অন্ধকার কেটে ছুটে চলা ট্রেন, হাওড়ের বুকে সীমান্তবাতির হাতছানি আর দিনের বেলায় নীল আকাশের সাথে জলের মিতালি- ট্রেন, ট্রলার, বাইক মিলে আপনার জীবনে সেরা স্মৃতি হয়ে থাকবে এই জার্নিটা!

অনেকদিন ধরেই ইচ্ছে পুষে রেখেছিলাম, সুনামগঞ্জে যাব। টাঙ্গুয়ার হাওর, বারেকটিলা, জাদুকাটা নদীর জাদু দেখে আসবো। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর তালিকা করা হলে সুনামগঞ্জের নাম বেশ ওপরেই থাকবে। যারাই এপর্যন্ত সুনামগঞ্জ থেকে ঘুরে এসেছে, সবাই জায়গাটার অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছে। শুনে শুনে লোভ বেড়ে গেছে, যেতেই হবে একবার। কিন্তু, সময় সুযোগ সব কিছু মিলছে না। এইদিকে হাওরের জল কমতে শুরু করেছে।

টাঙ্গুয়ার হাওরের রুপ বছরের দুই সময় দুইরকম ভাবে ধরা দেয়। ভরা বর্ষায় গিয়ে আপনি দেখতে পাবেন চারধারে যতদূরে চোখ যায়, স্বচ্ছ জলরাশি। শীতকালে গিয়ে দেখবেন আবার অন্য রুপ। অতিথি পাখির আনাগোনা থাকে তখন পুরো হাওর জুড়ে। বছরের বেশির ভাগ সময় ডুবে থাকা হাওরে তখন কোথাও কোথাও ফসল বোনা হয়। হাওর অঞ্চলের জমিগুলো সাধারণত এক ফসলি, বছরে একবারই ফসল ফলে সেখানে, বাকিটা সময় জলে ভেসে থাকে বিস্তৃত হাওর অঞ্চল। 

যাহোক, এই ট্যুরটা খুব নাটকীয়তার মধ্যে শুরু হয়েছিল। শুক্রবার রাতে যাওয়ার প্ল্যান হয়েছিল। বুধবার সবার টাকা দেবার কথা। ট্রেনের টিকেট কাটতে হবে। আমরা বাসের জার্নিতে খুব বেশি স্বস্তি অনুভব করি না। তাই যেতে হবে ট্রেনে। কিন্তু, ট্রেনে করে যদি সিলেট যাই, তাহলে সেখান থেকেও সুনামগঞ্জ তাহিরপুর পর্যন্ত যেতে বাস ধরতে হয়। তাই, একটু অন্যভাবে ট্যুর প্ল্যান সাজালাম। ঠিক করলাম আমরা যাব নেত্রকোনা মোহনগঞ্জ পর্যন্ত ট্রেনে। তারপর বাকিটা ঠিক করা যাবে। 

কিন্তু, কেউ টিকেটের টাকা দিলো না। একেকজন একেকটা সমস্যায় পড়ে গেল। আমি খুব হতাশ হলাম। দিলাম ট্যুর ক্যান্সেল করে। কেউ যেতে চায় না, তাহলে কাউকে জোর করার কি দরকার। যেদিন যাওয়ার কথা তার আগের দিন আবার সবার ফোন। অনেক নাটকীয়তার পর ট্রেনের টিকেট কাটার জন্য পাঠালাম সাইমনকে। টিকেট পাওয়া যাবে কি না এই নিয়ে একটা আশঙ্কা তো ছিলই। ভাগ্য ভাল, রাতের হাওর এক্সপ্রেসের টিকেট পাওয়া গেল। আটজনের জন্য আটটা টিকেট। 

পরদিন অফিস থেকে আমি, জনী ভাই চলে গেলাম কমলাপুরে। রাত সাড়ে দশটা। ট্রেন ছাড়বে এগারোটা পঞ্চাশে। শোভন চলে এসেছে। বাকিদের খবর নেই। একজন তো ফোনই ধরে না। তার বড় ভাইকে ফোন দিলাম। বড় ভাই জানালেন, সে অসুস্থ। পরে তাকে মেসেজ পাঠালাম। এগারোটার পর সে কলব্যাক করলো। কিভাবে যেন সময় কেটে যাচ্ছিল। সাড়ে এগারোটার মধ্যে আমরা সবাই কমলাপুরে, শুধু সেই একজন ছাড়া। ট্রেন ছাড়ার মাত্র দুই মিনিট আগে সে অসুস্থ শরীর নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে ট্রেন ধরতে পেরেছিল। ট্যুরের মজাটা আসলে আশার মধ্যে, যাত্রা শুরুর প্রস্তুতির মধ্যে। আশায় থাকা, ট্যুর নিয়ে প্ল্যান করা, গন্তব্যের পথে যাত্রা এগুলোর মধ্যে যে এক্সাইটমেন্টটা থাকে সেটাও ট্যুরের অনেক বড় পার্ট। 

রাতের ঢাকাকে পেছনে ফেলে হাওর এক্সপ্রেস এগিয়ে যায়। ট্রেনে দুই-একজন আছে যারা টিকেট পায়নি। দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা আটজন সিট নিয়েও সবাই সিটে বসে থাকছি না। একটু পর কেউ না কেউ উঠে ট্রেনের দরজার ধারে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভাবলাম সিট তো খালিই থাকছে। তাই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক বয়স্ক লোককে বললাম, কাকা বসেন। সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। যেনো এমন কথা সে আশাই করেনি। আবারো বললাম, সমস্যা নাই, বসেন। উনি ময়মনসিংহ পর্যন্ত সেই সিটে ঘুমালেন। ময়মনসিংহের পর সিট খালি হওয়ায় তিনি অন্য সিটে চলে যান। মানুষকে সামান্য একটু সম্মান দিলে মানুষ সেটা কোনো না কোনো ভাবে ফিরিয়ে দেয়। সেই ভদ্রলোক, পরে খাবারের পানি দিয়েছিলেন আমাদের। তিনি এবং তার সাথে বসা আরেকজন জিজ্ঞেস করলেন আমাদের কাহিনী কি। সাধারণত এই রুটে আমাদের বয়সী তরুণরা দলবেঁধে খুব কম যায়। আমরা আমাদের উদ্দেশ্য বললাম। তারা তখন আমাদের পরামর্শ দিলেন। নেত্রকোনা থেকে যত উপায়ে সুনামগঞ্জ যাওয়া যায়, ট্রলার বোট পাওয়া যায় সবরকম রাস্তা সম্পর্কে ধারণা দিলেন। এমনকি একজন বোটের মাঝির নাম্বারও দিয়ে দিলেন। 

আমরা মোহনগঞ্জে নামি সকাল সাড়ে পাঁচটায়। নেত্রকোনা থেকে আমাদের সাথে যোগ দিবে অন্তর নামে আরেকজন। তার জন্য আমরা অপেক্ষায়। স্টেশনে ট্রেন থামার পর যে ভীড় ছিল খানিক পরেই সেটা কেটে গেল। একটা চায়ের দোকানে বসলাম কয়েকজন। আকাশ আরেকটু ফর্সা হলে স্টেশনের ভেতরেই একটা হোটেলে ঢুকে সকালের নাশতা খেয়ে নিলাম।

আরো কিছুক্ষণ বাদে অন্তর একটা বাইক ভাড়া করে চলে আসলো স্টেশনে। আমরা এখন নয়জন। যাব মধ্যনগর। কারণ, মধ্যনগর থেকে ট্রলার ভাড়া নেয়া যায়। সেখানে ট্রলার ঘাট আছে। যেহেতু ঠিক করেছি, বাইকেই যাব তাই অন্তর যে বাইকে করে এসেছে সেই রাইডারকেই বললাম, মধ্যনগরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে। তিনি দশমিনিট বাদে আরো কয়েকজনকে নিয়ে আসলেন। আমরা প্রতি বাইক ২০০ করে ভাড়া করলাম। এক বাইকে দুইজন বসা যায়। 

মোহনগঞ্জ থেকে মধ্যনগর যাওয়ার রাস্তাটা বেশ সুন্দর। রাস্তা বেশ পরিষ্কার। সকাল হচ্ছে। স্কুলের পথে বেরিয়ে যাচ্ছে ছেলেমেয়েরা। তাদের কেউ কেউ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমাদের ব্যাকপ্যাকারস টিমের দিকে। দুইপাশের সবুজ দৃশ্য দেখতে দেখতে ৩০/৩৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম মধ্যনগরে। এখানে এসে পড়লাম মহা সমস্যায়৷ ঘাটে কোনো ট্রলার নেই। একটাও নেই। কারণ, এই অঞ্চলে এখন বিয়ের মৌসুম। দেড় দুইশ ট্রলার বিয়ের অনুষ্ঠানে ভাড়ায় চলে গেছে। এইদিকে আমরা যে ট্রলারের নাম্বার পেয়েছি ট্রেনে তাকে ফোন দিয়ে জানলাম তিনিও নেই। তিনি এখন আছেন সুনামগঞ্জে। আসতে আসতে দুপুর দুইটা।

আমাদের সাহায্য করার জন্য কয়েকজন এগিয়ে আসলেন। সেখানে মাস্টার নামে এক মানুষ আছেন। তিনি ফোন দিয়ে একটা ট্রলার আনালেন। কিন্তু, যে ভাড়া শুনলাম তাতে মনে হলো এখুনি ফিরে যাই ঢাকায় আবার। ছোট একটা ট্রলারের ভাড়া চেয়ে বসলো ১২ হাজার টাকা। আমরা রাজি হলাম না। ৫ টাকা দিয়ে নদীর অপর পাড়ে গেলাম। সেখানে মধ্যনগর বাজার। বিরাট বাজার। বেশ জমজমাট। সবই আছে, শুধু গরুর মাংস নেই। যাইহোক, ওই পাড়ে গিয়ে আমরা দফায় দফায় ফোন করলাম আমাদের ট্রেনে পাওয়া ট্রলারের মাঝির নাম্বারে। তিনি বললেন, তিনি দুপুরে আসবেন। বড়জোর ২.৩০। তার সাথে টাকা পয়শার প্রাথমিক আলাপ হলো। তিনি সাড়ে পাঁচ হাজার চেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত দফায় দফায় বাহাস করে ঠিক হলো আমরা তার জন্য অপেক্ষা করবো। অন্য কোনো ট্রলার দেখবো না এর মধ্যে আর। কিন্তু, ভাড়া সাড়ে চারের বেশি দেয়া সম্ভব না।

মাত্র তখন নয়টা, সাড়ে নয়টা বাজে। আমরা বাজারের ঘাটের সাথে একটা তিনতলার বাড়ির একটা রুম ঠিক করলাম। বিকেল পর্যন্ত থাকতে দিবে। তিনশ টাকায়। এই রুমে এসে সবাই ক্লান্ত দেহ এলিয়ে দিলো। আগের রাতে কেউ ঘুমায়নি। তাই কিছুক্ষণ বাদে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। আমার ঘুম আসছিল না। গেলাম নিচে। বাজার ঘুরে আসলাম। 

দুপুরে সবার ঘুম ভাঙ্গার পর খাবারের সন্ধ্যানে বের হলাম। এইদিকের বেশিরভাগ হোটেলে মাছের তরকারির আধিপত্য ভর্তা, মুরগি কিছু নেই। শেষমেশ একটা হোটেলে ঢুকলাম। সেখানে মুরগি পাওয়া গেল। তারা ডিমও বাজি করে দিলো। পাঁচ পদের মাছ একসাথে মিশানো তরকারি দিলো। ডাল দিলো। মুরগী পিস হিসেবে না, এক বাটি হিসেবে দিলো। ভয় পাচ্ছিলাম, এতো মুরগী দিচ্ছে, বিল না জানি কত আসে। সবাই পেট পুরে খাওয়ার পর যখন বললো, মামা এভারেজে ১০০০ টাকা দিয়া দেন তখন বেশ অবাক হলাম। নয়জনের খাবার হিসেবে বিল বেশ কমই। 

আমাদের মাঝি আসলো বিকেল সাড়ে চারটায়। তার আগেই আমরা প্রয়োজনীয় বাজার সদাই করে নিলাম। রাতে ট্রলারে রান্না করার জন্য। মুরগী দুই কেজি, চাল, ডালসহ যা যা লাগে আর কি। পাউরুটি, কলা সহ রাতে খাবারের জন্য নাশতাও কিনলাম। ট্রলারে উঠতেই ছেড়ে দিলো মাঝি। এতক্ষণ খুব আশঙ্কায় ছিলাম, যদি ট্রলার না আসে তাহলে কি হবে। সবাই মার দিবে আমাকে। কারণ, প্ল্যান পুরাটা আমার। দায়টা একটু হলেও বেশি আমারই। যখন ট্রলার ছাড়লো তখন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। শুরু হলো অন্য এক জগত। 

কিছুক্ষণ বাদে আমি গিয়ে বসলাম আমাদের ট্রলারের মাঝির পাশে। তিনি মানুষটা বেশ ভাল। গল্প শুরু করে দিলেন। হাওর সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বার্তা বলতে লাগলেন। দূরে দেখা যাচ্ছে, বিয়ের সাজে সাজানো ট্রলারগুলো ফেরত আসছে একটা একটা করে। গান বাজছে, মানুষ নাচানাচি করছে। ট্রলারের শব্দ ছাড়া বাকি সব শান্ত, স্নিগ্ধ। সন্ধ্যে নামার মুখে আমরা টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবেশ করলাম৷ আবছা হয়ে যাচ্ছে দিনের আলো। এখন আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। চুপচাপ শুনশান নিরবতায় মুখ ডুবিয়ে দেখে যাচ্ছি দূরের হাওর, ছোট ছোট নৌকা। এতো শান্ত একটা ভাব এসে ভর করলো মনের মধ্যে! আরো কিছুক্ষণ পর যখন রাতের আধাঁর নেমে আসলো দূরে উঁচুতে সারিবদ্ধ লাইট জ্বলতে দেখলাম। মাঝি জানালো সেখানেই আমাদের গন্তব্য। ওগুলো ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের ওপরে জ্বলা আলো। আমরা যাচ্ছি, মেঘালয় পাহাড়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত ট্যাকেরঘাট। 

সাড়ে সাতটায় পৌঁছে গেলাম ট্যাকেরঘাটের কাছে। এর মধ্যেই লঞ্চের ভেতরে রান্না বান্নার আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। শিহাব, জনী ভাই, ইকরাম, অন্তর রান্নার ব্যাপারটা দেখছে। আমরা বাকিরা লঞ্চের ছাদে সাহেবের মতো শুয়ে আকাশ দেখছি। আকাশে লক্ষ লক্ষ তারা। এতো পরিষ্কার আকাশ ঢাকায় খুব একটা দেখা যায় না। কি অদ্ভুত শিহরণ লাগছে। ভারতের এতো কাছে বসে আছি। খোলা আকাশের নিচে। রান্না হচ্ছে। চারধার নিঝুম। কি অদ্ভুত আবেশে মন ভেসে যাচ্ছে। কেনো এই দিনগুলো দীর্ঘ হয় না! কেনো এমন দিনের সংখ্যা জীবনে খুব কম হয়! 

জাদুকাটা নদী

সকাল বেলায় মাঝির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। আমাদের সাথে স্থানীয় বাইকওয়ালারা কথা বলতে আসলো। তাদের সাথে আমাদের কথাবার্তা হলো। আমাদের এখন বারেকটিলা, শিমুল বাগান, লাকমাছড়া, নীলাদ্রি লেক, জাদুকাটা নদী এই জায়গাগুলোতে তারা নিয়ে যাবেন। ২৫০ টাকা করে পাঁচটা বাইক নিলাম। আমাদের মাঝিকেও আমাদের সাথে নিয়ে নিয়েছি। উনি কেন একা একা বসে থাকবেন! প্রথমে ট্যাকেরঘাট থেকে বাইকে গেলাম বটতলায়। সেখানে বাজারে ঢুকে সকালের নাশতা সেরে নিলাম।

তারপর যাওয়া হলো শিমুল বাগানে। শিমুল বাগানে যদিও এখন শিমুল ফুলের সিজন নেই। তবুও বিশাল এই ব্যক্তিমালিকানাধীন বাগান বেশ সুন্দর। এখানে প্রবেশ করার জন্য বাইক প্রতি বিশ টাকা করে দিতে হয়। তারপর একে একে বারেকটিলা, জাদুকাটা নদী, নীলাদ্রী, লাকমাছড়া সবগুলো জায়গায় ঘুরা হলো। বাইকের জার্নিটা অমায়িক। মনে হচ্ছিলো দুনিয়ায় আর কিছু নেই, শুধু এভাবেই চলতে থাকুক বাইক, এই পথ আর শেষ না হোক৷ আর প্রত্যেকটা জায়গা এতো সুন্দর যে, কি অদ্ভুত ভাল লাগছিল!

শিমুল বাগান

আমার সাথে কয়েকজন বলেই ফেললো, তাদের এখন পর্যন্ত দেখা সেরা জায়গা সুনামগঞ্জ। দেশভাগের পরিণামটা আরো বেশি ধরা পড়লো এই ট্যুরে এসে। পাশেই মেঘালয়ের পাহাড়, দূর থেকে দেখছি অথচ এগুলো সব অন্য দেশের সম্পদ। দেশভাগের অদ্ভুত হিসাব নিকাশে সব বড় বড় পাহাড় কিভাবে যেন ভারতের ভাগে গিয়েই পড়লো। আহারে! মন ভরে গেলো এই ট্যুরে এসে। পরিপূর্ণ মন নিয়ে আমরা ফিরতি পথে আবার ট্রলারে উঠলাম। দুপুরের পর। মনটা বিষাদে ছেয়ে যাচ্ছিলো। ইচ্ছে করছিলো এখানেই কোথাও থেকে যাই৷ তা তো আর হয় না। ইচ্ছে করলেই সব হয় না। ওয়াচ টাওয়ারের এদিকে এসে ট্রলার থামলো। এখানে এসে সবাই গোসল করে সাধারণত। আমি ওয়াচ টাওয়ারের উপরে উঠলাম। বিস্তৃত হাওয়ারের দৃশ্য দেখা যায় এখান থেকে। এখানে ভাসমান নৌকায় ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ঘুরে বেড়ায়। ভাসমান চায়ের দোকানও আছে। চায়ের কাপ দশ টাকা।

লাকমাছড়া

লাকমাছড়া, এখানে শ্রমিকদের পাথর তোলা দেখতে পারবেন। ফিরে আসবার পথে ট্রলার আটকে গেল হাওরের মাটিতে। কারণ, পানি কমে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় মাছ ধরার জাল দিয়ে হাওরের রাস্তা বন্ধ করা। দুইবার এমন হয়েছে। একবার তো সবাই মিলে ধাক্কা দিয়ে ট্রলার ঠেলতে হয়েছে। এই রুটে আর কিছুদিন পর ট্রলার সুনামগঞ্জ পর্যন্ত যেতে পারবে না। কারণ, পানি কমে যাচ্ছে প্রতিদিন। আবার আগামী বর্ষার অপেক্ষা। 

যাই হোক, আমরা সাড়ে সাতটায় আসলাম মধ্যনগরে। একটা মাহিন্দ্রা ৬৫০ টাকায় ভাড়া করে চলে আসলাম মোহনগঞ্জ স্টেশনে। এখানে রাতের খাবার খেয়ে ট্রেনে উঠে বসলাম। ট্রেন ছাড়ে রাত সাড়ে এগারোটায়। পেছনে রেখে আসলাম সেরকম একটা ট্যুরের স্মৃতি! এই ট্যুরে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে এভারেজ ২৩০০ টাকার মতো পার পারসন। হাওরে গ্রুপ করে গেলে কম খরচে ঘুরে আসা যায়। আর মোহনগঞ্জের এই রুটে গেলে পুরো জার্নিটাই অন্য মাত্রা পায়! ট্রেন, ট্রলার, বাইকের জার্নি মিলে আপনার জীবনে সেরা স্মৃতি হয়ে থাকবে এই রুটের জার্নিটা!

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা