ছোটবেলা থেকেই 'বিদেশ যাইমু গা' বলে এরা পড়াশোনা করে না। ছোটবেলা থেকে এই একটা জিনিস এদের ভবিষ্যত নষ্ট করে দেয়। দরকার হলে ব্যাটা সিএনজি চালা দেশে। তা করতে আবার লজ্জ্বা করবে, কিন্তু এখন যে বসনিয়ায় গিয়ে কাপড়চোপড় খুলে রেখে দেয় তাতে লজ্জ্বা করে না?
অনেকেই হয়তো দেখেছেন সম্প্রতি ডয়েসে ভেলে (DW) এর বাংলা বিভাগের দুইজন বাঙ্গালি সাংবাদিক গিয়েছিলেন বসনিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। যেখানে অনেক অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশী শীতের মাঝে প্রায় খোলা আকাশের নিচে মানবেতর ভাবে দিন কাটাচ্ছেন। তারা সবাই বাই রোডে, তথা টারজান ভিসায় ইউরোপে যেতে চাচ্ছেন। বসনিয়ার সেই এলাকায় প্রায় ছয়শো বাংলাদেশী আছেন। এবং তার প্রায় ৯৯% ই সিলেটী।
তারা বেশ কষ্টে আছেন। জঙ্গলের মাঝে দিন কাটান, ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে গেম মারতে তথা লুকিয়ে অবৈধভাবে ঢুকতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা খান, ধরা পরে প্রচুর মার খেয়ে আবার বসনিয়ায় ফেরত আসেন, ফেরত পাঠানোর সময় আবার তাদের জামাকাপড়ও খুলে রেখে দেয়। তারা দেশ থেকে টাকা নেন, নিয়ে কোনভাবে লটকে আছেন সেই এলাকায়। প্রায় সবারই ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে ওই পর্যন্ত যেতে।
এরা আমাদের সিলেট অঞ্চলের লোক, এত খারাপ অবস্থা দেখেও আমার আর মোটেও মায়া লাগে না গত কয়েক বছর ধরে, মনে মনে ভাবি দে আরও কয়েকটা বাড়ি দে! যায় কেন ওইভাবে!
আমরা ছোটবেলা থেকেই বড় হয়েছি আশেপাশে এমন লোকজন দেখে। এরা ছোটবেলা পড়ালেখা করে না- 'বিদেশ যাইমু গা' বলে। ছোটবেলা থেকে এই একটা জিনিস এদের ভবিষ্যত নষ্ট করে দেয়। একসময় এদের অনেকেই বাপ মা ভাইকে অশান্তি দেয়, বাড়িতে ভাংচুর করে বিদেশ যাওয়ার টাকা চেয়ে। বাধ্য হয়ে তাদের পরিবার টাকা দেয়। এদের কি আপনাদের দরিদ্র মনে হয়? দরিদ্র হলে পনেরো বিশ লাখ টাকা পেলো কোথায়? এদের অত্যাচারেই অনেক ফ্যামিলিকে জায়গা জমি বেচে টাকা দিতে হয়।
অসংখ্যবার লিখেছি দশ পনেরো লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা করেও দেশে লোকে অনেক টাকা কামাচ্ছে। দরকার হলে ব্যাটা সিএনজি চালা দেশে। তা করতে আবার লজ্জ্বা করবে, কিন্তু এখন যে বসনিয়ায় গিয়ে কাপড়চোপড় খুলে রেখে দেয় তাতে লজ্জ্বা করে না। তাদের কথা বলতে দিলেই শুধু বলে দেশে নাকি নিরাপত্তা নাই, আরে ব্যাটা অন্য এলাকার লোকজন দেশে থাকতেছে না? সমস্যা কি শুধু তোমাদেরই হয়? ব্যাপারটা সাইকোলজিক্যাল, সাংবাদিকরা তাদের জিজ্ঞেস করেছেন সুযোগ পেলে তারা দেশে ফিরে যাবে কিনা, তাদের এক কথা মরলে সেখানেই মরবে কিন্তু দেশে যাবে না! তাদের কয়েকজন আবার বলেছেও এই 'ইউরোপ' শব্দটাই আসলে তাদের পাগল করে দিয়েছে। আমি একজন বৃহত্তর সিলেটের অধিবাসী হিসেবে জানি এটাই সত্য, এই একটা কারনে অসংখ্য সিলেটের পোলাপানের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যায়। অনেক লোকই এই পথে গিয়ে মারা যায়।
এই এক স্বপ্ন দেখে বলে তারা পড়াশোনা করে না। অথচ যদি ভাল করে পড়াশোনা করতো, তাহলে এই পনেরো লাখ টাকার কম খরচে স্টুডেন্ট ভিসায় মাস্টার্স করতে যেতে পারতো প্লেনে চড়ে। একবার বিদেশ গেলে কিন্তু কোন না কোনভাবে সেটেল হওয়া যায়ই। কিন্তু এই মাইন্ডসেটটাই তাদের নাই। ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের লোক শরীফুল হাসান বলেছেন এজন্য সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আমি তার সাথে একমত, এতগুলো পোলাপানের ভবিষ্যৎ যেন এভাবে নষ্ট না হয় এজন্য আমাদের কথা বলতে হবে। তাদের নিরুৎসাহিত করতে হবে সামাজিক ভাবে।
সাংবাদিকদের একটা কাজে খুব বিরক্ত লেগেছে। তারা বার বার বলছিলেন এরা নাকি শরণার্থী। কিসের শরণার্থী এরা আমি বুঝলাম না। দেশে কি যুদ্ধ চলে? তাহলে শুধু সিলেটের লোকই শরণার্থী হচ্ছে কেন? এরা অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশী কিছু লোভী লোক। এজন্যেই কোন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এদের প্রতি ন্যূনতম সহানুভূতিও রাখে না, এরা এত সংখ্যায় বিদেশে অবৈধভাবে ছড়িয়ে আছে এতে বাংলাদেশেরই বদনাম হয়।
এদের সামাজিকভাবে প্রতিহত করুন। বৃহত্তর সিলেটের এই টারজান ভিসার কালচার বদলানো দরকার। এত এত তাজা প্রাণ এভাবে মারধর খাবে, পথে ঘাটে জঙ্গলে সমুদ্রে প্রাণ হারাবে এটা মেনে নেয়া যায় না!
ফিচার্ড ইমেজ- প্রথম আলো