ঘুমের আগে হাঁটা ভালো, ঘুমের পরেও হাঁটা ভালো। তবে ঘুমের মাঝে হাঁটলে তা নিশ্চিতভাবেই একটা সমস্যা! তাই বলে চিন্তার সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়ার কারণ নেই! সমস্যা হলেও তা নিরাময়যোগ্যই।

রাতে ঘুমের মধ্যে হাঁটা ব্যাপারটার সাথে আমাদের কিছুটা পরিচয় আছে হয়তো। কারো কারো পরিবারে এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষ আছে। আবার যাদের পরিবারে নেই, তারা হয়তো কোনো সিনেমাতে এইরকম দৃশ্য দেখে থাকতে পারেন। আমাদের সমাজে কোন কোন এলাকায় একে বলে “বোবায় ধরা”। যদিও এটি নিরাময়যোগ্য অসুখ, তারপরও কুসংস্কারের কারণে অনেক সময় অনেক ক্ষতি হয়, লোকজন যে জ্বিন-ভুতের আছর মনে করে একে! 

এই সমস্যা তৈরি হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ ঘুমের স্বল্পতা। আধুনিক মানুষের জীবনযাত্রার কারণে ঘুমের সময় কমে আসছে, ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে নানান সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যেমন ব্রিটিশদের মধ্যে চালানো একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে, তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে যে তাদের পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। ৩৭ শতাংশের অভিযোগ, সারা রাত চোখ বন্ধ করে রাখার পরও তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম হয় না।

সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, তারা গড়ে ৭.৭ ঘন্টা ঘুমানোর চিন্তা করে, কিন্তু ঘুমাতে পারে মাত্র ৬.৮ ঘন্টা। এই ঘুমের স্বল্পতা নানা সমস্যার তৈরি করে যেমন-মনোযোগের সমস্যা এবং মানসিক চাপ। অনিয়মিত ঘুমের ফলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দেখা দিতে পারে, যার ফলে ঘুমের মধ্যে হাঁটার অভ্যাস তৈরি হতে পারে।

ঘুমের মধ্যে হাঁটা দুই রকমের হতে পারে- তীব্র ও মৃদু। মৃদু হাঁটার ক্ষেত্রে হয়ত হাঁটা শুরু করার পরই টের পাওয়া যায় এবং রোগী বিভ্রান্ত হয়ে যায়। তীব্র ক্ষেত্রগুলোতে অনেক সময় দেখা যায় রোগী রান্না করা বা গাড়ি চালানোর চেষ্টা করে। 

কেউ ঘুমের মধ্যে হাঁটার চেষ্টা করলে কী করবেন?  

  • প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে রোগী নিরাপদ জায়গায় আছে কিনা।
  • আস্তে করে তাকে বিছানায় ফেরত পাঠাতে হবে।
  • কখনো কখনো তাকে বিছানায় পাঠানোর আগে কিছুক্ষণ হাঁটতে দিলে পরবর্তীতে আবার হাঁটা কমে আসে। 

যা করা যাবে না 

  • তাদের সাথে চিৎকার-চেচামেচি করা যাবে না। 
  • তাদেরকে ধাক্কা দেয়া যাবে না। এমন আচরণ করলে হয়ত তারা সাহায্যকারীর ক্ষতি করে ফেলতে পারে অথবা নিজেরও ক্ষতি করতে পারে। 

আরো কিছু ব্যাপার জেনে রাখা যেতে পারে 

  • ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করা লোকজন জেগে উঠার পর তা ভুলে গেলেও অল্প কিছু লোকে তা মনে রাখতে পারে। এই সময় আসলে মানুষের অর্ধেক অংশ জেগে থাকে আবার অর্ধেক ঘুমায়, ফলে কারো কারো পক্ষে সম্ভব হয় মনে রাখা।
  • ঘুমের মধ্যে হাঁটা ব্যাপারটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটে না, কোনো না কোনো কারণ থাকে। রোগীদের মধ্যে হাঁটার বা অন্য কোনো কাজ করার মানসিক তাগিদ থাকে, যা সেই সময় যুক্তিযুক্ত মনে হয়।
  • এই রোগে আক্রান্ত লোকেদের অনেক ক্ষেত্রে দিনে ঘুম ঘুম ভাব থাকে। 
  • ঘুমের মধ্যে হাঁটার প্রকোপ সাধারণত ৬ থেকে ১২ বছর বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, বেশির ভাগেরই বয়সের সাথে সাথে ঠিক হয়ে গেলেও প্রায় ২৫ শতাংশ বাচ্চার এটা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও থেকে যায়। 
  • ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে এই ব্যাপারটির মূল কারণ বংশগত। 
  • এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরে অনিদ্রা, খিটখিটে মেজাজ, বিষণ্নতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

ঘুমের আগে হাঁটা ভালো, ঘুমের পরেও হাঁটা ভালো। তবে ঘুমের মাঝে হাঁটলে তা নিশ্চিতভাবেই একটা সমস্যা! তাই বলে চিন্তার সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়ার কারণ নেই। সমস্যা হলেও তা অবশ্যই নিরাময়যোগ্য। তাই কেউ এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে ওঝা/কবিরাজের কাছে না গিয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নিন। 

(তথ্যসূত্র- www.healthcentral.com)

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা