সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে খুব সুন্দর একটি লেক আছে। যাকে ইদানীং লোকজন নীলাদ্রি লেক নামে ডাকে। যদিও লেকটির আসল নাম "শহীদ সিরাজ লেক"।

গত মাসে একজনকে নামটি শুধরিয়ে দেয়ার পর- উনি শুধরে নিয়েছেন। কিন্তু কমেন্টে  আসা অপরিচিত আরেকজনের কথায় ভাবার্থ যা বুঝলাম, শহীদ সিরাজের নামটি অন্য কোথাও হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের নামেই সব স্থাপনা হইতে হবে এমন কথা নাই। আর লেকের নাম হিসেবে নীলাদ্রি-ই অনেক জুতসই। সবশেষে ভাবনাটা এমন, শহীদ সিরাজ থাকতে পারে, তবে নীলাদ্রি নামটাও বাদ দেয়া উচিত নয়। 

তর্ক বাড়াই নাই। প্রজন্মের কারও কাছে সিরাজ নামটি বোধহয় ক্ষ্যাত। হয়তো এমন ধারণা, সিরাজের সাথে নীলাদ্রি বোধহয় মাধূর্য্য যোগ করে নামটিকে জাতে তোলে। তাও রক্ষে, ওই এলাকার জেলা প্রশাসক তো এর নাম দিয়েছিল- 'ডিসি নীলাদ্রি লেক'!

সুনামগঞ্জের শহীদ সিরাজ লেক

যাই হোক, সেই বিদেশী ভার্সিটি পড়ুয়া আপুর তর্ক এই পোস্টের উপলক্ষ্য না। শহীদ সিরাজের নাম ভাবনায় এলো আরেক কারণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে চাওয়া এক ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে। স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনে মেয়েটির মর্মান্তিক মৃত্যু হলো। আর একদল শ্বাপদ পশু কমেন্টবক্সে বলছে- মেয়েদের এত পড়ালেখার কি দরকার। স্বামীর অবাধ্য নারী, হ্যান ত্যান বিবিধ নোংরা আলাপ।

এজন্যই শহিদ সিরাজুল ইসলামের চিঠি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেন। মৃত্যুর  আগে লেখা জীবনের শেষ চিঠিতে শহিদ সিরাজ বাবাকে লিখেছেন তার দুই বোনের কথা। লিখেছেন- "আর আমার জন্য চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনার দুই মেয়েকে পুরুষের মত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন। তবেই আপনার সাধ মিটে যাবে"।

শহীদ সিরাজ

সিরাজ ছিলেন আমার কলেজ গুরুদয়াল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র।  যৌবনে কলেজ পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। আর বাবাকে মৃত্যুর আগেও লিখেছিলেন 'তার দুই বোনকে যেন "পুরুষের মতো" শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা হয়'। আজ থেকে ৫০ বছর আগে আমাদের শরীর থেকে দাসজীবনের ক্ষত সারাতে আমাদের যে সূর্যসন্তানেরা রক্তস্নাত মৃত্যু বেছে নিয়েছিলেন, তাদের কি আদর্শ ছিল! আর উনাদের রক্তের দামে কেনা স্বাধীন আলো আবহাওয়ায় বেড়ে উঠা এক গোটা প্রজন্ম কত অবলীলায় নারী শিক্ষা, নারী সমানাধিকারকে তুচ্ছজ্ঞান করে! 

শহীদ সিরাজরা তো মুছে যাবেনই। উনাদের আদর্শ, উনাদের ওসিয়তকে তুচ্ছজ্ঞান করা জাতি; উনাদের নাম নিশানা পাল্টাতে চাইবে, এ আর নতুন কি!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা