খাশোগি হত্যার পর সৌদি প্রিন্স সালমান বেশ চাপে ছিলেন। জেফ বেজোসের মালিকানাধীন ওয়াশিংটন পোস্টের সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচনা ও সাংবাদিক খাশোগি হত্যায় কঠোর প্রতিবেদনগুলোর কারণে সালমান বেজোসের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। সে ক্ষোভ থেকেই এই হ্যাকিং এর জন্ম হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট থেকে একটি বার্তা পেয়েছিলেন আমাজনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেফ বেজোস। এরপরই তার মোবাইল ফোনটি হ্যাক হয়ে যায়। সম্প্রতি, গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এই হ্যাকিং এর সাথে সাথে ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। জামাল খাশোগির মৃত্যুর পর ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে জেফ বেজাসের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, অনলাইন রিটেইল জায়ান্ট আমাজনের প্রতিষ্ঠাতার পাশাপাশি জেফ বেজোস ওয়াশিংটন পোস্টেরও মালিক। দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস তাদের প্রতিবেদনে বলে, তথ্য চুরির ঘটনায় পরিচালিত তদন্তে জানা যায় যুবরাজ সালমানের কাছ থেকে একটি এনক্রিপ্ট করা ভিডিও ফাইল পাওয়ার পর থেকেই ধনকুবের বেজোসের ফোন গোপনে বিশাল পরিমাণ তথ্য বিনিময় শুরু করে। এই ঘটনা নাকি ঘটেছে ২০১৮ সালে।

সৌদি দূতাবাসের করা টুইট 

যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সৌদি দূতাবাস টুইটারে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে এবং এ ঘটনার পুনঃতদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। আমেরিকার ট্যাবলয়েড দ্য ন্যাশনাল ইনকোয়ারার-এ বেজোসের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার পর এসব প্রতিবেদন আসে। জেফ বেজোস এবং তার বান্ধবী ফক্স টেলিভিশনের সাবেক উপস্থাপিকা লরেন স্যানচেজের মধ্যে বিনিময় করা লিখিত বার্তা ফাঁস করার পর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জেফ বেজোস দ্য ন্যাশনাল ইনকোয়ারারের বিরুদ্ধে "অন্যায় দাবী এবং ব্ল্যাকমেইল" করার অভিযোগ তোলেন।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বেজোসের অ্যাকাউন্ট থেকে কোন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তা জানা যায়নি। ২৫ বছর সংসার করার পর বেজোস ও ম্যাকেঞ্জির বিবাহ বিচ্ছেদের এক বছর পরে এ ধরনের তথ্য সামনে এলো। উল্লেখ্য, গত বছর বেজোসের সঙ্গে সাবেক টিভি উপস্থাপিকা লরেন সানচেজের বিবাহবর্হিভূত সম্পর্কের কথা কয়েকটি সিরিজ প্রতিবেদন করে প্রকাশ করে দ্য ন্যাশনাল এনকোয়ারার। বেজোসের পাঠানো অন্তরঙ্গ টেক্সট বার্তার ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনগুলো প্রকাশিত হয়।

বেজোসের ফোন হ্যাকিংয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ সৌদির বিরুদ্ধে এটাই প্রথম নয়। গত বছরের মার্চে আমাজনের প্রতিষ্ঠাতার এক তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন যে, সৌদি আরব হ্যাকের সাথে জড়িত এবং বেজোসের তথ্যে তারা প্রবেশাধিকার পেয়েছে। সেই তদন্তকারীকে বেজোস ভাড়া করেছিলেন এটা খুঁজে দেখতে যে, তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য কিভাবে দ্য ন্যাশনাল ইনকোয়ারারের কাছে ফাঁস হলো। ধারনা করা হচ্ছে, ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যা ধামাচাপা দিতেই হ্যাক করে ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক জেফ বেজোসের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করা হয়।  

উল্লেখ্য, খাশোগি হত্যার পর সৌদি প্রিন্স সালমান বেশ চাপে ছিলেন। এনকোয়ারারের মালিকের সঙ্গে সৌদির ব্যবসায়িক সম্পর্কের পাশাপাশি বেজোসের মালিকানাধীন ওয়াশিংটন পোস্টের সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচনা ও সাংবাদিক খাশোগি হত্যায় কঠোর প্রতিবেদনগুলোর কারণে সালমান বেজোসের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। সে ক্ষোভ থেকেই এই হ্যাকিং এর ঘটনার জন্ম হয়েছে কিনা সেটা সময়েই বলে দেবে। সেই পর্যন্ত সত্য জানার অপেক্ষায় রইলাম!


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা