এক মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। পরীক্ষা শুরু হবার ঠিক আগের দিন ভুল প্রবেশপত্র পাওয়ায় এই মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরীক্ষার আগের দিন প্রবেশপত্র হাতে পেয়ে এই মেয়ে আবিষ্কার করেছে- সে বিজ্ঞানের না, মানবিক বিভাগের ছাত্রী! তাকে মানবিকে পরীক্ষা দিতে হবে!

এক মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। মেয়ের বাড়ি নীলফামারী। সে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। পরীক্ষা শুরু হবার ঠিক আগের দিন ভুল প্রবেশপত্র পাওয়ায় এই মেয়ে আত্মহত্যা করেছে. পরীক্ষার আগের দিন প্রবেশপত্র হাতে পেয়ে এই মেয়ে আবিষ্কার করেছে- সে বিজ্ঞানের না, মানবিক বিভাগের ছাত্রী! তাকে মানবিকে পরীক্ষা দিতে হবে! কীভাবে ভুল প্রবেশপত্র হলো, এর দায় কেউ নিতে চায়নি। শেষমেশ মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে।

দুটো বিষয়। ভুল প্রবেশপত্র আসার ফলে যদি মেয়েটা পরীক্ষা এই বছর দিতে নাও পারত; তাই বলে কি তাকে আত্মহত্যা করতে হবে? জীবন আগে, নাকি পরীক্ষা? বেঁচে থাকলে তো এমন হাজারটা পরীক্ষা দেয়া যাবে। এসএসসি পরীক্ষায় প্রথমে ফেল করে এখন দেশ-বিদেশে বড় বড় কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে এমন তো হাজারো উদাহরণ আছে। অথচ এই মেয়েকে কিনা আত্মহত্যা করতে হলো।

কারণ এই মেয়ে হয়তো তার পরিবার এবং সমাজ থেকে শুনেছে- পরীক্ষা দিতে না পারলে জীবন শেষ! তাই হয়ত সে নিজেই নিজের জীবনকে শেষ করে দিয়েছে। দ্বিতীয় ব্যাপারটা আরও গুরুত্বপূর্ণ। বলা হচ্ছে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ভুলের জন্য এমন হয়েছে। কে বা কার ভুলের জন্য এমন হয়েছে; সেটা বড় বিষয় না। বিষয় হচ্ছে এমন ভুল যদি হয়েও যায়; সেটা ঠিক করার জন্য কোনো সহজ পদ্ধতি কেন থাকবে না?

বিজ্ঞানের ছাত্রী হয়ে পরীক্ষা দিতে হবে মানবিকে

এই ইন্টারনেট, অনলাইন আর ডেটা বেইজের যুগে কেন একটা মেয়েকে ভাবতে হলো- ভুল প্রবেশপত্র পরীক্ষার আগের দিন এসেছে; আমিতো আর পরীক্ষা দিতে পারব না! নিশ্চয়ই আপনাদের সিস্টেমগুলোই এমন- একবার ভুল হলে সেটা ঠিক করতে নানান ঝামেলা হয় কিংবা আদৌ ঠিক করা যায় না। যার কারণে ভুল কিছু আসলে সবাই ভয় পায়।

অথচ ইউরোপে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে এই ধরনের ভুল হলে সেটা ঠিক করতে এক মুহূর্ত লাগে। শুধু আইডি কার্ডটা দেখিয়ে দিলেই কাজ হয়ে যায়। সব ঠিক করে ফেলে মুহূর্তেই। আপনারা যে এত ডিজিটাল, ডিজিটাল বলে বেড়ান; আপনারা কি আদৌ ডিজিটাল হয়েছেন? আগে মন মানসিকতায় ডিজিটাল হন, এরপর না হয় সত্যি সত্যি ডিজিটাল হওয়া যাবে!

এই যে মেয়েটা আত্মহত্যা করলো, এর দায়ভার আপনাদেরও। আপনাদের সিস্টেমটাই এমন- কোনো কিছু ভুল হলে শুদ্ধ করতে গেলে হাজারটা ঝামেলা! এই মেয়েটা যদি জানত- ভুল হয়েছে তো কী হয়েছে, সহজেই ঘণ্টা খানেক সময়ের মাঝেই শুদ্ধ করে ফেলা যাবে; তাহলে হয়ত সে আত্মহত্যা করতে যেত না। সে মনে করেছে- আমার একটা বছর শেষ হয়ে গেল। আমার বন্ধুরা সবাই পাশ করে ফেলবে আর আমি অন্যের ভুলের জন্য সবার থেকে পিছিয়ে গেলাম।

এই আত্মহত্যার দায়ভার আপনারও

স্কুল ফর্ম পূরণ করা, ভুল হলে শুদ্ধ করা ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়গুলো তো অনলাইনে এক মিনিটে করে ফেলার মতো বিষয়। অথচ আপনারা ইচ্ছে করে এটাকে বিশাল জটিল বিষয় বানিয়ে রেখেছেন! কেন? কারণ জটিল করে রাখলে অন্যদের কাছ থেকে দাম পাওয়া যাবে তো!

একটা উদাহরণ দেই। আমি যখন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, অনেক শিক্ষক এসে কোর্সের প্রথমেই ঘোষণা দিতেন- এটা কিন্তু অনেক জটিল কোর্স। ঠিক মতো পড়তে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর এরা একটা সাধারণ টপিককেও এমন জটিল করে পড়াত যাতে করে কেউ বুঝতে না পারে! ক্লাস শেষেও যেন ছাত্র-ছাত্রীরা তার পেছনে ঘুরে! অর্থাৎ আলাদা একটা দাম পেতে হবে না!

শিক্ষকের কাজ হচ্ছে জটিল বিষয়কে সহজ করে পড়ানো। নইলে শিক্ষকের দরকার কীসের! আর আমাদের শিক্ষকরা পারলে সহজ বিষয়কে জটিল বানিয়ে ফেলে। আর এইসব জটিল সমীকরণ মেলাতে না পেরে অনেকেই এই মেয়েটার মতো হারিয়ে যায়।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা