ডাক্তার দেভিন্দার শর্মা: পঞ্চাশটি লাশের পর গোনাই ছেড়ে দিয়েছিলেন যে সিরিয়াল কিলার!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
একশোটিরও বেশি খুন, খুনের পর লাশ কুমীরভরা খালে ফেলে দেয়া, একশোরও বেশি কিডনি পাচার করার যে গল্প এই লোকটির তা জটিল ও অদ্ভুত। হতে চেয়েছিলেন ডাক্তার। কিন্তু সেখান থেকে কেন রক্তের স্বাদ পেয়ে হয়ে গেলেন সিরিয়াল কিলার, সে গল্প হার মানাবে থ্রিলার উপন্যাসকেও...
আমাদের চারপাশে অজস্র প্রকারের মানুষ। মানুষের প্রকারভেদের কারণেই এই প্রানীগোষ্ঠী অনেকটাই বৈচিত্র্যময়। কিন্তু মানবজাতির মধ্যে কিছু কিছু প্রকার এমন রয়েছে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এরকম মানুষ না থাকলেই ভালো হতো। এবং এসব মানুষের গল্পগুলোও এতটাই থ্রিলিং হয় যে, না শুনলে ঠিক বোঝা যায়না তীব্রতার মাত্রা। আজকের কথাবার্তা এমন একজনকে নিয়ে যিনি পেশায় ডাক্তার, নেশায় সিরিয়াল কিলার। না, বাইশে শ্রাবণের সেই সিরিয়াল কিলারের মতন প্যাশনেট সিরিয়াল কিলার না তিনি, লাশের পাশে কবিতার লাইনও পাওয়া যায়না। এই সিরিয়াল কিলার কাউকে খুনের পর লাশের অস্তিত্বেও বিশ্বাসী না। অদ্ভুত তার গল্পটা। সেটাই শোনা যাক বরং।
সময়টা আশির দশক। ভারতের বিহার থেকে ডাক্তারি পাশ করেন দেভেন্দার শর্মা নামের তরুন। কিন্তু বিহারে ডাক্তারি করে সুবিধে হচ্ছিলোনা। ঠিক জমছিলোনা কিছুই। তখন তিনি চলে যান রাজস্থানে। সেখানেও ঠিক সুবিধে করতে না পেরে পেশা পরিবর্তন করেন। এরপরে শুরু করেন রান্নার গ্যাসের এজেন্সির ব্যবসা। এই ব্যবসার পেছনে তিনি এগারো লাখ টাকার মত খরচ করলেও শেষে গিয়ে ব্যবসাটা আর করা হয়ে ওঠেনা। ব্যবসার বাকি পার্টনাররা তাকে একরকম ব্যবহার করেই ত্যাগ করে। তখন হাতের পাঁচও শেষ লোকটির। কপর্দকশূন্য হয়ে একরকম দিশেহারা অবস্থাতেই তিনি পা বাড়ান এই অন্ধকার জগতে।
জাল গ্যাস এজেন্সি খোলেন। গ্যাস ভর্তি ট্রাকের ড্রাইভারকে খুন করে লাশ ফেলে দিতেন কুমীরভরা একটা খালে। লাশের অস্তিত্বও আর থাকতোনা। ৩০-৪০ জন ট্রাক ড্রাইভারকে এভাবেই তিনি হত্যা করেছেন। এছাড়াও গাড়িভাড়া করে চালককে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে খুন করে লাশ নিয়ে আসতেন আবার সেই একই জায়গায়, সেই কুমীরভরা খালে। আবার ফেলে দিতেন লাশ। কুমীরের খাদ্য হয়ে লাশের অস্তিত্বও লোপাট হয়ে যেতো একেবারে। এছাড়াও রাজস্থানে কিডনি পাচারচক্রের সাথেও জড়িত ছিলেন। এযাবত ১২৫টি কিডনি পাচার করেছেন। প্রতিটি কিডনির জন্যে পেতেন ৫-৭ লাখ টাকা। নিজেই অপারেশন করে কিডনি গুলোকে অপসারণ করতেন তিনি ও তার টীম।
রক্ত তাকে আলাদা তৃপ্তি দিতো। কিছু খুন করতেন টাকার জন্যে। আবার কিছু খুন করতেন নিজের আনন্দের জন্যে। কয়টা খুন করেছেন, ধরা পড়ার পরে পুলিশের এরকম প্রশ্নের জবাবে নিষ্পৃহ গলায় নিজেই বলেন-
জানিনা। পঞ্চাশটার পরে গোনাই ছেড়ে দিয়েছিলাম।
বেশ কয়েকটি খুন, কিডনি পাচার ও জালিয়াতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাভোগ করছিলেন রাজস্থানে। সেখান থেকে কিছুদিন আগে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে পালানোর চেষ্টাও করেছিলেন। জালিয়াতি করে দিল্লির একটা বাড়ি বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। সেখান থেকেই দিল্লি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
৬২ বছর বয়সের দেভেন্দার শর্মাকে দেখতে একেবারেই মধ্যবয়স্ক মধ্যবিত্তের মতন। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, মুখজোড়া গোফ, গোলগাল মুখের এই লোকটি যে এতটা নৃশংস, তা ঠাহর করা আসলেই কষ্টের বিষয়। এবং এরকম সময়গুলোতে সেই আগের কথাটিই আবার মনে হয়-
সত্যি মানুষ বড্ড অদ্ভুত!
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন