সেলিব্রেটি হওয়াটা কঠিন, তার চেয়ে বেশি কঠিন বিবেকসম্পন্ন মানুষ হওয়াটা
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
শিশির, আপনার পছন্দ অপছন্দের ধার ধেরে আমাদের প্রতিবাদ লড়াই চলবে না। আমরা যুদ্ধ করছি সুন্দর একটা ভবিষ্যতের জন্য। সেই যুদ্ধে আপনাকেও শামিল হবার আমন্ত্রণ রইলো...
শিশির তো নতুন কিছু করেন নাই। উনার যা করার কথা সেটাই উনি করেছেন। সাকিবকে বিবাহ করার পর থেকেই উনাকে দেখছি কঠিন স্টারডম সিন্ড্রোমে ভুগতে, সেই স্টারডম থেকে উনি কোনদিন বের হইতে পারেন নাই। সেই কঠিন সেলেব্রিটি ইমেজের আড়ালে উনি নিজেও খেয়াল করেন নাই যে উনি নিজে আসলে কোন সেলেব্রিটি নন, পুরোটাই উনার স্বামীর ইমেজ। উনি নিজের জন্য স্বামীর নামের বাইরে আলাদা কোন পরিচয়ই তৈরি করতে পারেন নাই। তবু সাকিবের চেয়ে তার সেলেব্রিটিত্বের গৌরবই আমাদের বেশি চোখে পড়েছে। সাকিব কিছু বলার আগেই উনি লাফ দিয়ে পড়েছেন সামনে।
তা পড়েন, আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু যখন আমরা একটা জটিল নোংরা সামাজিক সমস্যাকে চিহ্নিত করে সমবেত প্রতিবাদ করছি, যখন এর স্থায়ী সমাধান চেয়ে আইন শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, চাপ প্রয়োগ করছি, তখন উনি এসে পুরো ইস্যুটাকে ব্যক্তিগত ইস্যুতে রূপ দিয়ে যে চূড়ান্ত স্বার্থপরতা আর আত্মকেন্দ্রীক চরিত্রের পরিচয় দিলেন, তা দেখে আমরা পুরাপুরি *দনাই হয়ে গেলাম আরকি!
জিন্দেগিতে এই দেশের কোন সেলেব্রিটি, কোন নাট্যজন, কোন কবি, কোন সাহিত্যিক, কোন ক্রিকেটার, কোন ফুটবলার, কোন গায়ক গায়িকাকে দেখলাম না কোন একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ জোর গলায় করেছেন। চারিদিকে হাজার হাজার সামাজিক সমস্যা- তাদের চোখের সামনেই ঘটছে। গণপিটুনি দিয়ে মানুষ মারা হচ্ছে, শিশু হত্যা হচ্ছে, শিশু ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, চিকিৎসার নামে দুর্নীতি, মৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনা- কি না! কখনও দেখেছেন, কোন একজন সেলেব্রিটি এসব নিয়ে দুইটা কথা উঁচু গলায় বলেছেন?
যখন নুসরাতকে পোড়ানো হয়েছে ফেনিতে, বদরুল যখন খাদিজাকে কুপিয়েছে সিলেটে, যখন রক্তাত্ত তনুর লাশ পড়ে ছিল ধানক্ষেতে, যখন স্কুলের সামনে গণপিটুনি দিয়ে মারা হয়েছে কোন মাকে, যখন রাকিব কি রাজনকে পায়ুপথে গ্যাস ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়েছে- জীবনে কোনদিন কোন সেলেব্রিটি এসে প্রতিবাদে মুখর হয় নাই। কোনদিন একজোট হয়ে প্রতিবাদ জানায় নাই। কোনদিন কোনো চাপ সৃষ্টি করে নাই কর্তৃপক্ষ বরাবর। দেশে দিনের পর দিন এইসব যখন ঘটেছে তখন তারা তাদের ফেসবুক কিংবা ইন্সটাগ্রামে গ্ল্যামারাস ছবি পোস্ট করেছেন, নয়তো তাদের নতুন গানের অ্যালবামের পাবলিসিটি করেছেন, নয়তো নিজেরা কত কত কৃতিত্ব ফলাচ্ছেন সেই পোস্ট লিখে ভরিয়েছেন। এই শিশিরকে কোনদিন দেখেছেন কোন একটা অন্যায়ে প্রতিবাদী হতে?
না তিনি হন নাই। তিনি নিজের সেলেব্রিটি জীবনসঙ্গীর কৃতিত্বে আর গৌরবে পাগলপারা ছিলেন, এখনও আছেন। আছেন বলেই আলাইনাকে করা কুৎসিত মন্তব্যগুলো আজকে উনার ব্যক্তিগত হয়ে গেছে। উনি এগুলারে ধর্তব্যে নেন না। উল্টা যারা প্রতিবাদ করেছেন, উনি তাদের উপর বিরক্ত, ক্ষুব্ধ। উনি বুঝতে পারছেন না, কেন এত প্রতিবাদ হচ্ছে!
একজন সেলেব্রিটি পরিবার যখন এই জাতীয় চরম স্বার্থপর, জঘন্য আত্মকেন্দ্রিক মন্তব্য করে সমস্ত প্রতিবাদী সচেতন মানুষের মুখের উপর আস্ত একটা জুতার বাড়ি মেরে দেন, তখন সেই সেলেব্রিটিকে নিয়া যে জাতি নাচন কুদন করে, সেই জাতির মুখ ভরেই আসলে মল ঢেলে দেয়া উচিত।
আমার সন্তানকে নিয়ে, আমাকে নিয়ে যখন সাইবার বুলিয়িং হয়েছে, তখন কিছু সত্যি মানুষ, সাহসী মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন। তারা সংখ্যায় অল্প ছিলেন, তবু তাদের জোটবদ্ধ প্রতিবাদ সেইদিন নোংরা লোকগুলোর মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি এখনও তাদের প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি কৃতজ্ঞ কারণ আমি মানুষ। আমি আমার আত্মা বেচে দিই নাই, আমি মানুষ। কারণ আমি এখনও নিজের পরিবারের বাইরেও দেশের মানুষের কথা ভাবতে পারি।
আমি মানুষ, কারণ আমি দুনিয়ার সব শিশুর অপমানকে আমার নিজের শিশুর অপমান বলে ভাবতে শিখেছি। আমি মানুষ, কারণ আমি একটা সুন্দর দেশের স্বপ্ন দেখি, একটা নিরাপদ সুস্থ সুন্দর সময়ের জন্য যুদ্ধ করি। এই লড়াইটা আমি আমার নিজের শিশুর জন্যও করি, আলাইনার জন্যও করি, আবার আমার গৃহকর্মী তাহমিনার মেয়ে আয়েশার জন্যও করি। আমি মানুষ, তাই প্রতিবাদী সুস্থ চিন্তার মানুষকে আমি সহযোদ্ধা মনে করি, তাদের সাধুবাদ দিই।
শিশির, একজন সেলেব্রিটি হওয়া কঠিন। তবে তারচেয়ে কঠিন নিজের একটা পরিচয় তৈরি করা। আর তারো চেয়ে বড় কঠিন কাজ হলো একজন সত্যিকার বিবেকসম্পন্ন মানুষ হয়ে ওঠা। প্রত্যাশা করি, আপনি কোন একদিন সেটি হয়ে উঠবেন। আর হ্যাঁ, আপনার পছন্দ অপছন্দের ধার ধেরে আমাদের প্রতিবাদ লড়াই চলবে না। আমরা যুদ্ধ করছি সুন্দর একটা ভবিষ্যতের জন্য। সেই যুদ্ধে আপনাকেও শামিল হবার আমন্ত্রণ রইলো...
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন