স্টর্ম চেজার- ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তিস্থলের কাছে রোমাঞ্চকর অভিযানে যান যারা!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
সবাই যখন ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রাণ বাঁচাতে লড়াই করে, এই দলগুলো তখন ঘূর্ণিঝড়ের কাছাকাছি চলে যায়। এদেরকে বলা হয় স্টর্ম চেজার।
মানুষের কত বিচিত্র রুপ আছে। কারো কারো কাছে যা ভয়, আতংক একই ঘটনা আবার অন্যদের কাছে রোমাঞ্চকর কোনো এডভেঞ্চার। পৃথিবী এখন পরিবেশগত হুমকির কারণে বিলীন হওয়ার শংকায়। এই সময়টায় আগের তুলনায় বেড়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা। এসব দূর্যোগ মোকাবেলায় মানুষ কতরকম প্রস্তুতি নেয়। তবুও, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এমন ঘটনায় কম হয় না। অথচ, এমন ভয়ংকর দুর্যোগের সময় একটা দল বেরিয়ে পড়ে রোমাঞ্চকর এক অভিযানে।
সবাই যখন ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রাণ বাঁচাতে লড়াই করে, এই দলগুলো তখন ঘূর্ণিঝড়ের কাছাকাছি চলে যায়। এদেরকে বলা হয় স্টর্ম চেজার। স্টর্ম চেজাররা সবাই যে শুধু এডভেঞ্চার করার অভিপ্রায়ে এমন জীবন মরণ ঝুঁকি নেন, তা নয়। কেউ কেউ বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে এমন দুঃসাহসী অভিযানে যান। পর্যবেক্ষণ করেন ঘূর্ণিঝড় উৎপন্ন হওয়ার মুহুর্ত। কেউ কেউ ফটোগ্রাফি করতে যান। এমন মুহুর্তের ছবি তুলাটা অনেকটা 'ওয়ান্স ইন আ লাইফটাইম ক্লিক' তাদের জন্য। কেউ কেউ সংবাদ সংগ্রহের জন্যেও যান। টিআরপির এই যুগে সবাই এক্সক্লুসিভ কন্টেন্ট দিয়ে মানুষকে টানতে চায় নিজেদের দিকে, সেই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এমন দুঃসাহস করতে তারা পিছপা হন না।
প্রথম স্বীকৃত স্টর্ম চেজার হিসেবে পরিচিত যিনি, সেই মানুষটার নাম ডেভিড হোডলি। ১৯৫৬ সালে নর্থ ডাকোটায় তিনি ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তিস্থলের কাছাকাছি যান। তাকেই স্ট্রম চেজিংয়ের ক্ষেত্রে পাইয়নিয়ার বলা হয়। তিনি স্টর্ম ট্র্যাক নামে একটি ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতাও।
স্টর্ম চেজিং এরপর আরো বেশ জমজমাট হয়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, বিবিসি সহ প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া স্টর্ম চেজিং নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করে। লাইভ কিংবা ভিডিও ধারণ করে দেখানো হয় স্টর্ম চেজিংয়ের কাজ কারবার। মজার ব্যাপার হলো, স্টর্ম চেজিংকে এডভেঞ্চারাস এক্টিভিটি হিসেবেও গন্য করে থাকে কেউ কেউ। যেমন আমেরিকাতে কিছু কিছু ট্যুর এজেন্সিই আছে যাদের কাজ হলো, স্টর্ম চেজিং ট্যুর আয়োজন করা। দলগতভাবে সবাই ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঝড়ের কেন্দ্রে গিয়ে প্রাকৃতিক লীলা অনুভব করতে যায়। কেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা কতটা তীব্র হতে পারে সেসব তারা প্রত্যক্ষ করেন স্বচক্ষে।
প্রশ্ন হলো এত বড় এডভেঞ্চারে যে তারা যান এক্ষেত্রে কেমন প্রস্তুতি থাকে তাদের? অবাক করা তথ্য হলো, তারা আসলে খুব বেশি প্রস্তুতি নেন না। বেশিরভাগ স্টর্ম চেজার বেসিক ফটোগ্রাফি ইন্সট্রুমেন্টগুলো নিয়ে যান কেবল। ছবি বা ভিডিও ধারণ করা তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে। তবে, অনেকসময় লাইভ ফিড বা ডাটা প্রোভাইড করার উদ্দেশ্যে যারা যান, বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য যান, তারা স্যাটেলাইট বেজড ট্র্যাকিং সিস্টেম সম্পন্ন গাড়ি ব্যবহার করেন।
আরেকটি তথ্য দেই। স্টর্ম চেজিংয়ের কারণে এ যাবৎ বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে, নিহত হয়েছেন বেশ কজন স্টর্ম চেজার। এক্ষেত্রে গাড়িতে থাকার কারণে, ড্রাইভিং করার কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। ২০০৫ সালে জেফ ওয়ের হারিক্যানের সময় গাড়ি ড্রাইভিং করা অবস্থায় নিহত হন। ওকলাহোমাতে ২০১৩ সালে স্মরণকালের ভয়ংকর এক ঘূর্ণিঝড় হয়। ইঞ্জিনিয়ার টিম সামারাস, ফটোগ্রাফার সন পল, কার্ল ইয়ং ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে নিহত হন। ঝুঁকি সত্ত্বেও থামে না এসব দুঃসাহসিক অভিযান। স্টর্ম চেজাররা প্রকৃতির রুদ্র রুপ দেখতে ঠিকই বেরিয়ে পড়েন ঘর ছেড়ে।
শুনেছি, বাংলাদেশেও আছে স্টর্ম চেজারদের একটি গ্রুপ। যদিও তাদের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য জানা যায়নি। বাংলাদেশি স্টর্ম চেজারদের মোটিভ কী, তাদের কী প্রস্তুতি থাকে; সেটা আমাদের জানা নেই। তবে, সবার আগে জীবনের নিরাপত্তা মুখ্য। তাই, স্টর্ম চেজার হওয়ার কারো বাসনা থাকলে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলা কাজের কথা না।