ভিডিওর কথাগুলোর প্রমাণ বাস্তবে পাওয়া যাবে তো?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

ইতিমধ্যেই কিন্ত নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করার অভিযোগ উঠেছে প্রায় সব মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধেই, অভিযোগ এসেছে তাবিথের নামেও। যিনি মেয়র হবার আগেই নির্বাচনী শৃঙ্খলা ভাঙেন, তার ওপর বাজী ধরে স্বপ্ন দেখাটা কষ্টকর বটে!
শীতের আমেজ এখনও বিদ্যমান, তবে রাজনীতির মাঠ গরম হওয়া শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। সামনে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, ভোটারেরা নির্বাচিত করবেন ভবিষ্যত নগরপিতাদের। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র এবং ওয়ার্ড কমিশনার পদপ্রার্থীদের প্রচারণা চলছে জোরেশোরে। ডিজিটাল এই যুগে তো আর বাড়ি বাড়ি যাওয়া আর মাইকিং-পোস্টার লাগানোতেই প্রচারণা সীমাবদ্ধ রাখা যায় না, সোশ্যাল মিডিয়াও প্রচারণার একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। পাঁচ বছর আগে যেটা সাবেক মেয়র আনিসুল হক শুরু করেছিলেন, সেটাকেই এখন অনুসরণ করছেন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীরা।
মেয়র পদে ঢাকা উত্তর থেকে বিএনপির নমিনেশন পেয়েছেন তাবিথ আউয়াল। তার একটা প্রমোশনাল ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে ফেসবুকে। ভিডিওটা দেখলাম, এবং স্বীকার করতে বাধ্য হলাম যে, চমৎকার একটা কাজ হয়েছে এটা। ড্রোন শট, লং শট, ক্যামেরা ওয়ার্ক, স্ক্রিপ্ট মিলিয়ে পুরো ব্যাপারটাই দুর্দান্ত, প্রশংসা না করার কোন উপায় নেই। তাবিথের কণ্ঠে বেশ জড়তা থাকলেও, মোটের ওপর যে মেসেজটা তিনি দিতে চেয়েছেন ভিডিওর মাধ্যমে, স্মার্ট প্রেজেন্টেশনের কারণে সেটা চমৎকারভাবেই উঠে এসেছে।
২০২০ সালে এসে মাইকিংয়ের মাধ্যমে শব্দদূষণ করে কিংবা ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে শহরকে নোংরা না করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যবহার করাটা প্রত্যেক প্রার্থীর লক্ষ্য হওয়া উচিত। ভিডিওটা দেখে মুগ্ধ হলেও, আশার পালে হাওয়া লাগতে দিচ্ছে না আমাদের নিকট অতীত।

এর আগে বিএনপিরই ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত জাতীয় নির্বাচনের আগে একটা ভিডিওবার্তায় জনগনকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে 'রুখে দাঁড়ানোর' আহবান জানিয়েছিলেন, কিন্ত বিএনপির মহাসচিব সেখানে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবী করেই বিপদটা ডেকে এনেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধার প্রমাণ দেয়ার জন্যে তাকে চ্যালেঞ্জ জানানো হলেও তিনি সাড়া দেননি, চলে গেছেন আত্মগোপনে।
বিকল্প ধারার মাহী বি চৌধুরী একবার প্ল্যান-বি নামের একটা ভিডিওবার্তা এনেছিলেন, সেখানে গমগমে গলায় তিনি বর্ণনা করেছিলেন, কীভাবে দেশের শীর্ষ দুই দল রাজনীতির ময়দানটাকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। সেই বলয়টা ভাঙতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছিলেন মাহী। কিন্ত ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি এবং তার দল ঠিকই আওয়ামী লীগের ছাতার নিচে গিয়ে ভিড়েছে, মাহী নিজে হয়েছেন সাংসদ, স্বতন্ত্র বা আলাদাভাবে নির্বাচন করলে যেটা তার পক্ষে হওয়া সম্ভব ছিল না।
তাছাড়া তাবিথ আউয়াল যে দলের হয়ে মনোনয়ন পেয়েছেন, সেই বিএনপি বিলীন হয়ে আছে যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে। হাজারো সমালোচনা স্বত্বেও, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরেও তারা জামায়াতের সঙ্গ ছাড়েনি, উল্টো যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছে, নিজেরা ক্ষমতায় গেলে এই বিচার প্রক্রিয়া নতুন করে সাজানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। হেফাজতের মতো ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে তারা সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছে, যদিও সেই হেফাজতকে এখন আওয়ামী লীগই বুকে জড়িয়ে নিয়েছে। ভিডিওতে যতো সুন্দর কথাবার্তাই থাকুক, মেসেজটা যতো ভালোই হোক, দল হিসেবে বিএনপি না শোধরালে তাবিথের এই ভিডিও প্রমোশন হয়তো ফেসবুকে একটা হাইপ তুলবে, ভোটের অংকেও পার্থক্য তৈরি করতে পারে, কিন্ত সেসব দেশের উপকারে আসবে না।

ভিডিওতে তাবিথ আউয়াল সুন্দর, সমৃদ্ধ এক ঢাকা শহরের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সেই স্বপ্নটা আসলেই তার পূরণ করার ইচ্ছে আছে কীনা, সেটা সময়ই বলে দেবে। একজন কিন্ত পূরণ করার চেষ্টা করেছিলেন, তিনি আনিসুল হক। বসবাসের অযোগ্য এই শহরটাকে ঠিক করার প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন তিনি, কাজ করতেন জীবন বাজী রেখে। তাবিথ চাইলে তার সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছেও শিখতে পারেন। সেজন্যে তাকে মেয়র নির্বাচিত হতে হবে না, কাজ করতে চাইলে যে কোন অবস্থানে দাঁড়িয়েই করা যায়। ইতিমধ্যেই কিন্ত নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করার অভিযোগ উঠেছে প্রায় সব মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধেই, অভিযোগ এসেছে তাবিথের নামেও। যিনি মেয়র হবার আগেই নির্বাচনী শৃঙ্খলা ভাঙেন, তার ওপর বাজী ধরে স্বপ্ন দেখাটা কষ্টকর বটে!
বিএনপি নির্বাচনে এসেছে, তাবিথেরা একটা উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি করেছেন, এজন্যে তারা একটা ধন্যবাদ পেতে পারেন। গত এক দশক ধরেই দেশে কোন কার্যকর বিরোধী দল নেই, এর দায় বিএনপি কোনভাবেই এড়াতে পারবে না। জামায়াতের সঙ্গ আর লন্ডন থেকে নাজিল হওয়া ওহি- এই দুইয়ে মিলিয়ে দলটা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে অনেক আগেই। আওয়ামী লীগ যে এমন স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে, সেটার পেছনে বিএনপির অবদান কম নয়। শক্তিশালী কোন বিরোধী দল না থাকলে যে কোন দেশের গণতন্ত্রই হুমকির মুখে পড়বে, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেসবের দায় বিএনপির পক্ষে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
আশা করব, তাবিথ এবং তার দল শেষ পর্যন্ত লড়াই করবেন, মাঝপথে কারচুপির অভিযোগ তুলে মাঠ থেকে সরে যাবেন না। ভোটে যদি কোন দুই নম্বুরী হয়েই থাকে, সেটার প্রমাণ তারা জনগণের সামনে দেবেন। ভিডিও প্রমোশনে তারা একটা সমৃদ্ধ ঢাকার স্বপ্ন দেখাতে চেয়েছেন, সেটা যাতে শুধু স্বপ্নই না থাকে, আশা রাখি সেই চেষ্টাটাও তারা করবেন...