প্রিয়মুখ হিসেবে স্থানীয়দের কাছে তিনি পরিচিত ‘শেরিফ চাচা’ নামেই। হিন্দু-মুসলমান কিংবা জাত-পাতের ধার ধারেন না তিনি। প্রতিটি লাশকেই যথাযথ সম্মানের সাথে সৎকার করেন।

১৯৯২ সালে নিজের ছেলেকে হারান। কে বা কারা তার ছেলেকে খুন করেছিলো জানেন না। শুধু দেখেছেন ছেলের পচা গলা লাশ। সেই দৃশ্য দেখার পর থেকেই সিদ্ধান্ত নেন আরো কোনো লাশকে এভাবে অসম্মানিত হতে দেবেন না। ব্যাস! সেই থেকেই শুরু।  

২৮ বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম মিলিয়ে কমপক্ষে ২৫ হাজার লাশের শেষকৃত্য করেছেন তিনি। ধর্মীয় বিধান মেনে সৎকার করেছেন প্রতিটি লাশের। কবরস্থান বা শ্মশান, হাসপাতাল কিংবা পুলিশ স্টেশন। সবখানে অবাধ যাতায়াত রয়েছে তার। মৃত্যুর ৭২ ঘন্টা পেরিয়ে গেলে যেকোনো বেওয়ারিশ লাশের দায়িত্ব নেন তিনি। প্রতিটি লাশের শেষকৃত্য করতেও লেগে যায় সাড়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার রুপি। এই অর্থটুকুও নিঃস্বার্থভাবে জোগাড় করেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন অনেকেই। তার এই স্বদিচ্ছায় একটি বেওয়ারিশ লাশ খুঁজে পায় শেষ ঠিকানা।

শুধুই মৃত মানুষের সৎকার করেন না, জীবন বাঁচানোর চেষ্টাও রয়েছে তার। আশেপাশে কেউ বিপদে পড়লে এগিয়ে যান। সাধ্যমত সাহায্য করার চেষ্টা করেন। এইতো কিছু দিনে আগেও সড়ক দূর্ঘটনায় মুমুর্ষ অবস্থায় প্রাণে বাঁচিয়েছেন এক ব্যক্তিকে, যার পরিবারের বাকীদের শেষকৃত্যও করেছেন তিনি।  

প্রিয় শরীফ চাচা 

৮২ বছর বয়সী এই পরোপকারী মানুষটির নাম মুহম্মদ শরীফ। বসবাস ভারতের উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদে। পেশায় একজন সাইকেল মেকানিক, নেশায় বেওয়ারিশ লাশের সৎকারক। প্রিয়মুখ হিসেবে স্থানীয়দের কাছে তিনি পরিচিত ‘শেরিফ চাচা’ নামেই। হিন্দু-মুসলমান কিংবা জাত-পাতের ধার ধারেন না তিনি। প্রতিটি লাশকেই যথাযথ সম্মানের সাথে সৎকার করেন।

তার এই নিরলস মানবসেবার জন্যেই এবার পদ্মশ্রী পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন তিনি। এটি সেদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। ২০২০ সালের পদ্মশ্রী প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করতেই উঠে আসে এই অমায়িক মানুষটির নাম। ছেলে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করেছেন যিনি। শুধুমাত্র পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা যাবে না এই মহান মানুষটিকে। তিনি নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তাকে যথাযথ সম্মান করতে হলে তার দেখানো মানবতার দিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে। আজীবন বেওয়ারিশ লাশে সৎকার করা মানুষটি যেন বেওয়ারিশ হিসেবে হারিয়ে না যান সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

শরীফ চাচার মতো মানুষগুলোর মাধ্যমেই মূলত মানবতা আজও বেঁচে আছে। এই মানুষেরাই আমাদের প্রেরণা জোগায়। প্রতিটা মানুষেরই উচিত নিজের অবস্থান থেকে অন্যকে সাহায্য করা। সেটা যেভাবেই হোক না কেন। নিজেদের মধ্যে হানাহানি কখনোই সুফল ডেকে আনে না। ধর্ম, মত, রাজনীতি সবার উর্ধ্বে আমরা মানুষ। আমাদের মূলমন্ত্র হওয়া উচিত মানবতা।

আমাদের দেশেও ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম নামের একটি সংগঠন একই কাজ করে আসছে। আরো পড়ুনঃ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম: বেওয়ারিশ লাশদের অভিভাবক!


ট্যাগঃ

শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা