কল্পনা করুন তো- ঘন সবুজ, সুন্দর একটা বনের মধ্যে দিয়ে আপনি হেঁটে যাচ্ছেন। একা! পাখির কলকাকলিতে মুখরিত চারদিক, অনেক পরিচিত-অপরিচিত গাছের সারি। হঠাৎ...! হঠাৎ সামনে দেখতে পেলেন দু-তিনটা লাশ। কেমন হবে সেসময় আপনার মনের অবস্থা?
এমনই এক বন 'আওকিগাহারা'। জাপানের মাউন্ড ফুজির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত এ বনকে বলা হয় 'বৃক্ষ-সাগর', 'শয়তানের বন', বা 'আত্মহত্যার বন'। প্রতিবছর ৫০-১০০ জন মানুষ এ বনে এসে সুইসাইড করে, যার বেশিরভাগই গলায় দড়ি দিয়ে অথবা ঘুমের ঔষধ খেয়ে।
না, কোন ভৌতিক ব্যাপার অবশ্য নেই এর মধ্যে! দুঃখজনক হলেও সত্যি ধনসম্পদে সমৃদ্ধ জাপানে আত্মহত্যার প্রবণতা খুব বেশি। মানসিক ডিপ্রেশন থেকে এ বনে আত্মহত্যা করতে যায় জাপানীরা। প্রতিবছর সে দেশে গড়ে ৩০ হাজারের বেশি লোক আত্মহত্যা করে থাকে। আর এসব ঘটনায় গভীর এক ক্ষত ওই আওকিগাহারা বন।
জনশ্রুতি আছে, ১৯৬০ সালে প্রকাশিত জাপানি লেখক সেইচো মাতসুমোতোর একটি উপন্যাস আত্মহত্যার এসব ঘটনার পেছনে ইন্ধন জুগিয়েছে। বইটির নাম কুরোয় কাইজু। এর অর্থ ‘বৃক্ষের কৃষ্ণসাগর’। আওকিগাহারা বনে দুই প্রেমিক-প্রেমিকার আত্মহননের মধ্যে এই উপন্যাসের কাহিনির সমাপ্তি।
অনেকে মনে করেন, বহুল পঠিত এই উপন্যাসটি যাঁরা পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন এক প্রগাঢ় আবেগ ছাপ ফেলেছে, এবং আত্মহননে প্ররোচিত হয়েছেন তাঁরা। এভাবে আওকিগাহারার বনে গিয়ে গাছের ডালে ফাঁস দিয়ে ঝুলে জীবনপ্রদীপ নিভিয়েছে শত শত মানুষ।
১৯৯৩ সালে আরেক জাপানি লেখক ওয়াতারু তসুরুমুইয়ের একটি বই প্রকাশিত হয়, যার নাম দ্য কমপ্লিট সুইসাইড ম্যানুয়াল। বিতর্কিত বইটি শিগগিরই সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের স্থান দখল করে। এতে আত্মহত্যার বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এ বইটিতেও আওকিগাহারা বন আত্মহত্যার একটি সঠিক স্থান হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। এ যেন এক সহজ পথ, ওই বনে গিয়ে সবুজের মধ্যে হারিয়ে যাও! তারপর কোনো গাছে উঠে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ো ডালে।
অবশ্য, এই বই দুটো প্রকাশিত হবার অনেক আগে থেকেই এ বনে মানুষ আত্মহত্যা করতে আসে। উনিশ শতক থেকেই এ বনে মানুষ আত্মহত্যা করতে আসে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। অনেক ধরণের ভৌতিক উপকথাও প্রচলিত আছে আকিগাওহারা বন নিয়ে। এরকম একটা জায়গায় যাওয়ার কথা ভাবতেই তো গা ছমছম করে, তাই না?
তারপরও ১৯৭০ সাল থেকে প্রতিবছর স্বেচ্ছাসেবক এবং সাংবাদিকরা এ বনে আসেন মৃতদেহ সন্ধান করতে এবং তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলতে। এ বনের অনেক জায়গায় সাইনবোর্ড ও গাছের ডালে ঝোলানো কাগজ রয়েছে যার মধ্যে, 'আরেকবার চিন্তা করুন', 'পরিবারের কথা ভাবুন' এই ধরনের সতর্কতা বাণী লেখা রয়েছে। এসব কারণেই এই বন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভীতি উদ্রেককারী জায়গাগুলোর একটি।
তথ্যসূত্র- Japan's 'suicide forest' is creepier and sadder than any movie
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন