গুগল কিংবা ফেসবুকের মতো 'ফ্রি সার্ভিস' প্রদান করা প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার কাছ থেকে কি ধরণের এবং কত বেশী তথ্য সংগ্রহ করে, সেটা জানলে আপনি নিজেও ভয় পাবেন। এরা আপনার সম্পর্কে আপনার আপনজনদের চেয়েও অনেক বেশী কিছু জানে!

বর্তমানের অত্যাধুনিক এই পৃথিবীতে অর্থনৈতিক,সামাজিক কিংবা ব্যক্তি-জীবন যে ক্ষেত্রেরই কথা বলিনা কেনো, প্রযুক্তি কিংবা টেক-ইন্ডাস্ট্রির প্রভাব যে কতটা ব্যাপক সেটা নতুন করে কাউকে বুঝাতে হয় না। আমাদের জীবনের প্রতিটা মূহুর্তেই আমরা প্রযুক্তি-জগতের নানা বিষয়ের সাথে নিজেদের সংযুক্ত রাখি,যেগুলো ছাড়া আমাদের বর্তমান জীবন কার্যত অর্থহীন বলা চলে। সুতরাং বৈশ্বিক, জাতীয়, আর্থ-সামাজিক কিংবা ব্যক্তিগত প্রত্যেকটা বিষয়েই টেক-ইন্ডাস্ট্রি যে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ সেটা নিঃসন্দেহেই বলা যায়। কিন্তু আমরা যদি বর্তমানের টেক-ইন্ডাস্ট্রির দিকে একটু তাকাই তাহলে স্পষ্টভাবে দেখতে পারবো বড় বড় গুটিকয়েকটা প্রতিষ্ঠান এই গোটা টেক-ইন্ডাস্ট্রির অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে! এবং এই কারনেই এখানে মনোপলির টার্মটা বেশ ভালোভাবেই চলে আসে।

মনোপলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ টার্মসমূহ - Source: Corporate Finance Institute
মনোপলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ টার্মসমূহ - Source: Corporate Finance Institute

মনোপলি বলতে আসলে কি বোঝায়?

মনোপলি হচ্ছে মূলত একটি অর্থনৈতিক ধারণা, যেখানে একটি প্রতিষ্ঠান কোনো একটা বাজারের নির্দিষ্ট কোনো পণ্য অথবা সেবার একক জোগানদার হয় এবং ঐ নির্দিষ্ট পণ্যের দাম নির্ধারণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অর্থ্যাৎ, ধরা যাক কোনো একটা বাজারে 'ক' নামক একটা পণ্য শুধুমাত্র 'খ' নামক কোম্পানিই উৎপাদন করে এবং ঐ বাজারে 'ক' পণ্যের জন্য আর কোনো উৎপাদনকারী নেই, তাহলে ঐ বাজারে 'খ' কোম্পানীর একটা মনোপলি তৈরি হবে। কোনো বাজারে একটা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের মনোপলি তৈরি হলে, সে বাজারে ঐ কোম্পানির কোনো প্রতিযোগি থাকেনা বিধায় ইচ্ছামত পণ্য বা সেবার দাম নির্ধারণ করতে পারে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঐ কোম্পানি বা প্রতিষ্টান বাজারে অন্যকোনো প্রতিযোগি আসতে দেয়না কিংবা আসার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।

বর্তমানের বিশ্বায়নের এই যুগে বিশুদ্ধ মনোপলি সাধারণত দেখা যায়না, অর্থ্যাৎ একটি পণ্য বা সেবার জন্য বাজারে শুধুমাত্র একটিই কোম্পানি আছে সেটা আজকের সময়ে কার্যত অবাস্তব! এর বিপরীতে যেটা দেখা যায়- সেটা হলো কোনো একটা পণ্য বা সেবার জন্য অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আছে সত্যি, কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে দুই একটা প্রতিষ্ঠান এত বেশী বড় এবং প্রভাবশালী হয়ে থাকে যে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে সেগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে পারে না। ফলে এক্ষেত্রে মনোপলির বদলে 'ডমিনেন্স' কিংবা কর্তৃত্বের সৃষ্টি হয় এবং 'ডমিনেন্ট' অর্থাৎ কর্তৃত্বস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই ঐ পণ্যের বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে!

এই আর্টকেলে এই 'ডমিনেন্স' এর বিষয়টিকেই সহজভাবে বুঝানোর জন্য মনোপলি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। টেক-ইন্ডাস্ট্রিতে এধরনের মনোপলি হরহামেশাই দেখা যায় এবং সেটা কনজুমার অর্থাৎ ভোক্তাদের উপর অনেক বড়সড় রকমের প্রভাব ফেলে থাকে।

চলুন তাহলে আমাদের নিত্যদিনের পরিচিত কিছু প্রতিষ্ঠানের মনোপলি সম্পর্কে জেনে নিই!

গুগলের মনোপলিঃ

টেক-ইন্ডাস্ট্রির কথা উঠবে আর গুগলের নাম আসবেনা সেটা হতেই পারেনা! গুগল অনেকের কাছেই অত্যন্ত প্রিয় একটি নাম আবার অনেকের কাছেই গুগল মানে ভালোর আড়ালে থাকা এক নিষক অন্ধকার! সে যাই-হোক, ১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা হওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি অল্প সময়েই টেক-ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে ফেলে এবং আস্তে আস্তে গুগল সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত করতে সক্ষম হয়।

বর্তমান টেক-ইন্ডাস্ট্রিতে গুগল একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী প্রতিষ্টান - Source: CNBC
বর্তমান টেক-ইন্ডাস্ট্রিতে গুগল একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান - Source: CNBC

আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে গুগলের বিভিন্নধরনের সেবা গ্রহণ করে থাকি এবং গুগলের এসকল সেবা আধুনিক মনোপলির উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যেমনঃ

• গুগল সার্চঃ বর্তমান পৃথিবীর ১ নাম্বার সার্চ ইঞ্জিন হলো গুগল। প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ গুগলের এই সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে থাকে। মাইক্রোসফটের বিং সহ গুগল সার্চের বেশকিছু প্রতিদ্বন্দী থাকলেও অধিকাংশ মানুষ সেসবের নাম জানেই না কিংবা জানলেও ব্যবহার করে না। ফলে, গুগল সার্চ ওয়েব-দুনিয়ার বিশাল একটা অংশকে ডমিনেন্ট করে এবং এর মাধ্যমে ইউজারদের প্রচুর ডাটা কালেকশন করে,যার দ্বারা গুগল ব্যাপক অর্থ উপার্জন করে। গুগল সার্চ নিঃসন্দেহেই একটা আধুনিক মনোপলির উদাহরণ!

• ক্রোম ব্রাউজারঃ গুগল সার্চের মতোই গুগলের ক্রোম ব্রাউজার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সেবা এবং ২০২০ সালে ক্রোম ব্রাউজার গোটা ব্রাউজার মার্কেটের প্রায় ৭০% একাই দখল করে আছে! ক্রোম ব্রাউজারের বেশকিছু প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও তাদের মার্কেট শেয়ার এবং ব্যবহারকারী ক্রোমের তুলনায় নগন্য! গুগল ক্রোমের এই আধিপত্য বাস্তবিক অর্থে গোটা ওয়েবের সেইপ তথা আকার কেমন হবে সেটা নির্ধারণ করে এবং গুগল ক্রোমের মাধ্যমে গুগল ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেটের প্রতিটা একটিভিটি ট্রাক করে এবং প্রত্যেকটি ডাটা কালেক্ট করে। এছাড়াও, ক্রোম ব্রাউজারের মাধ্যমে গুগল তার অন্যান্য সেবাসমূহ ব্যবহারকারীদের নিকট সবসময় পৌছে দেয়। গুগল ক্রোমও নিঃসন্দেহেই একটা মনোপলির উদাহরণ!

• জি-মেইলঃ গুগলের আরেকটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সেবা! ক্রোমের মতোই, এটিও ইন্টারনেটের পুরো ইমেইলের অধিকাংশ শেয়ার একাই দখল করে বসে আছে এবং পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষ ইমেইল বলতে জি-মেইলকেই বুঝে থাকে!

• এন্ড্রয়েডঃ গুগলের পৃথিবীর কোনায় কোনায় প্রতিটা মানুষের কাছে পৌছে যাবার পিছনে এই এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের অনেক বড় রকমের অবদান আছে! ২০২০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের প্রায় ৮০% এন্ড্রয়েডের একার দখলে! একদম পরিষ্কার মনোপলি!

• ইউটিউবঃ ইউটিউব সম্পর্কে আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন হয় না। বর্তমান পৃথিবীর এক নম্বর ভিডিও শেয়ারিং প্লার্টফর্ম। অন্যান্য ভিডিও শেয়ারিং প্লার্টফর্ম গুলো ইউটিউবের প্রতিদ্বন্দী হওয়া তো দূরের কথা, এর ধারে কাছেও নেই! শুধুমাত্র ইউটিউবকে কেন্দ্র করেই ইন্টারনেট ভিত্তিক নতুন পেশা,নতুন বিজনেস এবং নতুন অসংখ্য বিষয়াদির সৃষ্টি হয়েছে! ইউটিউব সন্দেহাতীত ভাবেই গুগলের জন্য সোনার ডিম পাড়া হাঁস। ইউটিউব নিঃসন্দেহেই প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট জগতে গুগলের ডমিনেন্সকে অন্য একটা পর্যায়ে পৌছে দিয়েছে!

এছাড়াও গুগল প্লে-স্টোর,গুগল ম্যাপ,গুগল ড্রাইভ,গুগল ফটোস,গুগল এসিস্ট্যান্ট সহ গুগলের অসংখ্য সেবা রয়েছে যেগুলোর প্রতিটাই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে ডমিনেন্ট ভূমিকা পালন করে। গুগলের ২৫০ টিরও বেশী সেবা কিংবা প্রোডাক্ট রয়েছে এবং এর মাধ্যমে গুগল টেক ও ইন্টারনেট দুনিয়ার অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। গুগল তার সমস্ত প্রোডাক্ট এবং সেবার মাধ্যমে একটা শক্তিশালী ইকো-সিস্টেম তৈরি করে ফেলেছে, যেখানে ব্যবহারকারী একটা সেবা ব্যবহার করা শুরু করলেই গুগলের অন্য কয়েকটা সেবা ব্যবহার করতে বাধ্য এবং সেই কয়েকটা থেকে আরও কয়েকটা..এভাবে চলতেই থাকে!

যেমন একটা উদাহরণ দিই, এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে গুগল তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু সেবাকে ডিফল্ট হিসেবে ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছে দেয়, ফলে ব্যবহারকারীরা সেসব স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহার করতে শুরু করে। যেমন, এন্ড্রয়েড ব্যবহার করতে হলেই জি-মেইল একাউন্ট লাগে,এন্ড্রয়েডে ডিফল্ট ভাবে ইউটিউব,ক্রোম,গুগল ফটোস,গুগল ম্যাপস,গুগল এসিসট্যান্ট সহ আরো অনেক প্রকার গুগল প্রোডাক্ট প্রি-ইন্সটল থাকে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে শুধু এন্ড্রয়েড ব্যবহারের মাধ্যমেই একজন ব্যবহারকারী গুগলের আরো অনেকগুলো সেবা ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে!

এভাবে, গুগল তার প্রতিটি প্রোডাক্ট বা সেবার সাথে তার অন্যান্য সেবাগুলোকে সংযুক্ত করে দেয়। এবং এই পদ্ধতিতে গুগল তার ব্যবহারকারীর উপর নজর রাখে, প্রচুর ডেটা কালেকশন করে যেটা ভয়াবহ রকমের বেশী এবং গুগল এই ডেটাগুলোকে কাজে লাগিয়ে এড দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করে। গুগল তার এই মনোপলি বা ডমিনেন্স এর মাধ্যমে অনেক আনফেয়ার কাজও করে থাকে। যেমন- গুগল তার সম্ভাব্য কম্পিটিটরকে প্রচুর বাধার সামনে দাড় করিয়ে দেয় এবং তাদের সফল হতে দেয়না, গুগল তার কালেক্ট করা ডেটা দিয়ে বলতে গেলে পুরো বিশ্বকে তার হাতের মুটোয় কব্জা করে রেখেছে, গুগল তার সার্চ রেজাল্টে অরগানিক রেজাল্ট দেখায় না অর্থ্যাৎ গুগল সেই রেজাল্ট গুলোকেই সামনে রাখে যেটা গুগল ব্যবহারকারীকে আগে দেখাতে চায়!

উইন্ডোজ মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের ব্যর্থতার অন্যতম কারন গুগলের এই ডমিনেন্স। এছাড়াও বর্তমানে হুয়াওয়ের মোবাইল ব্যবসার ক্ষতির পিছনে গুগলের এই ডমিনেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। সত্যি-বলতে গুগল আসলে এত বড় একটা কোম্পানি হয়ে গিয়েছে যে এটি চাইলেই অনেক হিসেব-নিকেশ উল্টে দিতে পারে! এমনকি গতবারের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুগলের অন্যতম একটা প্রভাব ছিলো বলে মনে করা হয়। আর গুগলের এই ডমিনেন্স এর পিছনে ব্যবহারকারীদের সচেতনতার অভাব নিঃসন্দেহেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা কারন !

ফেসবুক নিঃসন্দেহেই সোস্যাল মিডিয়া প্লার্টরফর্মে ডমিনেন্ট এর ভূমিকা পালন করে! - Source: imsolutions.co.za
ফেসবুক নিঃসন্দেহেই সোস্যাল মিডিয়া প্লার্টরফর্মে ডমিনেন্ট এর ভূমিকা পালন করে! - Source: imsolutions.co.za

ফেসবুকের মনোপলিঃ

ফেসবুক! বিশ্বের সবথেকে জনপ্রিয় এবং সর্ব-বৃহৎ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট। দ্য স্ট্যাটিসটা এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে ফেসবুকের সচল মাসিক ব্যবহারকারী প্রায় ২.৬ বিলিয়ন এবং মোটামুটি প্রায় ৩ বিলিয়নেরও বেশী মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে করে থাকে..এবং এই সংখ্যাটা প্রতিনিয়তই বাড়ছে! বাজারে ফেসবুকের কয়েকটা বিকল্প থাকলেও সেগুলো ফেসবুকের তুলনায় তেমন কিছুই না! আমাদের নিত্যদিনের ব্যবহার করা ম্যাসেঞ্জার,হোয়াটস-এপ,ইন্সটাগ্রাম সহ আরো অনেক জনপ্রিয় কিছু সেবা ফেসবুকের মালিকানাধীন।

গুগলের মতো ফেসবুকও তার এই বিশাল সংখ্যক গ্রাহকের প্রতি মূহুর্তের ডাটা কালেক্ট করে এবং এই ডাটা গুলো বিভিন্নকাজে ব্যবহার করে। ফেসবুকও তার মনোপলিকে অনেক সময়ই গুগলের মতো করেই অসাধু উপায়ে ব্যবহার করে এবং তার ডমিনেন্সকে ম্যানিপুলেটিভ কোনো উদ্দেশ্য কাজে লাগায়। এছাড়াও ফেসবুক থেকে লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীর ডাটা লিকের ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে।

ফেসবুকের ডাটা কেলেঙ্কারির সবথেকে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে ২০১৮ , যেখানে কেমব্রিজ এন্যালিটিকা নামক একটি প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের পায় ৫০ মিলিয়ন ইউজারের তথ্য হাতিয়ে নেয় এবং সেই তথ্য গুলোকে রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। ক্যামব্রিজ এনালিটিকা ট্রাম্পের পক্ষে ডিজিটাল প্রচারণা চালানোর সুবিধার জন্য গ্রাহকদের তথ্য ফেসবুক থেকে কৌশলে হাতিয়ে নেয়। এই ঘটনা সারা পৃথিবীতে ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং আরো একবার প্রমাণিত হয় বড় বড় ডমিনেন্ট প্রতিষ্টানগুলোর কাছে সমীকরণ উল্টে দেবার মতো কত তথ্য এবং ক্ষমতা থাকে!

মাইক্রোসফটের মনোপলিঃ

টেক-ইন্ডাস্ট্রির আরেক বড় নাম হলো মাইক্রোসফট! ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া এই প্রতিষ্টানটি বাকিদের থেকে বয়সে বেশ বড়ই এবং ১৯৯৮ সালের দিকে বিশুদ্ধ মনোপলি বলতে যা বোঝায় সেটা মাইক্রোসফটের ছিলো এবং মাইক্রোসফট তার এই ক্ষমতাকে বেশ হীন এবং আক্রমণাত্মক ভাবেই ব্যবহার করেছে! আগের মতো ঠিক ওরকম মনোপলি না থাকলেও বেশকিছু ক্ষেত্রে এখনো মাইক্রোসফটের বেশ আধিপত্য এবং কর্তৃত্ব রয়েছে। এর বেশ ভালো একটা উদাহরণ হতে পারে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম। ২০২০ সালের ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেমের বাজারের প্রায় ৭৮% শেয়ার শুধুমাত্র উইন্ডোজের একারই! মাইক্রোসফট অনেক এগ্রেসিভ বিজনেস পলিসি খাটিয়ে তাদের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমকে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌছে দিয়েছে। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম মাইক্রোসফটের ইকো-সিস্টেমের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং গুগলের মতো মাইক্রোসফটও তার নিজস্ব প্রোডাক্ট গুলোকে উইন্ডোজের মধ্যে প্রি-ইন্সটলড এবং ডিফল্ট হিসেবে রাখে। আজকে যে আমরা মাইক্রোসফট অফিস ব্যবহার করি এবং এটা যে এত বেশী জনপ্রিয় তার পিছনের অন্যতম প্রধাণ একটা কারন কিন্তু এটা!

আমরা হয়ত অনেকেই পাইরেটেড উইন্ডোজ এবং অন্যান্য সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করি এবং ভাবি যে আমরা মাইক্রোসফটকে ফাঁকি দিচ্ছি! কিন্তু এইযে পাইরেটেড উইন্ডোজ এবং অন্যান্য সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করতে দেয়া এটাও আসলে মাইক্রোসফট এর অন্যতম একটা বিজনেস স্ট্র্যাটেজি! মাইক্রোসফটের এমন এগ্রেসিভ স্ট্র্যাটেজি এবং ডমিনেন্স এর কারনে লিনাক্সের মতো এত অসাধারণ অপারেটিং সিস্টেম ইউজারদের কাছে পৌছাতে পারে না।

ইন্টেল ও কোয়ালকম এর মনোপলিঃ

এতক্ষন মূলত 'সফটওয়্যার এন্ড সার্ভিসেস' কোম্পানি নিয়ে কথা হচ্ছিলো। এবার আসা যাক হার্ডওয়্যার কোম্পানির দিকে। ইন্টেল ও কোয়ালকম এই মূহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাইক্রো-প্রসেসর বা SOC নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। তবে ইন্টেল মূলত কম্পিউটারের জন্য এবং কোয়ালকম মুলত স্মার্টফোনের জন্য সেমি-কন্ডাক্টর চিপ নির্মান করে থাকে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত কম্পিউটার বাজারে ইন্টেলই ছিলো একমাত্র ডমিনেন্ট সেমি-কন্ডাক্টর কোম্পানি। ল্যাপটপ এবং হাই-এন্ড কম্পিউটারের ক্ষেত্রে ইন্টেলের প্রসেসর ব্যতিত বাজারে যোগ্য কোনো মাইক্রো-প্রসেসর কোম্পানি ছিলো না। অর্থাৎ ইন্টেল ছিলো একেবারেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বাজেট ক্যাটাগরিতে এএমডি কিছু ক্ষেত্রে বিকল্প হলেও সেটা তুলনা করার মতো ছিলো না।

ইন্টেলের মাইক্রো-প্রসেসর গুলো মানের দিক থেকে ভালো হলেও দামের দিক থেকে বরাবরই চড়া ছিলো এবং এখনও আছে। অর্থ্যাৎ প্রোডাক্ট টু প্রাইস রেশিও তে এগুলার দাম সবসময়ই বেশী। তবে ইদানীং এএমডির পুনরুত্থান এবং রাইযেন প্রসেসরের অভুতপূর্ণ উন্নতির ফলে ইন্টেলের এই ডমিনেন্স কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর উপর কিছুদিন আগে এপল তাদের প্রোডাক্টে ইন্টেলের বদলে নিজস্ব 'এপল-সিলিকন' মাইক্রো-প্রসেসর ব্যবহারের ঘোষণা দেয়। এটিও ইন্টেলের একক আধিপত্য অনেকটাই কমিয়ে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে ইন্টেলের বেশ ভালো প্রতিদ্বন্দীর আত্মপ্রকাশ ঘটলেও স্মার্টফোন মার্কেটে এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী কোয়ালকম। লো এবং মিড বাজেট রেঞ্জে কোয়ালকমের বিকল্প থাকলেও হাই-এন্ড রেঞ্জে বর্তমানে কোয়ালকমের কোনো বিকল্প নেই! কিছুদিন আগে হুয়াওয়ের কিরিন এবং স্যামসাং এর এক্সিনোস বিকল্প থাকলেও বর্তমানে সেগুলোও তেমন সুবিধা করতে পারছে না। বিশেষ করে এক্সিনোস এর ব্যাপক পারফর্মেন্স ঘাটতি এবং হুয়াওয়ের উপর প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার ফলে হাই-এন্ড রেঞ্জে কোয়ালকমের স্নাপড্রাগনই এখন একমাত্র ভরসা। এবং কোয়ালকম তার এই মনোপলির বেশ ভালো রকমেরই সুবিধা নিচ্ছে। এবছর কোয়ালকম তার হাই-এন্ড চিপসেট স্নাপড্রাগন ৮৬৫ এ বাধ্যতামুলক ভাবে ফাইভ-জি মডেম অন্তর্ভূক্ত করে এবং চিপসেটের দাম অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। এর ফলস্বরূপ স্মার্টফোন মেনুফ্যাকচারার কোম্পানিগুলো স্মার্টফোনের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়!

তবে আশার কথা হচ্ছে স্যামসাং সম্প্রতি এমডির সাথে তার এক্সিনোস চিপসেটের বিষয়ে একটা পার্টনারশিপ করেছে এবং আগামী বছর থেকে স্নাপড্রাগনের সমতূল্য কিংবা তার চেয়ে বেশী পারফর্মেন্স প্রদান করতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আশা করা হচ্ছে যেনো, হুয়াওয়ে তার নিষেধাজ্ঞা পার করে আবার ব্যবসায় ফিরে আসতে পারে।

 

আমেরিকান মনোপলিঃ

প্রতিষ্টানভিত্তিক মনোপলির বদলে এবার একটু রাষ্ট্রের দিকে নজর দেয়া যাক। বর্তমান টেক-ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষ করে এডভান্সড টেকনোলজি এবং জনপ্রিয় সেবাসমূহের দিকে তাকালে আমেরিকার একক আধিপত্যের নমুনা প্রতিটা ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়। বড় বড় ডমিনেন্ট প্রতিষ্টানগুলোর প্রায় সবগুলিই আমেরিকান। চায়নাতে মেনুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলো থাকলেও মাদার কোম্পানি এবং টেকনলজিক্যালি এডভান্সড সবগুলো প্রতিষ্টানই আমেরিকান মালিকানাধীন। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য যেসব প্রতিষ্টান আমেরিকান মালিকানাধীন নয়, সেগুলোতেও আমেরিকার ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এর ফলে গোটা টেক-ইন্ডাস্ট্রিতেই আমেরিকার একছত্র মনোপলি দারুনভাবেই স্পষ্ট! এবং দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমেরিকা তার এই মনোপলির ন্যাক্কারজনক এবং জঘন্য প্রভাব বরাবরই তার প্রতিদ্বন্দীর উপর খাটায়!

খুব সম্প্রতি আমেরিকা তার এই ক্ষমতার বিশ্রী প্রয়োগ ঘটাচ্ছে হুয়াওয়ের উপর! যারা হুয়াওয়ের উপর আমেরিকার এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে খবর রাখেন তারা নিশ্চয়ই জানেন এই বিষয়টা গোটা টেক-ইন্ডাস্ট্রি এবং কনজুমারদের জন্য কতটা ভয়াবহ। আমেরিকা হুয়াওয়ে কে সমস্তরকম আমেরিকান কোম্পানির সাথে বিজনেস করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এমনকি হুয়াওয়ে আমেরিকান মালিকানাধীন না কিন্তু আমেরিকান টেকনোলজি ব্যবহার করে এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেও কোনো ব্যবসা করতে পারবে না! এর ফলে হুয়াওয়ের গুগলের কোনো সার্ভিস ব্যবহার করতে পারছে না এবং হুয়াওয়ের কিরিন চিপ সাপ্লাইয়ার তাইওয়ান ভিত্তিক 'টিএসএমসি' এর সাথেও ব্যবসা করতে পারছে না। ফলে হুয়াওয়ের মোবাইল বিজনেস এখন ভয়াবহ প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর উপর আমেরিকা হুয়াওয়ের ফাইভ-জি সেবাও নিষিদ্ধ করেছে এবং তার মিত্র দেশগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করছে যেনো তারাও হুয়াওয়েকে বর্জন করে!

হুয়াওয়ের উপর আমেরিকার এই ঘটনা গোটা টেক-ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটা কালো অধ্যায় এবং এর ফলে গ্লোবাল সাপ্লাই-চেইন ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে কনজুমার মার্কেটের উপর। হুয়াওয়ে টেক-ইন্ডাস্ট্রির একটা অন্যতম জায়ান্ট প্রতিষ্টান। হুয়াওয়ে নিত্যনতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বেশ অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে আসছিলো এবং আমেরিকার জন্য বেশ বড়সড় একটা হুমকি হয়ে দাড়িয়েছিলো। আর মূলত একারনেই আমেরিকা তার মনোপলি ক্ষমতার জঘন্য প্রয়োগ হুয়াওয়ের উপর ঘটিয়েছে যার মাশুল দিতে হচ্ছে গোটা টেক-ইন্ডাস্ট্রিকে।

গুটিকয়েকটা বড় প্রতিষ্টানের কাছে বর্তমানে জিম্মি আছে গোটা টেক-ইন্ডাস্ট্রি - Source: The Verge
গুটিকয়েকটা বড় প্রতিষ্টানের কাছে বর্তমানে জিম্মি আছে গোটা টেক-ইন্ডাস্ট্রি - Source: The Verge

কনজুমারদের উপর মনোপলির প্রভাব এবং করণীয়ঃ

কনজুমারদের উপর মনোপলির প্রভাব উপরের আলোচনা থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাবার কথা। আসলে যখনই কোথাও মনোপলি বা ডমিনেন্ট এর সৃষ্টি হয় তখনই সেটা কনজুমারদের জন্য সবসময়ই খারাপ কিছু ফলাফল নিয়ে আসে। মনোপলির ফলে কোনো একটা প্রোডাক্টের দাম বেড়ে যায়,বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও ক্ষমতার প্রয়োগ দেখা যায়,নতুন কোনো প্রতিষ্টান বাজারে টিকতে পারেনা, উদ্ভাবনী এবং বৈচিত্রময় প্রোডাক্টের সংখ্যা কমে আসে এবং আরো অনেক অনেক নেতিবাচক বিষয় ঘটে থাকে। বর্তমান অনেক জনপ্রিয় সফটওয়্যার ও সেবাদাতা কোম্পানিগুলো তাদের সেবার জন্য প্রত্যক্ষভাবে টাকা না নিলেও ব্যবহারকারীদের প্রত্যেকটি তথ্য কালেক্ট করে এবং সেই তথ্যগুলোর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখানো সহ আরো বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করে, অর্থ্যাৎ এক্ষেত্রে একজন ব্যবহারকারী নিজেই সেই কোম্পানির একটা প্রোডাক্ট হয়ে যায়, যাকে এবং যার তথ্য ব্যবহার করে ঐ কোম্পানিগুলো প্রচুর অর্থ এবং ক্ষমতা অর্জন করে।

তবে আধুনিক মনোপলি বা ডমিনেকন্স এর জন্য শুধুমাত্র কোম্পানি বা প্রতিষ্টানগুলোকে এককভাবে দায়ী করা যায়না, বরং একজন ব্যবহারকারী বা কনজুমারও এক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে বেশীরভাগ ব্যবহারকারী জানেই না মনোপলি বা ডমিনেন্স কিভাবে তৈরি হয় এবং ব্যবহারকারী কিভাবে এ বিষয়ে একটা কোম্পানিকে সাহায্য করে,কিংবা অনেকে জানলেও সেটাকে গুরুত্ব দেয় না। অর্থাৎ ব্যবহারকারীর জ্ঞান ও সচেতনতার অভাব এক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।

এছাড়াও একজন ব্যবহারকারী যখন কোনো একটা প্রতিষ্ঠানের একটা বা দুটো প্রোডাক্ট কিংবা সেবা ব্যবহার শুরু করে দেয় এবং তাতে অভ্যস্থ হয়ে যায়,তখন তিনি ঐ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সেবাসমূহও ব্যবহার করতে শুরু করেন। এভাবে একজন ব্যবহারকারী একটি প্রতিষ্ঠানের ইকো-সিস্টেমে আটকে যায় এবং সেখান থেকে পরবর্তীতে আর বের হতে পারেনা বা বের হতে চায় না। এমনকি কোনো কারনে সেখান থেকে বের হয়ে আসলেও অন্য বিকল্প কোনো সেবা ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ অনুভব করে না। এখন এই বিষয়টি যখন একজন ব্যবহারকারীর বদলে কোটি কোটি ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে ঘটে,তখনই কোনো একটা কোম্পানি আস্তে আস্তে ডমিনেন্ট পর্যায়ে যেতে শুরু করে।

তাই, প্রতিটি ব্যবহারকারীরই উচিত কিছু বিষয়ে সচেতন হওয়া। যেমনঃ

• অজান্তেই কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের সবধরনের সেবা ও প্রোডাক্ট ব্যবহার না করা। কোনো একটা প্রতিষ্ঠানের ইকো-সিস্টেমে আটকে না যাওয়া, বরং সচেতন ভাবে কোনো ইকো-সিস্টেমের অংশ হওয়া এবং প্রয়োজন অনু্যায়ী সেখান থেকে বের হবার জন্য মানসিকতা ও জ্ঞান থাকা।

• একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোনো সেবার জন্য অন্য কোনো বিকল্প প্রতিষ্ঠানের কি কি সেবা আছে তা জেনে রাখা এবং বিকল্প সেবা বা প্রোডাক্ট ব্যবহার করার মানসিকতা তৈরি করা।

• যেকোনো ফ্রি সার্ভিস জেনে-বুঝে ব্যবহার করা। মনে রাখতে হবে এই পৃথিবীর কোনো কিছুই ফ্রি নয়। কেউই কোনো বিনিময় ছাড়া আপনাকে কোনো সেবা দিবেনা। তাই, ফ্রি দেখা মাত্রই চোখ বন্ধ করে সবকিছু ব্যবহার করা যাবেনা।

• নিজের ব্যক্তিগত তথ্য ও গোপনীয়তার বিষয়ে সচেতন হওয়া। "আমি তো সাধারণ মানুষ,আম জনতা,আমার ডাটা নিয়ে আর কিই বা হবে"- এমন ধারণা থেকে বের হয়ে আসা। মনে রাখবেন আপনার ব্যক্তিগত তথ্য আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও, এগুলো আসলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আপনার মতো কয়েক হাজার আমজনতার তথ্য দিয়ে অনেক কিছু করে ফেলা সম্ভব। তাই নিজ নিজ স্থান থেকে, নিজের তথ্যের বিষয়ে সচেতন থাকবেন। গুগল কিংবা ফেসবুকের মতো ফ্রি সার্ভিস প্রদান করা প্রতিষ্ঠান গুলো আপনার কাছ থেকে কি ধরণের এবং কত বেশী তথ্য সংগ্রহ করে, সেটা জানলে আপনি নিজেও ভয় পাবেন। এই প্রতিষ্ঠান গুলো আপনার মা কিংবা স্বয়ং আপনার থেকেও আপনার সম্পর্কে অনেক বেশী কিছু জানে!

• ব্যক্তিগত জায়গা থেকে মনোপলি কিংবা ডমিনেন্সকে সমর্থন না করা এবং কোনো প্রতিষ্ঠান তার ক্ষমতার অপব্যবহার করলে অন্য বিকল্প প্রতিষ্ঠান গুলোকে নিজ জায়গা থেকে যতটা পারা যায় সমর্থন করা।

• সবসময়ই কম্পিটিটিভ মার্কেট অর্থ্যাৎ প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারের প্রতি মন থেকে সমর্থন করা এবং একজন কমজিউমার বা ভোক্তা হিসেবে আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণ করার চেষ্টা করা। উদাহরণ স্বরূপঃ আপনি হয়ত গুগলের সমস্ত সেবা ব্যবহার করেন,কিন্তু আজকে থেকে গুগল ক্রোমের বদলে মজিলা ফায়ারফক্স, জিমেইল এর বদলে জোহো মেইল (Zoho Mail) কিংবা মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ এর বদলে লিনাক্স ব্যবহার করা শুরু করলেন! এভাবে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে মনোপলির অংশ হওয়া থেকে সরে আসা।

আপনি একটা ক্রেতা বা ভোক্তা হিসেবে আপনার সুযোগ বা স্বাধীনতা খর্ব হয়, এমন কিছু করার থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন। নিজেকে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের বেড়াজালে আটকে ফেলবেন না,কোনো প্রোডাক্ট ব্যবহার করার বদলে নিজেই প্রোডাক্ট হয়ে যাবেন না! যদি কনজুমার অর্থাৎ ভোক্তা সচেতন থাকে তাহলে মনোপলি কিংবা ডমিনেন্স এর মতো বিষয়গুলো অনেক কমে যেতে বাধ্য। 

আশা করি, আপনি এই আর্টিকেল থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় জেনেছেন ও অনুধাবন করেছেন। আপনারা ব্যক্তিগত ক্ষেত্র থেকে এসব বিষয়ে সচেতন থাকবেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ বাজার সৃষ্টিতে যথাযথ সমর্থন দিয়ে যাবেন। একটা বিষয় মনে রাখবেন, যেখানেই মনোপলি বা ডমিনেন্ট থাকবে সেখানেই কনজুমারদের কোনো না কোনোভাবে ক্ষতি থাকবে,আর এই ক্ষতি হবে আপনার নিজেরও!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা