বাংলাদেশে তিনি সেই বিরল মানুষদের একজন, যিনি নিজের দায়িত্বটা প্রচন্ড নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। আমরা তাদের ভরসাতেই থাকি, এখনো যে অনেক কাজ বাকী!

ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। তাকে একজন ম্যাজিশিয়ান বললেও ভুল বলা হবে না মনে হয়। যেভাবে একের পর এক সাহসী পদক্ষেপে রীতিমত দেশটাকে উদ্ধারের মিশন তিনি চালিয়ে গিয়েছেন, শুধু ঐ দুঃসাহসিক অভিযানগুলোর জন্য হলেও তাকে আজীবন মনে রাখবে বাঙলার মানুষ। সেই মানুষটাই আজ মহামারি করোনায় আক্রান্ত।

গতরাতে নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সবার কাছে দোয়া ও ক্ষমা চেয়ে নিজের করোনা আক্রান্তের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন তিনি। আক্রান্ত হয়েছেন তার স্ত্রী’ও। ভর্তি আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটে। তবে তার দুই সন্তান সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন নিজেই। আপাতত হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন বলে জানিয়েছেন র‍্যাবের এই বহুল আলোচিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। 

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে নেয়া সাহসী পদক্ষেপের কারণে নিয়মিত আলোচিত মুখ তিনি। সর্বপ্রথম আলোচনায় এসেছিলেন ছয় বছর আগে। ২০১৪ সালে ফার্মগেটে ওভারব্রিজ বাদ দিয়ে যারা সড়কে রাস্তা পারাপার হচ্ছিলেন তাদের নামমাত্র জরিমানা করে সচেতন করার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই থেকে দেশের পরিচিত ও অপরিহার্য নাম হয়ে ওঠেন। সেই থেকেই মূলত শুরু...

মিঃ হাইজিন জীবাণুমুক্ত হাতের প্রতিশ্রুতি

গত বছর পুরোটা জুড়েই একের পর এক চ্যালেঞ্জিং অভিযানে অংশ নেন। তার বহুল আলোচিত ও প্রশংসিত অভিযানসমূহের অন্যতম ছিলো ফকিরাপুল ক্যাসিনোতে অভিযান। এ সময় ১৪২ জনকে বিভিন্ন ক্লাব থেকে আটক করে ভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। উদ্ধার করা হয় ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত অবৈধ ২৫ লাখ টাকা। সেই ক্যাসিনো কান্ডের হোতাদেরও ছেড়ে কথা বলেননি।

আলোচিত যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে আটকসহ অবৈধভাবে উপার্জিত নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং সাথে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর, বিদেশি ডলার, মদ ও অস্ত্র উদ্ধার করেন এই সাহসী মানুষটা।

সারাদেশ যখন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত তখন হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু ও সিবিসি পরীক্ষায় মর্জিমতো ফি আদায় শুরু হয়। সংবেদনশীল এ বিষয়ে অভিযান শুরু করেন। ডেঙ্গু পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি নেয়া এবং টেস্ট না করে প্যাথলজিক্যল রিপোর্ট দেয়ায় চারটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঁচজনকে জেল, ১৮ লাখ টাকা জরিমানা করে দুই প্রতিষ্ঠান সিলগালা করেন। বিপুল পরিমাণে ট্যাক্সবিহীন চোরাই মোবাইল ফোনও আটক করেছেন। দিনের পর দিন, অভিযান চালিয়েছেন। 

এভাবেই নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন এই মানুষটা 

 

ঢাকায় যখন কিশোর অপরাধী ও গ্যাংয়ের দ্বারা হত্যাকাণ্ড, চুরি-ছিনতাই বেড়ে যায় তখন তাদের শনাক্তেও তৎপর হন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৯ কিশোরকে আটক করে ছয় মাসের জন্য কিশোর সংশোধনী কেন্দ্রে পাঠান। তার ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা কেড়ে নিতে দায়ের করা রিটে আবার সমালোচিত। সেসময় আবেগঘন এক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন-  সততা, নিষ্ঠা আর শত চ্যালেঞ্জকে হাসিমুখে আলিঙ্গন করে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করা কি ক্ষমতার অপব্যবহার?

এছাড়া বেশ কিছু ভেজাল বিরোধী অভিযান সফলভাবে পরিচালনা করে দেশবাসীর আশির্বাদে ভেসেছেন। দেশে করোনা সংক্রমণের পরেও হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন না। কোয়ারেন্টিন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ, নকল মাস্ক ও গ্লাভসের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করেন। দেশের কল্যানে জীবন বিলিয়ে দেয়া সেই মানুষটা নিজেই আজ ঝুঁকির মুখে।

শুধুমাত্র এই দেশটার কল্যাণের জন্য রাজপথ থেকে ক্যাসিনো, সবখানেই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে তিনি সেই বিরল মানুষদের একজন, যিনি নিজের দায়িত্বটা প্রচন্ড নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। এই মানুষগুলো থেমে গেলে থেমে যাবে গোটা দেশ। আমরা আপনার মতো ম্যাজিশিয়ানদের ভরসাতেই থাকি, দেশকে নিয়ে স্বপ্ন বোনার সাহস পাই। আপনার সেই ম্যাজিক অব্যাহত থাকবে, এটাই পুরো দেশের মানুষের চাওয়া।  

প্রিয় ম্যজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম ভাই, অনেক উদ্ধার অভিযানে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন আপনি। এবার মহামারি করোনা থেকে নিজেকে উদ্ধার করার পালা। এই যাত্রায় দেশের জন্য হলেও দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন, এখনো যে অনেক কাজ বাকী...   

আরো পড়ুন- 


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা