স্টিভেন প্রুইট: দ্য সিক্রেট কিং অফ উইকিপিডিয়া!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
ষোলো বছর ধরে প্রত্যেকদিন ৩ ঘন্টা কাজ করে তিনি লিখেছেন পঁয়ত্রিশ হাজার আর্টিকেল, উইকিপিডিয়ার এক তৃতীয়াংশ ইংরেজি পোস্টই তার এডিট করা। টাইম ম্যাগাজিনের কাভারেও এসেছেন প্রুইট। হয়েছেন বিশ্বের ২৫ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে একজন!
কোনো এক মনীষী বলেছিলেন- আমাদের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা, তথ্যের প্রাচুর্য। বেশি বেশি তথ্য থাকার কারনে সঠিক তথ্য ও মিথ্যে তথ্যের মধ্যকার পার্থক্য এখন আর আমরা কেউ বুঝে উঠতে পারছি না। ভুল তথ্য, গুজব, প্রোপাগাণ্ডায় ভর করে সংঘটিত হচ্ছে নানারকম নাশকতা। আগের সময়ের কথা যদি কল্পনা করি, যে সময়ে প্রযুক্তি এতটা বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করেনি, সে সময়ে তথ্যের সুলুকসন্ধানে অনেকটাই কাঠখড় পোহাতে হতো। যে সমস্যা এখন আর নেই। হাতের মুঠোফোনের একটি ক্লিকেই পাওয়া যাচ্ছে বিশ্বের যাপিত সব সংবাদ। আবার যদি সংবাদকেই বলা হয় বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সম্পদ, তাহলে সেই সম্পদের সবচেয়ে বড় কোষাগার অবশ্যই বলা উচিত উইকিপিডিয়াকে। আমাদের বিভিন্ন কাজে উইকিপিডিয়া যেন হয়ে গিয়েছে আমাদের সবচেয়ে বড় রক্ষাকর্তা। আমাদের আজকের গল্প উইকিপিডিয়া নিয়ে না। বরং উইকিপিডিয়ার সাথে যুক্ত এমন একজন মানুষকে নিয়ে আজকের গল্প, যিনি অনেকটাই অদ্ভুত। উইকিপিডিয়ার সেই অদ্ভুত মানুষটি উইকিপিডিয়ার এক তৃতীয়াংশ ইংরেজি আর্টিকেলের কাজ একাই করেছেন। এখন পর্যন্ত ৩ মিলিয়ন আর্টিকেল এডিট করেছেন যিনি! যিনি লিখেছেন ৩৫০০০ আর্টিকেলও! তিনি মানুষ না রোবট, সে আলোচনায় আমরা পরে যাবো। আপাতত জানা যাক, এই বিস্ময়কর মানুষটির নাম স্টিভেন প্রুইট।
ভিউয়ের দিক থেকে বর্তমানে টপ-ফাইভ চার্টে ফেসবুক -গুগল-ইউটিউবের পাশাপাশি রয়েছে উইকিপিডিয়াও। প্রত্যেক সেকেন্ডে প্রায় ছয় হাজার মানুষ ঢুকছে এই সাইটে। মানুষের যত আগ্রহ বাড়ছে, উইকিপিডিয়ার ভলান্টিয়ার ও কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্বও সে সাথে যুগপৎ ভাবে বাড়ছে। উইকিপিডিয়া নজর রাখছে তাদের সাইটে প্রকাশিত হওয়া প্রত্যেকটি আর্টিকেলের লাইনে। ফ্যাক্ট কে ক্রস চেক করা হচ্ছে। কোনো ভুল যাতে চলে আসত না পারে, সেজন্যে খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে সবকিছুর। স্টিভেন প্রুইট এর কাজও তেমন৷ মনোযোগ দিয়ে সবকিছু এডিট করেন তিনি। খেয়াল রাখেন তথ্যের বিশুদ্ধতার দিকেও।
প্রতিদিন টানা ৩ ঘন্টা সময় তিনি দেন উইকিপিডিয়ার পেছনে। নতুন নতুন তথ্য আর গবেষণা নিয়ে চলে তার পাগলামি। উইকিপিডিয়ায় প্রথম যে আর্টিকেলটি তিনি লিখেছিলেন, তা ছিলো পিটার ফ্রান্সিসকোকে নিয়ে। যিনি ছিলেন স্টিভেন এর পূর্বপুরুষ। তাকে নিয়ে লেখা শেষ করার পরেই স্টিভেন মজা পেয়ে যান। তিনি তখন আরো আর্টিকেল লেখা শুরু করেন। টানা ষোলো বছর কাজ করে তিনি এডিট করেন তিন মিলিয়ন উইকিপিডিয়া পোস্ট! এবং এ কাজের জন্যে তিনি পান না কোনো টাকাপয়সাও। অনেকটা মুফতেই কাজটা করেন তিনি। উইকিপিডিয়ার এই কাজের পাশাপাশি একটি গবেষণাগারেও কাজ করছেন তিনি। অর্থাৎ পড়াশোনার মাঝেই সারাদিন থাকছেন তিনি। কাজ করতে করতে বিরক্তি লাগলে তিনি মন ভালো করার জন্যে আরেকটা আর্টিকেল লেখেন। কোনোকিছু সেলিব্রেট করার থাকলেও লেখেন আর্টিকেল। এভাবেই চলছে।
যদিও বাবা-মা ছেলের এই পাগলামিতে মাঝেমধ্যেই বিরক্ত হন। তাদের ছেলে কেন এরকম পাগলের মত লেখালেখি করছে, তাও তাদের একটা চিন্তার কারন। কিন্তু স্টিভেনকে এই পাগলামির জন্যেই যখন 'টাইম ম্যাগাজিন' তাদের কাভারে স্থান দেয়, ইন্টারনেটের ২৫ জন গুরুত্বপূর্ণ মানুষের মধ্যে ট্রাম্প, জে কে রাউলিং এর সাথে তাকে স্থান দেয়... বাবা-মা'ও বুঝতে পারেন, ছেলে ঠিক পথেই আছে। ছেলে করছে অসাধারণ সব কাজ।
স্টিভেন যে হারে উইকিপিডিয়া আর্টিকেল এডিট করছেন এবং লিখছেন, তার এই কাজের আশেপাশেও নেই আর কেউ। আমরা আশা করবো, জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে তার যে পাগলামি, সেটা অব্যাহত থাকুক। উইকিপিডিয়া ইতোমধ্যেই মানুষের বিশ্বস্ত এক আলোকবর্তিকায় পরিনত হয়েছে। সেই আলোকবর্তিকায় এক বিশেষ অংশ হয়ে না হয় স্টিভেন প্রুইট নামের মানুষটিও থাকুক৷
শুভকামনা রইলো স্টিভেনের জন্যে।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন