৩০ বছর বয়সী একটা তরতাজা তরুণ আত্মহত্যা করেছে, কেন জানেন?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
মাত্র দুই সপ্তাহ কাজ করতে না পারলে যে দেশের মানুষের ঘরে হাড়ি চলে না, সেই দেশকে দেখানো হচ্ছিল উন্নয়নের স্বপ্ন। যে দেশ করোনার মৃত্যুর চেয়ে ভয় পায়- না খেয়ে মরাকে, সেই দেশকে মধ্যআয়ের দেশ বলে দেমাগ ফাটানো হচ্ছিল।
৩০ বছর বয়সী একটা তরতাজা তরুণ আত্মহত্যা করেছে। ঝিনাইদহে। কেন জানেন? খেতে না পেয়ে। যে ভ্যানটা সে চালাতো জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে, করোনার কারণে এই কদিন সেটা নিয়ে বের হতে পারেনি। পাশের বাড়ি থেকে একটু চাল ধার এনেছিল। তাই দিয়ে খেয়েছে চার বাচ্চা। স্বামী স্ত্রী না খেয়ে ছিল। পরে রাতের কোন এক গভীরতম মুহুর্তে অহেদুল নামের ওই যুবক ঝুলে পড়েছে মৃত্যুরশিতে।
তাকে আর ভ্যান নিয়ে বেরুতে হবে না, সন্তানদের মুখে কী খাবার তুলে দেবে, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না। সবকিছুর উর্ধ্বে কোন্ এক অন্যভুবনে বসে ও কি নিচ থেকে আমাদের দেখবে? আমরা যারা লকডাউনে বোরড হয়ে যাচ্ছি... কী করি আর ভেবে না পাই করছি, তারপর রান্নাঘরে গিয়ে টেনে বের করছি ঘি, কিসমিস, পেস্তার বয়াম, তারপর সুস্বাদু সেই খাবার খাচ্ছি, যেহেতু আমাদের সময় আর কাটে না আর বহুদিন আমাদের গৃহকর্মী নাই, আমাদের পেট ভাল খাবারের অপেক্ষায় অস্থির হয়ে উঠেছে!
বোন বলল, ঢাকার রাস্তায় নাকি সন্ধ্যাবেলায় ভিক্ষুক নেমে আসছে। ফ্ল্যাট থেকে শোনা যায়, ‘‘দুটা ভাত দেবেয়েনননন...” ঠিক যেমন খুব ছোটবেলায় শুনতাম! কোন অচিন নারী কি অচেনা পুরুষের কণ্ঠ- ‘‘একটু ভাত দেএএননন...” আবার ফিরে আসলো কি? এ কি মহামারীর আভাস? একি নতুন মৃত্যুদিনের পরোয়ানা?
দুর্যোগ আমাদের জানিয়ে দিল, এই উন্নয়নের খেলা, এইসব জিডিপি গ্রোথ, বড় বড় সেতু, কালভার্ট সব কেমন গালভরা, ফাঁপা! যখন সিলেটের মত বড় মেডিকেল কলেজে আইসিইউ’র অভাবে সিনিয়র চিকিৎসককে ভাড়া করা অ্যাম্বুলেন্সে আনতে হয় ঢাকায়, যখন করোনা ভাল করে ছোবল দেবার আগেই মৃত্যু হয় স্বাস্থ্যকর্মীর, যখন বেসরকারি হাসপাতালগুলো বাণিজ্য করতে পারবে না জেনে মুখের ওপর দরোজা আটকে দেয় মুমুর্ষু রোগীর আর মৃত্যু হয় ক্যান্সার আক্রান্ত তরতাজা তরুণের, তখন টের পাই, কত ফাঁপা, কত মিথ্যে এই সব কিছু।
মাত্র দু’সপ্তাহ কাজ করতে না পারলে যে দেশের মানুষের ঘরে হাড়ি চলে না, সেই দেশকে দেখানো হচ্ছিল উন্নয়নের স্বপ্ন। যে দেশ করোনার মৃত্যুর চেয়ে ভয় পায়- না খেয়ে মরাকে, সেই দেশকে মধ্যআয়ের দেশ বলে দেমাগ ফাটানো হচ্ছিল।
যে দেশে পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যাংকার জীবন বাজি নিয়ে বেরুচ্ছে রাজপথে, সেই দেশে রাজাধিরাজেরা ধমকে যাচ্ছে শুধু, সমালোচনা করছে সাধারণ মানুষের। অথচ জবাবদিহী করার কথা এখন তাদের। স্বাস্থ্যখাত কেন এত নাজুক? কেন ত্রাণ পৌঁছুচ্ছে না সব মানুষের ঘরে? কেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা বস্তা বস্তা চাল চুরি করছে এই মহামারির দিনেও? কীভাবে এসব ঘটছে?
সামনে দিন কেমন জানি না। সারা পৃথিবীই ভুগছে। ভাবছে। চিন্তাজগৎ এলোমেলো সবার। দুর্যোগ মানুষের প্রকৃত চেহারা টেনে বের করে আনে। দুর্যোগ সব দেশের প্রকৃত অবস্থাও জানিয়ে দিল। এমনকি আমেরিকারও। এই করোনার দিন যদি শেষ হয় কোনদিন, এইসব মুখোশের আড়ালে রাখা মুখ ও ছবি আমরা কি মনে রাখবো না?
তথ্যসূত্র- বাংলা ট্রিবিউন
আরও পড়ুন-