আমরা সিনেমায় এমন ঘটনা ঘটতে দেখি। নায়ক যেভাবে একাই সব সমস্যার সমাধান করে দেন। ঠিক সেভাবেই সোইনুদ্দীন মিয়া এক কান্ড ঘটালেন...  

মানুষ মানুষকে ভালোবেসে কতকিছুই না করেছে পৃথিবীতে। ভারতের বিহারের দশরথ মাঝি যেমন পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়েছিলেন যাতে গ্রামবাসীরা দুর্গম পথের কারণে তার স্ত্রীর মতন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়। টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার চকগগাধর গ্রামের সোইনুদ্দীন মিয়া অনেকটা এমন কাজই করেছেন। 

সৌইনুদ্দিনের গ্রামে হেঁটে চলার কোনও রাস্তা ছিলো না। ক্ষেতের আইল ধরে প্রায় দেড়-দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ধুনাইল পাকা রাস্তায় উঠে মানুষকে উপজেলায় যাতায়াত করতে হতো। বর্ষাকালে অবস্থা হতো আরও শোচনীয়। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো। এভাবে পুরো গ্রামবাসী এক প্রকার জিম্মিই ছিলো বলা যায়।

গ্রামবাসী সবাই ভুক্তভোগী হলেও, সোইনুদ্দিন ভাবলেন কেউ সঙ্গে আসুক আর না-ই আসুক রাস্তা তৈরি করতেই হবে। যেই ভাবনা সেই কাজ। প্রায় ৫ বছর আগে একাই নেমে পড়েন রাস্তা নির্মাণে। কাজ শুরুর দিকে, কেউ তো এগিয়ে আসেইনি বরং উপহাস করেছেন। পাগল বলে ক্ষেপিয়েছেন। কাজ বাধাও দিয়েছেন। তবুও দমে যাননি সৌইনুদ্দিন। এই অসম্ভবকে সম্ভব করার পথে সাথে পেয়েছেন জীবনসঙ্গিনীকে, পেয়েছেন সহোদরদের সাহায্যও। 

নিজের তৈরি করা পথে হাঁটছেন সৌইনুদ্দিন মিয়া

সোইনুদ্দিন পেশায় একজন কৃষক। কৃষিকাজের পাশাপাশি, গবাদিপশু পালন করেন তিনি। এছাড়া গৃহস্থালীর কাজ তো রয়েছেই। এতো ব্যবস্ততার মাঝে সারারাত জেগে রাস্তা নির্মাণের কাজ করেছেন। দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনি, রাতভর গ্রামের পথ তৈরি। রাত কাটে, ভোর হয়। এভাবেই পাঁচ বছর কেটে গেলো। একদিন গ্রামের বুক চিরে দেৌখা দিলো রাস্তা। সোইনুদ্দীনের মাটির রাস্তা!

তিনি যখন রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন বাধা দিয়েছিলেন জমির মালিকেরা। কেউই তাদের জমি থেকে জায়গা ছেড়ে দিতে চাননি। হাতে পায়ে ধরে রাজি করানো হয় তাদের। এই রাস্তা হলে সবারই যে উপকার হবে সেই কথাও বোঝানো হয় সবাইকে। প্রথমে রাজি না হলেও আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করেন সবাই। এভাবেই শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করেন সৌইনুদ্দিন।

দশরথ মাঝি দীর্ঘ ২২ বছর ধরে পরিশ্রম করে, ২৫ ফুট উঁচু পাহাড়ের অংশ কেটে ৩৬০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট চওড়া একটি পথ তৈরি করেছিলেন। আমাদের সৌইনুদ্দিন মিয়া ৫ বছর ধরে ক্ষেতের আইল কেটে দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করেছেন। তার কেবল এখন একটাই চাওয়া, সরকারের তরফ থেকে যেন রাস্তাটি পাকা করে দেয়া হয়। নতুবা পরবর্তী বর্ষায় রাস্তাটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাটির রাস্তাগুলো এমনিতেই ভেঙেচুরে যায় বর্ষাকালে। 

মানুষটা কোনোরকম বড়সড় সাহায্য ছাড়াই একটা রাস্তা বানিয়ে ফেললেন। একটা গ্রামে কত মানুষ কেউ এগিয়ে আসলেন না, তাদেরকেও বুঝিয়ে বুঝিয়ে রাস্তাটা বানানো লাগলো। এখন সরকারকে বুঝিয়ে সেই রাস্তা পাকা করাতে হবে। সব দায় যেন একা তারই। এমন মানুষগুলোর জন্য বলতে বাধ্য হই- যতদিন সোইনুদ্দীনদের হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।  

কৃতজ্ঞতাঃ বাংলা ট্রিবিউন, ডেইলি স্টার 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা