলার জন্যে। যেই অন্ধকূপের পরবর্তীতে নাম হয়েছিলো দ্য বাগ পিট। এই গর্ত প্রায় চল্লিশ ফুট গভীর। তিন তলা বাড়ির সমান উচ্চতা। এখানে ফেলে দিলে কেউই সাধারণত বাঁচেনি কখনো। গর্তটির অবস্থান বুখারার জিন্দন কারাগারের একেবারে ভেতরে।
যাই হোক, স্টোডার্টকে তো ফেলে দেয়া হলো সেই গর্তে। স্টোডার্টের সঙ্গী হিসেবে রইলো বিষাক্ত সব পোকামাকড়, ইঁদুর, সাপ। সবাই ভেবেছিলো, এখান থেকে বেঁচে ফেরার আশা নেই। সবাই স্টোডার্টের আশা ছেড়েই দিয়েছিলো। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ঐ বিষাক্ত পোকামাকড় ভরা গর্তে তিনি বেঁচে থাকেন প্রায় তিন বছর। কীভাবে তিনি বেঁচে ছিলেন, সেটি হয়ে যায় এক আশ্চর্যজনক বিষয়। পরবর্তীতে স্টোডার্টকে উদ্ধার করতে ১৮৪১ সালে বুখারায় যান ব্রিটিশ এক ক্যাপ্টেন আর্থার কনোলি।
নাসরুল্লা খান প্রথমে কনোলির সাথে ভালোই ব্যবহার করেছিলেন। উপহার নিয়েও গিয়েছিলেন কনোলি। কিন্তু এরমধ্যেই রানীকে এক চিঠি লিখেছিলেন নাসরুল্লা খান। সেই চিঠির জবাব কনোলি সাথে আনেননি দেখে কনোলিকেও সেই বিখ্যাত গর্তে ফেলার নির্দেশ দেন তিনি। কী একটা অবস্থা!
উদ্ধার তো করতেই পারলেন না। কনোলি হয়ে গেলেন স্টোডার্টের গর্ত-সঙ্গী! এভাবেই নারকীয় যন্ত্রণায় কিছুদিন কাটান তারা।
এরমধ্যেই অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধ হয়। বুখারার সাথে ব্রিটিশদের সম্পর্কের অবনতি হয়। নাসরুল্লা খান তখন আদেশ দেন, গর্ত থেকে ঐ দুই বন্দীকে উঠিয়ে আনার জন্যে। কী ভাবছেন, ছেড়ে দেয়ার জন্যে উঠিয়ে আনার আদেশ দিয়েছিলো? মোটেও না। নাসরুল্লা খান কে তাহলে আপনি চেনেননি। বন্দীদের উঠিয়ে আনা হয়েছিলো শিরশ্ছেদ করার জন্যে।
যাই হোক, বন্দীদের উঠিয়ে আনার পর দেখা যায়- এদের সারা গায়ে ফোস্কা, পচন। ফুলে গিয়েছে সারা দেহ। চুল-দাড়ি হয়ে গিয়েছে বড় বড়। বীভৎস চেহারা। প্রথমে এদের জিজ্ঞাসা করা হয় এরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি কী না। তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর তাদের মাথা রাস্তায় ঠেকিয়ে এদের শিরশ্ছেদ করা হয়। ব্রিটেনে দুই দিনের শোকও পালন করা হয়েছিলো, তাদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে।
যে গর্তে তাদের রাখা হয়েছিলো, সে গর্তকে এখন ডাকা হয় 'দ্য বাগ পিট' নামে। হয়ে গিয়েছে এটি একটি পর্যটন স্পট। প্রতিবছর অজস্র পর্যটক আসেন এখানে। এই জায়গাটি দেখার জন্যে। এবং এ জায়গাটি এক অত্যাচারী হিংস্র শাসকের ঘৃণ্য নির্যাতনের স্থান হিসেবে ইতিহাসের এক লজ্জাজনক অধ্যায় হয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে আজও, ঠায়।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন