আটান্ন বছর আগে গঠিত হয়েছিলো এসএফএফ। যে বাহিনীতে সদস্য হিসেবে আছেন তিব্বতী শরনার্থীরা। কিন্তু ভারত সরকার কোনোদিন স্বীকার করেন নি এই বাহিনীর কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের এক সদস্য মারা যাওয়ার পরেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে এই বাহিনীর অস্তিত্ব!

ভারতের গুপ্তচর বাহিনী নিয়ে বেশ কিছু বছর আগে কিছু বইপত্র ঘেঁটেছিলাম। সেখানে ভারতের গুপ্তচর বাহিনীর যে থ্রিলিং গল্পগুলো পড়েছি, তা বলিউডের যেকোনো মেইনস্ট্রিম অর্থোডক্স গল্পকে হার মানায়। তবুও ভারতের এই সিক্রেট ইউনিটগুলো নিয়ে কতটুকুই বা আমরা জানি? কতটুকু বা জানাও সম্ভব?  এই যেমন সাম্প্রতিক সময়ে মিডিয়ার কল্যানে জানা গেলো, বিগত বেশ কয়েক দশক ধরেই পাহাড়ি উচ্চতায় যুদ্ধ করার জন্য ভারত তিব্বতী শরণার্থীদের 'গোপন' এক ইউনিটকে ব্যবহার করছে। এই 'গোপন' ইউনিট এসএফএফ (স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স) এর এক সদস্য মারা গিয়েছেন সম্প্রতি। তার মৃত্যুর পরেই এই বিশেষ ফ্রন্ট 'এসএসএফ' চলে এসেছে ব্যাপক আলোচনায়। 

এসএসএফ সম্পর্কে জানতে গেলে প্রথমেই যেতে হবে একটু পেছনে। ১৯৫৯ সাল তখন। চীনের বিরুদ্ধে এক অভ্যুত্থানের ডাক দিলেন চৌদ্দতম দালাই লামা। ব্যর্থ হলেন তিনি ও তার অনুসারীরা। একরকম পালিয়েই তিব্বত থেকে দালাই লামা চলে এলেন ভারতে। ভারতে তিনি এসে আশ্রয় গাড়লেন এবং তার পিছুপিছু তার হাজার হাজার অনুসারীরাও চলে এলেন ভারতে। 'শরনার্থী' পরিচয়ে বসবাস শুরু করলেন এই তিব্বতীরা। 

এই শরনার্থী তিব্বতীদের মধ্য থেকে বেশ কিছু মানুষকে বেছে নিয়ে ভারত সরকার গঠন করলেন এক বিশেষ গোপন বাহিনী;  এসএফএফ। বাষট্টি সালের ভারত-চীন যুদ্ধে ভারতের শোচনীয় পরাজয়ের পরেই এই বাহিনীকে গঠন করা হয়। যেসব তিব্বতীর উঁচু পাহাড়ে গেরিলা যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ছিল তাদেরকে বিশেষ ভাবে এই  বাহিনীতে নিয়োগ করা হয়। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন প্রধান বি এন মল্লিক এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই এসএফএফ বাহিনী গড়ে ওঠে। অনেকেরই ধারণা, আমেরিকার প্রত্যক্ষ সহায়তায় এবং অর্থায়নে, চীনকে দমন করার জন্যে এই বাহিনী গড়ে উঠেছিলো। 

তিব্বতীদের আশ্রয় দেয়ার জন্যে এমনিতেও ভারতের উপর তিতিবিরক্ত ছিলো চীন, সেখানে এই বাহিনীর তথ্য জানতে পারলে, তারা যে আরো ক্ষিপ্ত হতো, তা বলাই বাহুল্য। এ কারণে ভারত খুব সতর্কভাবে এই বাহিনীর কার্যক্রমকে গোপন রেখে এগোচ্ছিলো। এই বাহিনীর মোট সদস্যের সংখ্যাও কম না। সাড়ে তিন হাজারের উপর তাদের সদস্য! বরাবরই এই ইউনিট সরাসরি কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের অধীন ছিল এবং বাহিনীর প্রধান হিসেবে সবসময়ই ছিলেন একজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা। হাই প্রোটোকল মেনেই সব কাজ করা হয় এখানে।

সম্প্রতি এই ফোর্সের একজন সদস্য নিইমা তেনজিন নিহত হন। তিনি ছিলেন দালাই লামার পিছুপিছু আসা তিব্বতী শরনার্থীদের একজন এবং  ছিলেন এসএফএফ এর সদস্য। তিনি গত ত্রিশ বছর ধরে কাজ করছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতেও। তার মৃত্যুর পরে এসএসএফ যেমন আলোচনায় আসে, তেমনি তার মরদেহে ভারত সরকারের পূর্ন সামরিক মর্যাদাজ্ঞাপনে  এই বিষয়টাও বোঝা যায়, এই বিশেষ বাহিনীকে বেশ গুরুত্ব দিয়েই লালনপালন করে যাচ্ছে ভারত। যদিও ভারত কোনোদিনই এই বাহিনীর অস্তিত্ব স্বীকার করেনি এবং সামনেও করবে কী না, তা জানা নেই কারো।

পূর্ন সামরিক মর্যাদায় সমাহিত করা হয় এসএফএফ এর সদস্য নিইমা তেনজিন কে

তবে এসএফএফ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদের শিরোনাম হবার পরে চীনের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে খুব যে খুশি তারা হবেন না, তা একরকম নিশ্চিত। চীন-ভারত বৈরী সম্পর্ক এখন আরেকটু শীতলতার দিকে যাচ্ছে, তাও একরকম হলফ করেই বলা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, খেলা আবার জমে উঠছে। ভূ-রাজনীতির খেলা।

এখন এটাই দেখা যাক, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়ায়! 

 

ছবি ও তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা 

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখু


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা