সের্গেই-আলেকজান্দ্রা দম্পতি: ভালোবেসে যারা বিলিওনিয়ার থেকে দেউলিয়া হয়েছেন!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

রাশিয়ার ধনকুবের সার্গেই পুগাচেভের সাথে খুব নিকট সম্পর্ক ছিলো ভ্লাদিমির পুতিনের। যখন সার্গেই ভালোবেসে বিয়ে করলেন ব্রিটিশ নারী আলেকজান্দ্রা টলস্টয়কে, সেটা মানতে পারেননি পুতিন। ক্ষমতাবান এই শাসকের রোষানলে পড়ে একে একে সব খোয়ালেন এই দম্পতি। শেষমেশ নষ্ট হলো তাদের সম্পর্কও!
কলকাতার সিনেমা 'সোয়েটার' হয়তো অনেকেই দেখেছেন। যদি নাও দেখে থাকেন, সমস্যা নেই। সে সিনেমার লগ্নজিতার গলায় জনপ্রিয় হওয়া গান 'প্রেমে পড়া বারণ' বোধকরি আপনারা অনেকেই শুনেছেন। এই গানেরই সার্থক উদাহরন যেন আমরা লক্ষ্য করি রাশিয়ান ধনকুবের সের্গেও পুগাচেভের ক্ষেত্রে। পুগাচেভের যে গল্পে প্রেম আছে, ভালোবাসা আছে, রাজনীতি আছে, সব খুইয়ে বিপর্যস্ত হয়ে রাস্তায় নামা আছে... আছে অনেককিছুই। চলুন জানা যাক সে রোমাঞ্চকর প্রেমের গল্পই।
এ গল্পে তিনজন প্রধান কুশীলব। দুইজনের পরিচয় এখনই দিচ্ছি৷ তৃতীয়জনের পরিচয় যথাস্থানে দেবো। গল্পের প্রথম কুশীলবের কথা আগেই বলেছি- সের্গেই পুগাচেভ। যিনি রাশিয়ার অঢেল বিত্তবান একজন মানুষ। কয়লা খনি, শিপইয়ার্ডস সহ রাশিয়ার একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বেসরকারি ব্যাঙ্কের মালিকানাও তার। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রয়োজনে সরকারকে ঋণও দেয় তার ব্যাঙ্ক। দ্বিতীয় কুশীলব- আলেকজান্দ্রা টলস্টয়৷ পদবী 'টলস্টয়' দেখে হয়তো অনেকেই ভাবছেন- লেখক লিও টলস্টয়ের সাথে সম্পর্ক আছে কী না আলেকজান্দ্রার। উত্তর হচ্ছে- আছে৷ লিও টলস্টয়ের লতায়-পাতায় আত্মীয় হচ্ছেন আলেকজান্দ্রা। এই আলেকজান্দ্রা যখন তার প্রথম বিয়ে থেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন নিজেকে, তখনই তার সাথে দৈবক্রমে পরিচয় সের্গেই পুগাচেভের। পরিচয় থেকে প্রেম। প্রেম থেকে বিয়ে।
এবং অঘটন শুরু তারপরেই।
বিয়ের পরের জীবন সিনেমার চেয়েও দুর্দান্ত কাটছিলো তাদের।ব্যাটেরসিতে প্রাসাদোপম অট্টালিকা, হার্টফোর্ডশায়ারের বাড়ি, ক্যারিবীয় অঞ্চলের বাড়ি ছাড়াও ছিলো সার্গেই'র অঢেল টাকা। যা খুশি তা-ই করতে পারতেন তারা। সুখের এক জীবন কাটালেনও তারা কয়েক বছর। কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই সে সুখের জীবন কেটে যায় তাদের৷ গল্পে যুক্ত হন তৃতীয় কুশীলব- ভ্লাদিমার পুতিন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
সের্গেও'র সাথে বেশ গাঢ় বন্ধুত্বের সম্পর্কই ছিলো পুতিনের। পুতিনের প্রশাসনকে মাঝেমধ্যেই টাকা ধার দিতো সের্গেই'র মালিকাধীন ব্যাঙ্ক। অনেকে সের্গেই'কে 'পুতিনের ব্যাঙ্কার' বলে হাসিঠাট্টাও করতো। যদিও সে হাসিঠাট্টা তাদের বন্ধুত্বতে খুব বেশি ফাটল ধরাতে পারেনি৷ কিন্তু বন্ধুত্বে ফাটল ধরালো সের্গেরই সহধর্মিনী আলেকজান্দ্রা। আলেকজান্দ্রার সাথে সের্গেই'র বিয়েকে ভালো চোখে দেখলেন না পুতিন। সের্গেই কেন একজন ব্রিটিশকে বিয়ে করলেন, সে নিয়েও বেশ উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও করলেন তিনি সের্গেইর সাথে।

এরপর ২০০৬ সালে রাশিয়ায় একটি আইন পাশ হয়। যে আইনে বলা হয়- রাশিয়ান গোয়েন্দারা চাইলে বিদেশি রাষ্ট্রের শত্রুদের মারতে পারবেন। সের্গেই বুঝতে পারেন, এ আইনের বলি হতে পারে তার স্ত্রীও। আস্তে আস্তে সব যখন গুটিয়ে নেবেন ভাবছেন, তখনই সের্গেই'র সম্পদের উপর একের পর এক রাষ্ট্রীয় বাধানিষেধ আসা শুরু হয়। নানা অভিযোগ আসা শুরু হয় সের্গেই'র মালিকাধীন নানা প্রতিষ্ঠানের উপর। এদের মধ্যে একটি অভিযোগ ছিলো খুবই মারাত্মক। যেখানে বলা হয়, সের্গেই তার নিজের ব্যাংক থেকে দুইশো কোটি ডলার নিয়ে সরকারকে দেয়ার নাম করে আত্মসাৎ করেছে। যদিও সের্গেই এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন। রাশিয়ার আদালত সের্গেইকে 'দোষী' সাব্যস্ত করেন। সেই সাথে তার মালিকাধীন ব্যাঙ্কটিকেও দেউলিয়া ঘোষণা করেন। সের্গেই বুঝতে পারেন, রাশিয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়া হবেনা তার৷ তিনি পালিয়ে যান লন্ডনে।
এখন ইন্টারপোলের 'ওয়ান্টেড' তালিকাভুক্ত আসামী সে। রাশিয়ায় ফিরলেই তাকে করা হবে গ্রেফতার, এমনভাবে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে সব পরিস্থিতি। জব্দ করা হয়েছে তার সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও। এমনকি পাসপোর্টও। তিনি এরইমধ্যে লন্ডন থেকে কোনোভাবে পালিয়ে গিয়েছেন ফ্রান্সে। এখন সেখানেই আছেন তিনি। যার জন্যে এই টালমাটাল অবস্থা, সেই আলেকজান্দ্রার সাথেও সম্পর্ক ভালো নেই তার। তিনি আলেকজান্দ্রাকে বলেছিলেন- তাদের সন্তানসহ রাশিয়া আসার জন্যে। আলেকজান্দ্রা আসেননি৷।আলেকজান্দ্রা জানিয়ে দিয়েছেন সাফ- তিনি এরকম অপরাধীর মত ভয়ে ভয়ে বাঁচতে পারবেন না। তাই তিনি দূরে থাকছেন সের্গেই থেকে। এভাবেই ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে দুটি মানুষ।

জীবন আসলে তাসের ঘরের মতই ক্ষনস্থায়ী এক বিষয়, সেসাথে অনিশ্চিতও। কখন কী ঘটে যায় এক জীবনে, কেউ তা আগে থেকে ঠাহর করতে পারেন না বলেই, জীবন এরকম রোমাঞ্চকর। তবে জীবনের সেই রোমাঞ্চকর অবয়ব সবসময়েই যে সুখকর হয় না, সেটারই উজ্জ্বল উদাহরণ- সার্গেই ও আলেকজান্দ্রার বর্তমান জীবন। প্রেম থেকেই যে এত কিছু হয়ে যাবে, তা কী তারা ভেবেছিলেন কখনো! যদি ভাবতেন, তাহলে কী কোনোদিন এমন সর্বনাশা প্রেমে পড়তেন তারা?
অবশ্য প্রেম-ভালোবাসা এগুলো কী সমীকরণ মেনে হয়েছেও কোনো কালে!
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন