স্টিফেন হকিং পেরেছেন, আপনি দমে যাচ্ছেন কেন?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
যতক্ষণ জীবন আছে, ততক্ষণ আশা আছে!
আমরা, তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেকেই জীবনের অনেক পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে চরম হতাশায় নিমজ্জিত। আমরা বেশিরভাগ সময়েই নেতিবাচক চিন্তা করি। চিন্তা করি না, কতটুকু-ই বা শেষ হয়েছে জীবনের! জীবনের কতটুকু দেখেছি আমরা? কতটুকুই বা কাজ করেছি জীবনকে সাজাতে! নিজের ছোট ছোট না পাওয়া আর অক্ষমতা নিয়ে যখন আমরা হতাশ, তখন কি কখনো চিন্তা করেছি, দুনিয়ায় আরও কষ্টে আছে মানুষ! কতজন কত সমস্যা নিয়েও জয় করছে বিশ্ব! সেরকম একজন বিশ্বজয়ী কিংবদন্তীতুল্য ব্যক্তিত্ত্ব স্টিফেন হকিং। সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে যিনি বিশ্বের সকল হতাশাগ্রস্থ মানুষদের অনুপ্রাণিত করে গেছেন।
স্টিফেন হকিংকে বিশ্বের অনন্য প্রতিভাধর ব্যক্তিত্বদের একজন বলে বিবেচনা করা হয়। তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে তার অসামান্য অবদানের জন্য বিখ্যাত। এই বিখ্যাত পদার্থবিদের জন্ম ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে। ছোটবেলায় গণিত বিষয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু কলেজে ওঠার পরে তিনি প্রকৃতি বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে শুরু করেন।
এরপর, তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন প্রথম বর্ষের ছাত্র, বয়স মাত্র ২১ বছর, তখন তার শরীরে এএলএস (ALS-amyotrophic lateral sclerosis) নামক রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। এটা এক ধরনের মটর নিউরন রোগ, যে রোগে শরীরের সব অঙ্গ ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যায়। সেসময়, ডাক্তার স্টিফেন হকিংকে আড়াই বছরের আয়ুষ্কাল বেধে দেন। সেই স্টিফেন হকিং অবশেষে ২০১৮ সালের ১৪ই মার্চ ৭৫ বছর বয়সে মারা গেলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি শিক্ষকতা ও গবেষণা কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। আর দুনিয়াকে দিয়ে গিয়েছেন সুন্দর সব বার্তা। বলেছেন,
যখন আমার এএলএস রোগ দেখা দেয়, তখন জীবন নিয়ে আমার প্রত্যাশা শূন্যতে নেমে আসে। তখন থেকে, জীবনে যা কিছু পেয়েছি, সবই একধরণের বোনাস।
অসাধারণ প্রতিভাধর স্টিফেন হকিং জীবনের এই কঠিন পরীক্ষায় হার স্বীকার করেননি। এই দুরারোগ্য রোগ যা তার প্রায় পুরো শরীরকে অবশ করে দিয়েছে, আটকাতে পারেনি তার জীবন, শিক্ষা বা সাফল্যকে। ১২ টি সম্মানজনক ডিগ্রি রয়েছে হকিংয়ের। তিনি পৃথিবী, বিগ ব্যাং থিউরি এবং বিজ্ঞানের সব অজানা রহস্যের সন্ধানে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
হকিং কোন কথা বলতে পারতেন না, চলাফেরা তো পারতেনই না, একা একা নড়াচড়াও করতে পারতেন না তেমন একটা। তার জীবন একটা হুইলচেয়ারের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলেও তিনি ঠিকই মানুষকে অনুপ্রাণিত করার পথ খুঁজে নিয়েছিলেন। পুরো পৃথিবীকে তিনি প্রতিনিয়ত জানিয়ে গিয়েছেন তারাদের পেছনে লুকিয়ে থাকা রহস্য। উৎসাহিত করছেন সে রহস্য উদঘাটনে। তিনি বলেন,
“Remember to look up at the stars and not down at your feet. Never give up work. Work gives you meaning and purpose and life is empty without it. If you are lucky enough to find love, remember it is there and don’t throw it away.”
বছর কয়েক আগে লন্ডনের রয়্যাল ইন্সটিটিউটে দেওয়া এক বক্তৃতায় হকিং হতাশাকে ব্লাকহোলের সাথে তুলনা করেন। তিনি বলেন, হতাশা এবং ব্লাকহোল কোনটি থেকেই মুক্তি পাওয়া অসম্ভব নয়। তার বক্তব্যের দেওয়া বার্তাটি ছিল, ব্লাকহোল যতটা কালো মনে হয়, আসলে ততটা কালো নয়। আগে মনে করা হতো, কোনোকিছু ব্লাকহোলের মধ্যে ঢুকলে আর সেখান থেকে বের হতে পারবে না। কিন্তু হকিংয়ের মতে, কোন বস্তু ব্লাকহোলের মধ্যে ঢুকলেও সেটা বের হওয়া সম্ভব। তাই যদি তুমি ভেবে থাকো যে তুমি ব্লাকহোলের মধ্যে পড়েছ, তাহলে হাল ছেড়ো না, সেখান থেকে বের হওয়ার কোন একটা পথ নিশ্চয়ই আছে।
যখন তাকে তার অক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন হকিং বলেছিলেন, তার মতো শারীরিকভাবে অক্ষম কেউ যদি নিজের জীবনাবসান চায়, তবে তার সেটা করার অধিকার থাকা উচিত। কিন্তু তিনি এটাও বলেন, যদি কেউ এমনটা করে তবে তা হবে খুব বড় ভুল। খারাপ সময় আসতে পারে। কিন্তু সব অবস্থায়ই কিছু না কিছু করার সুযোগ থাকে, যেটাতে সফল হওয়া সম্ভব। যতক্ষণ জীবন আছে, ততক্ষণ আশা আছে। তার মতে,
শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়াটা তোমার দোষ নয়, কিন্তু এর জন্য পৃথিবীকে দায়ী করা বা কেউ তোমাকে দয়া করুক এটা প্রত্যাশা করা ঠিক না।
স্টিফেন হকিং আরও বলেছেন, সব অবস্থাতেই ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখা উচিত। শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়া মানে এই নয় যে মানসিকভাবেও অক্ষম হতে হবে। সবার সেই কাজের প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত, যে কাজে তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোন বাধা না হতে পারে। তিনি বলেছিলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য যে অলিম্পিকের আয়োজন করা হয় তাতেও হয়তো আমাকে সুযোগ দেওয়া হবে না। তাতে কি! আমি নিজেকে বোঝাই যে, আমার তো অ্যাথলেটিকসে আগ্রহ নেই। তাই এটি কোন সমস্যা না।
তার মতে, বিজ্ঞান শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষদের কাজ করার জন্য খুব ভালো। কেননা, এখানে মস্তিষ্কের ব্যবহার বেশি হয়। অবশ্য বেশিরভাগ গবেষণামূলক কাজ করা যায় না। কিন্তু, তাত্ত্বিক কাজ করতে তো কোন সমস্যা নেই! হকিং বলেছিলেন, আমার কাজের ক্ষেত্র তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান। সেখানে আমার শারীরিক অক্ষমতা কখনোই খুব একটা বাধা হয়নি। আমি এগুলো করতে পেরেছি কারণ, আমার স্ত্রী, সন্তান, সহকর্মী এবং ছাত্রদের কাছ থেকে আমি অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। আমি সবসময়ই আমাকে সাহায্য করার জন্য এই মানুষগুলোকে পাশে পেয়েছি।
কিন্তু সবার মনে রাখা উচিত, যেভাবে পারা যায় সবার সাহায্যের প্রতিদান দিতে হবে। সবাইকে বোঝাতে হবে যে তাদের চেষ্টা বৃথা যাচ্ছে না। স্টিফেন হকিং শুধু বিজ্ঞানমনস্কদেরই উৎসাহিত করেননি, তিনি আমাদের মতো সাধারণ মানুষদেরও উৎসাহিত করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে মানসিক শক্তির কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তেমন কোন বড় বাধা নয়। কোন প্রতিবন্ধকতাই আমাদের আটকে রাখতে পারবে না, যদি মনের জোর থাকে।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন