এমন হতাশ জীবন দিয়ে কী করবেন? কী করা যায় এমন যাচ্ছেতাই জীবন নিয়ে? হতাশা অনেককেই এসময়টাতে ধ্বংস করে দেয়। নিজের জীবনের শেষ দেখে ফেলেছেন বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। কোনো কিছু না পারলে কি সফল হওয়া যায় না?

লেখার শুরুতেই ঘোষণা দিতে চাই (কিংবা দায় স্বীকার), আমি মোটেই সফল কেউ নই। বিভিন্ন বই আর অনলাইন ঘেঁটে লেখাটি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি মাত্র। ছোটবেলা থেকে আমরা খুঁজতে থাকি কীভাবে আমরা বড় হব, কীভাবে আমরা সফল হব। কিন্তু যে হারে স্কুল পালানো আর অল্প বয়সে প্রেমে পড়ার অভ্যাস করি আমরা, তাতে আমাদের স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার বারোটা বেজে যায়। আর তাতে আমাদের জীবন ব্যর্থতার মহাকাব্য হয়ে উঠে। চারপাশের বন্ধুবান্ধবরা যখন ক্যারিয়ার শুরু করে, তখনও আপনি বেকার হয়ে বসে থাকেন। দেখা যায় কিছুই পারেন না আপনি। কি কাজ কি খই ভাজা- কোনটাই আপনি পারেন না, বোঝেনই না কী করবেন।

এমন হতাশ জীবন দিয়ে কী করবেন? কী করা যায় এমন যাচ্ছেতাই জীবন নিয়ে? হতাশা অনেককেই এসময়টাতে ধ্বংস করে দেয়। নিজের জীবনের শেষ দেখে ফেলেছেন বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। কোনো কিছু না পারলে কি সফল হওয়া যায় না? এই প্রশ্নের উত্তরে আপনার চারপাশের সবাই বলবেন, ‘কই না তো। আমি তো ছোট বেলা থেকে মেধাবী, আমার এত কিছু করা লাগে না। আমি এমনি এমনি সবই পারি।’ কিন্তু আপনিই হারাধনের ১১তম সন্তান যিনি কিছুই জানেন না, পারেন না। অকালকুষ্মাণ্ড বলে ফটিক চক্রবর্ত্তীর মতো তখন আপনার বন্ধু-মহলে আপনার বেশ সুনাম আছে। এখন আপনি কী করতে পারেন? সময় তো বসে থাকবে না, চুল তো সব সময় কালো থাকবে না। আয়নায় তাকিয়ে খেয়াল করলে একটা দুটো পাকা চুলও পেয়ে যেতে পারেন। কী হবে আপনার? কিছুই কি হবে না? 

চিন্তা বাদ দিন না! আগামীকাল কী হবে সেটা বাদ দিন না! পরশু কক্সবাজার হানিমুনে যেতে হবে সেই তাড়নায় আজ ও আগামীকাল কাজ করুন। পরশু কিছু শিখেই যাবেন। ঠেলার নাম কী মনে নেই? বাবাজী। সফল হতে গেলে কিছুই পারা লাগে না। শুধু শেখার আগ্রহ থাকলেই যথেষ্ট। বিখ্যাত যারা, তাদের জীবনে দেখুন- কতটাই ব্যর্থ আর অপদার্থ তারা। সমাজের চোখে আজ তারা সফল কিন্তু তারাও আপনার বয়সে ছিল অপদার্থ।

বিল গেটসের দিকে দেখুন না। বেচারা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে ড্রপ আউট হয়ে যায়। বিল গেটস কি পৃথিবীর সেরা প্রোগ্রামার? সে কি ভাল বক্তা, লেখক কিংবা সফটওয়ার বিক্রেতা? সে আসলে কী পারে বলুন তো? মাইক্রোসফটের বিল গেটস আর সাধারণ মানুষ বিল গেটস কি এক নাকি? বিল গেটস তার কাজের ক্ষেত্রে বেশ সিরিয়াস ধরনের। সেই যে কলেজ থেকে পালিয়েছেন, এরপরে ছুটছেন তো আর ছুটছেন। নিজেই দাবি করেন, আমি এখনও শিখছি। বিল গেটসকে দেখে শিখুন না-কিছু না পেরেও পৃথিবী সেরা পাঁচজন ধনীর একজন বিল গেটস। এত এত টাকার মালিক সে-কিন্তু কিছুই পারে না।

হলিউডের অভিনেতা উইল স্মিথ কি বিখ্যাত গায়ক কিংবা অভিনেতা! কিন্তু সে সফল বলে আপনি দাবি করতেই পারেন। এত এত হিট চলচ্চিত্র যার, সে কীভাবে ব্যর্থ হয়? উইল স্মিথ আসলে কি পারে বলুন তো? আরও তো লাখ খানেক অভিনেতা আছেন, তাদের নাম আপনার মনে নেই কিন্তু ‘পারস্যুট অফ হ্যাপিনেস’ চলচ্চিত্রের সেলস-ম্যান উইল স্মিথকে আপনার ঠিকই মনে আছে। কেন? স্মিথ অনেকগুলো ছোট ছোট বিষয়কে আয়ত্ত করেছেন বলেই আজকে তিনি উইল স্মিথ। আপনিও শুরু করুন না। টুকরো টুকরো কাগজ জমাতে জমাতে একদিন তো একটা লাইব্রেরিও দিয়ে দেয়া যায়। তাহলে আপনি বসে থাকবেন কেন? ছোট ছোট বিষয়গুলো থেকে শেখা শুরু করুন। কিছু না পারলেও চলবে-চাকরির বাজারে যারা পারে তারা চাকরি করে একটা আর যারা জানে তারা চাকরি করে অনেকগুলো। 

“ভুল থেকে শিখুন”- বাজারে প্রচলিত খুব সাধারণ একটি নীতি কথা। কয়টা ভুল থেকে শিখবেন। আপনার জীবন তো আর কম বড় না। প্রতিদিন গড়ে ৫টা ভুল করলে জীবনে প্রতিবছর ১৫০০ ভুল আপনি করবেন। কিছু করতে না পারলে ভুলগুলো জমাতে থাকুন। নতুন নতুন ভুল করুন। ভুল থেকেই নতুন ভুল জন্মাবে। আর মনে রাখুন- এই ভুল করেই আলেকজান্ডার গ্রীস থেকে মিশর জয় করেছিলেন। কলম্বাস ভুল করে কোথায় গিয়েছিলেন বলুন তো? সব কিছু যে পারতে হবে, সেটা কেমন কথা বলুন তো?

ধরুন আপনি এলাকার লোকাল ক্রিকেটার। আপনি ক্রিকেট ভীষণ পছন্দ করেন বলেই সুযোগ পেলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মাঠে নেমে পড়েন। মাঠের আশে পাশের বাড়ির ছাদের সুন্দরী আপুদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য তুড়ি মেরে বড়সড় ছয় মারেন অনায়াসে। কিন্তু আপনি জানেন আপনি জীবনেও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় হবে না। সময় আছে নাকি আপনার? কিন্তু আপনি কীভাবে পাড়ার সুন্দরীদের মনোযোগ পাওয়া যায়, তা জানেন। এটা পাড়ার ছোট ভাইদের শেখান না! এমন হাজারও বিষয় জানেন আপনি- যা আপনার কাছ থেকে অন্যরা শিখতে চায়। সুযোগ করে নিজে কী জানেন বা কী পারেন সেটা খুঁজে বের করুন। তারপরে তুড়ি মেরে যারা পারে তাদের জায়গা দখল করুন। চাকরির অভাব হবে না।’ 

বিখ্যাত হউক আর কুখ্যাত হউক যার নাম আপনি জানেন এমন লোকজনের জীবনের দিকে তাকালে মজার চিত্র দেখতে পারেন। একজন বিখ্যাত ক্রিকেটার কেন বিখ্যাত হয় বলুন তো? সে কিন্তু কোন একটা শট খেলতে খেলতে পারদর্শী হয়ে বলেই সে বিখ্যাত। শচীন টেন্ডুলকার বিখ্যাত। সে কি প্রতি-ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছেন? টেস্টে ২০০ ম্যাচ খেললেও তার সেঞ্চুরি মাত্র ৪৯! কতটাই ব্যর্থ সে দেখুন না। প্রতি চার টেস্টের একটাতে সেঞ্চুরি। এরকম ব্যর্থ ক্রিকেটার কেন বিখ্যাত জানেন? শচীনের টেন্ডুলকার তার খেলা উপভোগ করতেন। সেই অভিষেক ম্যাচ থেকেই শচীন খেলা উপভোগ করে গেছেন। শচীন শেষ ম্যাচের পরেও বলেছেন, ‘আমি এখনও শিখছি।’ আপনিও শিখুন না! শিখতে শিখতে নিজের চারপাশের প্রতিবন্ধকতাকে এক সময় শিকার করতে পারবেন তো! নিজেকে শিকারি ভাবুন। যা আছে তা নিয়েও চিন্তা করবেন না, যা নেই তা নিয়েও চিন্তা করবেন না। জীবন উপভোগ করুন।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা