যে কারণে সৌদি শাসকদের একটি ধন্যবাদ প্রাপ্য!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
সৌদি শাসকদের এবং তাদের অনুগত আলেমদের প্রচুর সমালোচনা করেছি, এবং ভবিষ্যতেও করব, ইনশাআল্লাহ। কিন্তু করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের একটা স্টেপের প্রশংনা না করলে সেটা অন্যায় হবে। সেটা হচ্ছে তাদের উমরাহ বন্ধ করে দেওয়ার মতো, সাময়িকভাবে কাবা চত্বর বন্ধ করে দেওয়ার মতো বোল্ড সিদ্ধান্ত।
লিবিয়াতে প্রথম যে করোনাভাইরাসের রোগী ধরা পড়েছে, সে উমরাহ থেকে ফিরে এসেছিল। আজ তুরস্কও একই অভিযোগ করেছে - উমরাহ থেকে ফিরে আসা একাধিক ব্যক্তির মধ্যে তারা করোনাভাইরাস পেয়েছে। এবং এ সবই ঘটেছে সৌদি আরব সম্ভাব্য সব রকম কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও। এখন চিন্তা করেন, যদি তারা বাংলাদেশীদের মতো আবেগী চিন্তা করত, যদি উমরাহ বন্ধ না করত, যদি মসজিদগুলো খোলা রাখত, তাহলে কী হতে পারত।
প্রথমত, প্রতিদিন হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের দেশে আসত, ভীড়ের মধ্যে একসাথে নামাজ, তাওয়াফ এবং জিয়ারত করে নিজ নিজ দেশে ফেরত যেত। এতো সতর্কতার পরেও এখন সৌদিতে করোনায় আক্রান্ত ১,২০০। মৃতের সংখ্যা যদিও মাত্র ৪ জন। কিন্তু যদি কোনো ব্যবস্থা না নিত, এই এই সংখ্যা হতো অনেক বেশি। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আক্রান্ত রোগীরা সেখানে যেত, তাদের মধ্য থেকে অন্যদের মাঝে ছড়াতো, এরপর সেখান থেকে আরো অনেক দেশে অনেক বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে পড়ত।
দ্বিতীয়ত, সৌদি আরব উমরাহ বন্ধ করায়, কাবা চত্বর খালি করায় বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা একটা শক খেয়েছে সত্য, কিন্তু তাদের প্রাথমিক ট্যাঁবুটা কেটে গেছে। ফলে আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোও মসজিদ বন্ধ করার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে। এবং তাদের আলেমরা, সাধারণ মুসল্লীরা সেটা কষ্ট হলেও মেনে নিয়েছে।
সৌদি আরব যদি উদাহরণ সৃষ্টি না করত, তাহলে এই দেশগুলো এই সিদ্ধান্ত নিতে পারার মতো সাহস করত কিনা, যথেষ্ট সন্দেহ আছে। দেখা যেত স্কুল-কলেজ, বাজার-ঘাট সবই বন্ধ করত, কিন্তু মসজিদ খোলা থাকলে আরো বেশি মানুষ সেখানে একত্রিত হতো, এবং ভাইরাস আরো বেশি ছড়াত।
তৃতীয়ত, চীন থেকে ভাইরাস ছড়ানোর কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই চাইনিজবিরোধী রেসিজম ছড়িয়ে পড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প একে অফিশিয়ালি 'চাইনিজ ভাইরাস' নামে অভিহিত করছে। বিশ্বের অনেক দেশে এশিয়ান চেহারার নাগরিকদেরকে হেনস্থা করার ঘটনা ঘটেছে। সৌদি আরব যদি রেস্ট্রিকশন না দিত, এবং ফলে সৌদি থেকে যদি ভাইরাস অনেকগুলো দেশে ছড়াত, তাহলে আমরা দেখতাম এই রেসিজম আর ইসলামোফোবিয়া কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী।
এখন পর্যন্ত মুসলমান রাষ্ট্রগুলোতে করোনাভাইরাস বেশি ছড়ায়নি। এর পেছনে হয়তো কিছু ভৌগলিক এবং জলবায়ুগত কারণ আছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্র রহমতও আছে, কিন্তু একই সাথে বেশ কিছু বাস্তবসম্মত পদক্ষেপও আছে। এবং এগুলো এমন সিদ্ধান্ত, যা নিতে সাহস লাগে, যেই সাহস বাংলাদেশীদের নাই।
যত দূর জানতে পেরেছি, সৌদি আরব একা একা এই সিদ্ধান্ত নেয়নি। বাংলাদেশের একজন আলেমের বক্তব্য দেখলাম, সিদ্ধান্তের আগে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে তার সাথেও পরামর্শ করা হয়েছে। ধারণা করছি অন্যান্য দেশের প্রধান প্রধান আলেমদের সাথেও যোগাযোগ করা হয়েছে।
এখনও হয়তো স্কেলটা বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু যেসব আলেমরা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে জড়িত ছিলেন, এবং ইউসুফ আল-ক্বারদাওইসহ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত যেসব লীডিং আলেমরা এটাকে সমর্থন দিয়ে এর গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে দিয়েছেন, ইতিহাস নিশ্চয়ই তাদেরকে মনে রাখবে।