আহারে বাচ্চাটা, সারাটাজীবন তার বাবার অযুত-নিযুত খুনী পিশাচদের মাঝেই তাকে বাঁচতে হবে, বড় হতে হবে, বড় হয়ে জানবে এরা তার বাবাকে হত্যার পর সেটাকে জায়েজ করতে কোরআন অবমাননার কি জঘন্য অপবাদ দিয়ে নিজেদের নির্দোষ দেখাতে চেয়েছিল!

ছবিতে ফুটফুটে হাস্যজ্জ্বল বাচ্চাটার সাথে যে মানুষটাকে দেখা যাচ্ছে, তার নাম মোহাম্মদ শহীদুন্নবী জুয়েল। রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক তিনি। লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর কেন্দ্রীয় মসজিদে এই মানুষটাকে নামাজের পর পৈশাচিকভাবে পিটিয়ে এবং পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তাকে চরম বর্বরতায় পেটানোর ও তার লাশকে পোড়ানোর সময় মানুষগুলো তাদের স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করছিল।

মানুষগুলো একটা মানুষকে পিটিয়ে খুন করে পুড়িয়ে দিচ্ছিল তাদের স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব উচ্চারণ করতে করতে, স্রষ্টার জন্য এরচেয়ে জঘন্য লজ্জা আর অবমাননা আর কিছু হতে পারে না। মজার ব্যাপারটা হচ্ছে মানুষ পিটিয়ে ও পুড়িয়ে নিজের সৃষ্টিকর্তাকে এতো নোংরাভাবে অপমান ও অবমাননা করবার পরেও এই ঘটনাকে "ধর্মানুভূতি অবমাননা" শাস্তি হিসেবে ইনিয়েবিনিয়ে বা জোরগলায় সমর্থন দেবার মত অসংখ্য মানুষ রয়েছে আপনার আমার চারপাশেই, এরা প্রত্যেকেই একেকজন নরপিশাচ, সুযোগ পেলে এরা আপনাকেও তার স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে করতে ঠিক এইভাবে পিটিয়ে কুপিয়ে জবাই করে পুড়িয়ে মারবে এবং তখন এদের মতই আরো অসংখ্যজন সেটাকে সমর্থন দেবে। এভাবেই চলতে থাকবে যতদিন না আমরা একেবারে নিকেশ হয়ে যাবো। এরাই আজ সংখ্যাগরিষ্ঠ।

'ধর্ম অবমাননা'র দায়ে এই লোকটিকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে! 

এদের আমরাই ধর্মের নামে যা খুশি করার সাহস দিয়েছি,শক্তি যুগিয়েছি। যখন ধর্মানুভূতিতে আঘাতের জবাব হিসেবে একের পর এক জবাই আর কোপানো হচ্ছিল, তখন আমাদের নীরবতা এবং "অনুভূতিতে আঘাত দেয়া ঠিক না" সংক্রান্ত তোয়ালে এদের চাপাতির রক্ত মুছে দিয়েছে, চাপাতিকে শাণিত করেছে, বুকে বল এনে দিয়েছে। এদের হাতের রক্ত যত্ন করে মুছে দিয়েছি আমরাই।

ছবিটা স্তব্ধ করে দিয়েছে। আহারে বাচ্চাটা, সারাটাজীবন তার বাবার অযুত-নিযুত খুনী পিশাচদের মাঝেই তাকে বাঁচতে হবে, বড় হতে হবে, বড় হয়ে জানবে এরা তার বাবাকে হত্যার পর সেটাকে জায়েজ করতে কোরআন অবমাননার কি জঘন্য অপবাদ দিয়ে নিজেদের নির্দোষ দেখাতে চেয়েছিল! আর চারপাশের অজস্র মানুষ কি অবলীলায় খুনীদের সেই অজুহাত প্রচার করে তাদের হাতের রক্ত ধুয়ে দিয়েছে। কি নোংরা দুর্ভাগ্য বাচ্চাটার!

আসেন, এবার মসজিদে ঢুকে নামাজের পর হঠাৎ "বইয়ের তাকে অস্ত্র আছে" তাই তল্লাশী চালানোর নামে কোরআন ফেলে দিয়ে অবমাননার গাজাখুরী গল্প শুনি আপনার কাছ থেকে, দেখি কত নিখুঁতভাবে খুনীর হাতের রক্ত মুছতে পারেন আপনি! যত খুনই হোক না কেন, যত মানুষকেই ধর্ম ব্যবহার করে স্রষ্টার নামে মেরে ফেলা হোক না কেন, আপনার ঘাড়ে কোপ পড়ার আগ অব্দি বা পিটিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলার আগ পর্যন্ত আপনাকে তো খুনটা জায়েজ করতেই হবে, তোয়ালে দিয়ে খুনীর হাতের রক্ত মুছতে হবেই, তাই না?

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা