স্ক্যাম ১৯৯২- দ্য হার্ষাদ মেহতা স্টোরি: এবছরের সেরা ওয়েব সিরিজ?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট

ওপরে উঠতে চাইলে, অনেক বড় হতে চাইলে আপনাকে সিস্টেমের অংশ হয়ে যেতে হবে, নইলে সিস্টেমের পায়ের নীচে থাকতে হবে। সবাই অবশ্য পারেও না এতো উঁচুতে উঠতে। হার্ষাদ পেরেছিল, তার পতনটাও হয়েছে ভয়াবহ...
আমাদের হিউম্যান সাইকোলজি অনেক অদ্ভুত। যদি একটা কিছু বেশি প্রশংসা পায়, একজন মানুষ বেশি জনপ্রিয় হয় তাহলে কেন যেন অনেকেই একটা নেগেটিভ মাইন্ডসেট তৈরি করে রাখে। ভাবে যে- নাহ, আমার পছন্দ হবে না। সেইম জিনিসটাই আমার ও হারশাদ মেহতার ক্ষেত্রে হয়েছে। আমার ক্ষেত্রে হয়েছে এভাবে যে স্ক্যামের হিউজ পজেটিভ রিভিউ দেখে আমার মনে হচ্ছিল যে এতোও ভালো কি সম্ভব নাকি? আমি কোন না কোন খুঁত বের করেই ফেলবো।
তারপর যখন প্রথম দফায় ৪ এপিসোড দেখলাম তখন বিজয়ীর বেশেই ছিলাম যেন। আসলেই তেমন আহামরি মনে হচ্ছিল না। কিন্তু কোন একটা পূর্ণাঙ্গ জিনিস পুরোপুরিভাবে না দেখলে আসলে বিচার করা যায় না। কারণ হোলসাম যে অনুভূতিটা তখন জন্ম নেয় সেটা অল্প একটু বাকি রেখে শেষ করলেও পুরোপুরি আসে না। তাই স্ক্যাম শেষ করার পর আমি বলতেই পারি যে- হ্যাঁ, সবটুকু প্রশংসা এর প্রাপ্য।
আর হারশাদ মেহতার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। আপনি সিস্টেমের অংশ যদি হন, হতে পারেন কোন পলিটিক্যাল পারসোনা তাহলে আপনার জনপ্রিয়তা, অজনপ্রিয়তা অন্তত দক্ষিন এশিয়ার বাস্তবতায় তেমন প্রভাব ফেলে না। কিন্তু আপনি যদি আউটসাইডার হয়ে নিজেকে একেবারে শিখরে নিয়ে যেতে পারেন তাহলে আপনাকে হিড়হিড় করে টেনে নামানো লোকের অভাব হবে না। হারশাদ মেহতা এমনই এক আউটসাইডার। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে যে কীনা স্বপ্ন দেখেছিল নিজেকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যাবে।

না, সিরিজে যেমন হারশাদ মেহতার গল্পকে গ্লোরিফাই করে দেখানো হয়েছে আমি সেভাবে গ্লোরিফাই করছি না। তিনি যেটা করেছেন অবশ্যই স্ক্যাম, অবশ্যই ফ্রড যতটুকু যা পড়েছি, জেনেছি, দেখেছি। কিন্তু সমস্যা হল পুরো সিস্টেমটাই এমনভাবে তৈরি যে উপরে উঠতে চাইলে এভাবেই উঠতে হয়। হয় ওঠা যাবে নাহলে পিষে যাবে। পিষে যেতে কেউ চায় না দেখেই উঠতে হয়। এতোটাই উঁচুতে যে পড়ে গেলে আর বাঁচার কোন উপায় থাকে না। হারশাদ মেহতাও পড়েছেন, সিরিজের শুরুতে টাইটেল ট্র্যাকেও দেখা যায় যে হারশাদ বিশাল এক বিল্ডিং এর উপর থেকে পড়ছেন। আদতেও তাই হয়েছিল। যাই হোক, হারশাদের জীবন নিয়ে বেশি না লিখি। কথা বলা যাক সিরিজ নিয়ে। সিরিজ নিয়ে কথা বলতে গেলে যে দুটি জিনিসের কথা বলতেই হবে তা হল-
১) প্রতীক গান্ধী
২) বিজিএম
প্রতীক গান্ধীর ইন্টারভিউ দেখছিলাম। ১৫ বছর ধরে থিয়েটার করছেন তিনি। গুজরাটি সিনেমা, দুএকটা বলিউড সিনেমায় ছোট ক্যারেক্টারও কিছু করেছেন। কখনো ভাবেন নি যে এভাবে সবার নজরে চলে আসবেন। বলিউড বা ইন্ডিয়ান মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি যে পজেটিভ দিকে এগুচ্ছে তার বড় একটা প্রমাণ হচ্ছে ওদের ওখানে কাস্টিং এজেন্সিদের সিরিয়াসলি নেয়া শুরু হয়েছে। মুকেশ ছাবড়া, অভিষেক ব্যানার্জি, শানু শর্মা তো এখন প্রচুর পরিচিত। এরা পুরো দেশজুড়ে কাস্টিং করে, অডিশন নেয়। কখনো পরিচালকের চাহিদামতো, কখনো নিজ থেকেই নিয়ে রাখে। তারপর সাজেস্ট, আবার অডিশন, এভাবে পুরো প্রসেস চলে।
এই সিরিজেও মুকেশ ছাবড়ার টিম কাস্টিং এর দায়িত্বে ছিল। পরিচালক হান্সাল মেহতা একটা ফ্রেশ ফেইসই খুঁজছিলেন হারশাদের চরিত্রে। কাস্টিং এজেন্সির পক্ষ থেকে প্রতীক গান্ধীর নাম উঠে এলো। হারশাদের মতো সেও প্রপার গুজরাটি। থিয়েটারের ঝানু অভিনেতা। লুক টেস্ট, অডিশনে এদের সাথে টেকা সম্ভবই না।

প্রতীক গান্ধী হারশাদ মেহতাকে কপি করেন নি, হানসাল মেহতাও সেটা চান নি। হারশাদের বৈশিষ্ট্যগুলোকে নিজের মতো করে ইন্টারপ্রেট করেছেন প্রতীক। না ভয়েস মডুলেশন করেছেন তেমন, নাইবা হারশাদের ছাবি লুকটা আনতে চেষ্টা করেছেন। তার হাতে তার প্রধান অস্ত্র একটাই- অভিনয়। সে অভিনয়ে তিনি দেখিয়েছেন নিজের জাত। কনফিডেন্সের সময় তার ধারেকাছে কেউ যেতে পারে নি এতোটাই অরা ক্যারি করেছেন আবার যখন ভয় পেয়েছেন তখন তার চেয়ে ভালনারেবল কাউকে মনে হয় নি। সিরিজ হিসেবে এই সিরিজকে ২০২০ এর সেরা বলতে গিয়ে তর্কসাপেক্ষে বললেও, প্রতীক গান্ধী এ বছরের সেরা অভিনেতা এটা বলতে আমার কোন দ্বিধা নেই। এরকম পারফর্মেন্স হয়তো আমরা আরও দেখতে পেতাম যদি প্রপার কাস্টিং হতো সবখানেই।
দ্বিতীয় কথা বলতে হয় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের। অচিন্ত নামে একজন এই সিরিজের টাইটেল ট্র্যাকটা তৈরি করেছেন। এতো ক্যাচি ট্র্যাক রিসেন্ট টাইমে আমি শুনিই নি। তার ওপর আমি সাধারণত এখন সিরিজ, মুভি ১.২/১.৩ এক্স স্পিডে দেখি। এতে করে সেটা আরও স্পিডি হয়ে পুরা মাথানষ্ট হবার যোগাড় হয়েছিল। আমি যদি মোবাইলে রিংটোন ইউজ করতাম তাহলে এটাই আমার রিংটোন থাকতো দীর্ঘসময়।
শেষমেশ একটা কথাই বলতে চাই। আমি দেখার সময়ই কাকে যেন বলছিলাম যে- আমি যদি অনেক টাকা কামাই করি, বড়লোক হই, তারপর যদি আরও উপরে উঠতে চাই তাহলে আমাকে উঠতে দেয়া হবে না। হয় আমাকে সিস্টেমের অংশ হয়ে যেতে হবে নাহলে সিস্টেমের পায়ের নীচে থাকতে হবে। সবাই অবশ্য পারেও না এতো উঁচুতে উঠতে। হারশাদ পেরেছিল, পতনও হয়েছে তার ভয়াবহ। ফিন্যান্সিয়াল স্ক্যাম হয়তো ইররেগুলারিটি দেখে টের পাওয়া যায়, সামাজিক স্ক্যামের দীর্ঘ চেইন চাইলেও কেউ ব্রেক করতে পারে না...
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন