শিপ্রাদের এইসব ছবি তারা শেয়ার দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, ‘মেয়েটি নষ্টা, মদখোর, বিড়িখোড়, ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করতে পারে, সেই মেয়েটি যে ‘খারাপ’ মেয়ে তা প্রমাণের যথেষ্ট চেষ্টা তারা করছেন...

নাদিম মাহমুদ: 

গতকাল পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এক বিবৃতি বলা হয়েছে, সোশাল মিডিয়ায় নানা ‘অপপ্রচার’ চালিয়ে সেনা-পুলিশ মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে।

আজ সকাল থেকে শিপ্রাদের কিছু ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করতে দেখেছি, যাদের সিংহভাগই পুলিশের কর্তা ও সদস্যরা। শিপ্রাদের এইসব ছবি তারা শেয়ার দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, ‘মেয়েটি নষ্টা, মদখোর, বিড়িখোড়, ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করতে পারে, সেই মেয়েটি যে ‘খারাপ’ মেয়ে তা প্রমাণের যথেষ্ট চেষ্টা তারা করছেন।

সিনহা হত্যার সাথে এইসব ছবির সম্পর্ক কী, ওসি প্রদীপ আর লিয়াকতের খুনের তাৎপর্য কি, সেইগুলো তদন্তাধীন হওয়ার কথা থাকলেও অত্যন্ত সু-পরিকল্পিতভাবে যে ছবিগুলো শেয়ার দিয়ে শিপ্রা ও সিফাতদের বিতর্কিত করে ‘ক্রসফায়ার’কে হালাল করার চেষ্টা করছেন, মেয়েটিকে মানসিকভাবে হেনেস্তা করার চেষ্টা করছেন, তা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।

পুলিশের আটকের পর তাদের ল্যাপটপ, ফোন নিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন এইসব ব্যক্তিগত ছবি যদি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া হয়, সেটার দায় দায়িত্ব কে নেবে? ব্যক্তিগত সুরক্ষা যদি না পায়, বরং পুলিশের সদস্যরা সেইসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার দিয়ে তাদের ‘অভিযুক্ত’ সর্তীর্থদের পাপমোচনের চেষ্টা করে, সেটি আদৌও শোভনীয় পর্যায়ে পড়ে না।

আমি নিশ্চিত, যারা এইসব ছবি শেয়ার দিচ্ছেন, তাদের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ঘাঁটাঘাটি করলে এর চেয়ে বেশি ভয়ানক ছবি যে বের হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

ডিজিটাল আইন-২০১৮ তে ১৭ এর (১) স্পষ্ট করে বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে (ক) বে-আইনি প্রবেশ করেন, বা (খ) বে-আইনি প্রবেশের মাধ্যমে উহার ক্ষতিসাধন বা বিনষ্ট বা অকার্যকর করেন অথবা করিবার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

ঠিক এই আইনের প্রতি যদি আপনারা শ্রদ্ধাশীল হোন, তাহলে আজকে এইসব ‘কুরুচির’ পরিচয় দিতেন না। 

ধরুন, শিপ্রা মাদকাসক্ত, তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সে তো জামিনে আছে, উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে তাকে শাস্তি দিন। কিন্তু একজনের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কখনোই রাষ্ট্র সমর্থন করে না। কিন্তু তাকে বির্তকিত করার অভিলাষ কখনোই কাংক্ষিত নয়।

‘ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত’ ব্যক্তিকেন্দ্রিক অপরাধে অভিযুক্ত, এখানে সমগ্র পুলিশকে টেনে আনা যেমন অন্যায়, তেমনি সরকারের অপর এক শৃঙ্খলাবাহিনীর তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে পুলিশ সদস্যেদের এমন ছবি শেয়ার কার্যত পরিপন্থি বটে। এইগুলো যতটা পাবলিক সেন্টিমেন্ট তৈরি করার চেষ্টা করা হয়, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে একটি বাহিনীর।

তাই, দয়া করে এইসব নোংরামি বন্ধ করুন। একটি মেয়েকে বাঁচতে দিন। নাটকের অনেক অবতারণা হয়েছে, দয়া করে রাষ্ট্রের এই শৃঙ্খলাবাহিনীকে নিয়ে মানুষের মনে আর ভ্রান্তি ধারনা নিজেরা তৈরি করা থেকে বিরত থাকুন। আমরা মেজর (অবঃ) সিনহা হত্যাকাণ্ডকে অপরাধ হিসেবেই দেখতে চাই, অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অতিরঞ্জন বন্ধ করি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এইসব বুলিং না করে একটি মেয়েকে বাঁচতে দিন। যে ট্রমা তৈরি হয়েছে, তা নিউট্রালাইজড করার সুযোগ দিন। সচেতন মানুষদের কাছ থেকে অত্যন্ত এইসব নোংরামি আর দেখতে চাই না।

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা