ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতাম ছাত্রনেতারা প্রথম বর্ষে আসা হলের বাচ্চা ছেলেদের বলতো- ক্যাম্পাসে যা ইচ্ছে করো, আমরা আছি। অথচ তাকে যদি কেউ বলতো, আইনের বাইরে যাবে না। বেআইনিভাবে কিছু করলে আমরাই তোমাকে ধরিয়ে দেব, তাহলেই কিন্তু ছেলেটা সাবধান হয়ে যেত।

একবার ভাবুন কী নির্মমভাবে রায়হান নামে একজন তরুণকে নির্যাতন করে হত্যা করলেন পুলিশের এসআই আকবর! সহকর্মীরা কোথায় তার ভুল শুধরে দেবেন, তাকে বিচারের আওতায় আনবেন, তা না; তাকে পরামর্শ দিয়েছেন পালিয়ে যেতে! কী করে সম্ভব?

সব মানুষ যেহেতু ভালো হয় না, কাজেই সরকারি বা বেসরকারি যেকোন চাকুরিতে থাকা একজন মানুষ দুর্নীতি বা অপরাধ করতে পারেন সেটা না চাইলেও মানতে হয়। কিন্তু ভীষণ অবাক লাগে যখন দেখি সেই দুর্নীতিপরায়ণ লোকটাকে তার সহকর্মীরা বাঁচাতে চায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতাম ছাত্রনেতারা প্রথম বর্ষে আসা হলের বাচ্চা ছেলেদের বলতো, ক্যাম্পাসে যা ইচ্ছে করো, আমরা আছি। এর জের ধরে প্রথম বর্ষের ছেলেরা যা তা করতো। অথচ তাকে যদি কেউ বলতো, আইনের বাইরে যাবে না। বেআইনিভাবে কিছু করলে আমরাই তোমাকে ধরিয়ে দেব, তাহলেই কিন্তু ছেলেটা সাবধান হয়ে যেত। সরকারি চাকুরি তো আর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল নয়। নিশ্চয়ই সিনিয়রদের প্রথমদিনেই বলা উচিত, আইনের বাইরে গেলে তোমাকে কেউ বাঁচাবে না। এরপর বাস্তবেই কেউ অপরাধ করলে বিভাগেরই উচিত সবার আগে ব্যবস্থা নেয়া।

এসআই আকবর আজ বলছিলেন, ‘আমাকে একজন সিনিয়র অফিসার পালাতে বলেছিলেন, তাই আমি পালিয়েছি'। কথাগুলো শুনে ভীষণ লজ্জা লাগছিলো। আপনারা ডাক্তার হন, পুলিশ হন, সাংবাদিক হন, বিচারক হন, সরকারি চাকুরিজীবী হন কিংবা বেসরকারি চাকুরিজীবী। আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ, প্লিজ অন্যায়কারীকে সমর্থন করবেন না।

সাসপেন্ডেড এসআই আকবর

রায়হানের ঘটনাই তো প্রথম নয়। এর আগেও এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে। আমি সবাইকে রায়হানের মায়ের আকুতি আরেকবার শোনাই। একই আকুতি জানিয়েছিলেন মেজর সিনহার মা।

রায়হানের মা ছালেহা বেগম বলছিলেন, ‘আমার রায়হানই যেন পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর শেষ নাম হয়। আমার রায়হানের মধ্য দিয়ে যেন চিরতরে বন্ধ হয় বাংলাদেশে পুলিশি হেফাজতে সব নির্যাতন-হত্যা। কোনো মাকে যেন আমার মতো ছেলে হত্যার বিচার চাইতে রাস্তায় নামতে না হয়'।

আমি জানি বাংলাদেশ পুলিশে মানবিক অনেক কর্মকর্তা আছেন। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি, এই দেশের প্রতি আমি আমৃত্যু আস্থা রাখতে চাই। আপনারা একবার নিজের সন্তানের চিন্তা করুন। নিজের মায়ের চিন্তা করুন। ছেলেহারা রায়হানের মায়ের এই দাবিটা চলুন আমরা পূরণ করি। আর কোন মাকে যেন ছেলে হত্যার বিচার চাইতে রাস্তায় নামতে না হয়। আর কাউকে যেন এভাবে কাঁদতে না হয়। কোনো মাকে যেন আর মতো ছেলে হত্যার বিচার চাইতে রাস্তায় নামতে না হয়। ভালো থাকুক সবাই। ভালো থাকুক বাংলাদেশ।

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা