দুদিন আগে কুয়েতের জুমার নামাজের কিছু আজান ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে "হাইয়া আলাল ফালাহ"-এর পরে বলা হচ্ছে "আসসালাতু ফি বুইয়ুতিকুম"। অর্থাৎ তোমাদের বাড়িতে সালাত আদায় কর।

করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে (যেমন ইরানের কিছু শহরে, কুয়েতে) জুমার নামাজ বাতিল করা হয়েছে। কিছু কিছু দেশে (যেমন আমেরিকার কিছু শহরে, নরওয়েতে) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাতই বাতিল করা হয়েছে।

দুদিন আগে কুয়েতের জুমার নামাজের কিছু আজান ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে "হাইয়া আলাল ফালাহ"-এর পরে বলা হচ্ছে "আসসালাতু ফি বুইয়ুতিকুম"। অর্থাৎ তোমাদের বাড়িতে সালাত আদায় কর।

স্বাভাবিকভাবেই অনেকেই ব্যাপারটা মানতে পারছেন না। বা কমেন্ট করছেন, এরকম জামাতে নামাজ বাতিল করার বা আজানে নতুন বাক্য সংযোজন করা জায়েজ আছে কিনা। বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার ডঃ ইয়াসির ক্বাদি তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে সুন্দর কিছু উদাহরণের সাহায্যে ব্যাপারটা চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মূল বক্তব্য এখানে তুলে ধরছি।

ইয়াসির ক্বাদির মতে, অন্য যেকোনো আইনের মতোই ইসলামি শরিয়তেরও প্রায় সব বিধানেরই ব্যতিক্রমের সুযোগ রাখা হয়েছে। জামাতে সালাত আদায় করা ফরজ হলেও বিশেষ বিশেষ ব্যবস্থায় সেটারও ব্যতিক্রম ঘটতে পারে। যেমন প্লেগের সময় জামাতে সালাত আদায় স্থগিত করা যেতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি হযরত মুহাম্মদ (স)-এর হাতে বাইআত (আনুগত্য, শপথ, ইসলাম গ্রহণ) করতে মদিনায় আসা এক কুষ্ঠরোগীর কথা উল্লেখ করেন। তার কুষ্ঠ রোগের কথা শোনার পর রাসূল (স) তার সঙ্গীদেরকে বলেছিলেন, ঐ ব্যক্তিকে স্বশরীরে এসে বাইআত করতে হবে না। সে যেন মদিনায় প্রবেশ না করেই ফিরে যায়। রাসূল (স) দূর থেকে মৌখিকভাবেই তার বাইআত গ্রহণ করে নিবেন।

এই কুষ্ঠরোগীর একজন সাহাবী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে অন্যদের মধ্যেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কায় রাসূল (স) তাঁকে মদিনায় প্রবেশ করতে নিষেধ করেছিলেন। অপর এক হাদিসে আছে, রাসূল (স) বলেছেন, কুষ্ঠরোগীদের কাছ থেকে এমনভাবে পালিয়ে যাও, যেভাবে তোমরা সিংহর কাছ থেকে পালাও।

সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, কোনো প্রাণঘাতী রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে তাকে মসজিদে আসতে নিষেধ করা যেতে পারে। আর করোনা ভাইরাসের যেহেতু লক্ষণগুলো দেরিতে প্রকাশিত হয়, তাই আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব না কার কার শরীরে ভাইরাসটা অলরেডি সংক্রমিত হয়ে গেছে।

সেক্ষেত্রে কোনো শহরে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানকার কর্তৃপক্ষ এবং আলেম-ওলামারা যদি মনে করেন সেখানে কোনো জায়গায় বেশি মানুষ একত্রিত হলে তাদের কাছ থেকে ভাইরাসটা আরো অনেকের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং ফলশ্রুতিতে অনেকের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, তাহলে তারা এ ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করতে পারেন।

এরকম ক্ষেত্রে সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোরপূর্বক জামাতে সালাত আদায় করতে চাওয়াও উচিত হবে না। এ ব্যাপারে ইয়াসির ক্বাদি এক ব্যক্তির উদাহরণ দিয়েছেন, যে যুদ্ধক্ষেত্রে মাথায় গুরুত্ব আঘাত পেয়েছিল। তার মাথা থেকে রক্ত ঝরছিল, ফলে সে মাথা ব্যান্ডেজ করে রেখেছিল।

সে বুঝতে পারছিল না এরকম অবস্থায় নামাজ পড়ার আগে কী তার ব্যান্ডেজ খুলে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতেই হবে, নাকি এক্ষেত্রে তার জন্য বিধান শিথিলযোগ্য হবে। তার পাশে আরেক ব্যক্তি উপস্থিত ছিল, যে ইসলামের এ ধরনের শিথিলতা সম্পর্কে অবহিত ছিল না। সে ঐ লোকটাকে উপদেশ দিয়েছিল যে, তাকে অবশ্যই ব্যান্ডেজ খুলে মাথা ধুতে হবে। তার পরামর্শ অনুযায়ী আহত লোকটা মাথা ধোয়, ফলে সেখানে ইনফেকশন হয়ে যায় এবং সে মৃত্যুবরণ করে।

রাসূল (স)-এর কাছে যখন এ সংবাদ পৌঁছে, তখন তিনি প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন এবং মন্তব্য করেন, ঐ ব্যক্তি আহত লোকটিকে "হত্যা করেছে।"

ইয়াসির ক্বাদি কুরআন থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আল্লাহ বলেছেন, যদি তোমরা কোনো বিষয় না জানো, তাহলে যারা জানে, তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। ইয়াসির ক্বাদির মতে, এই আয়াতকে রেফারেন্স হিসেবে গ্রহণ করেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফতোয়া কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। এবং তারা সেটাই করছেন। যদি কোনো অঞ্চলের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ঘোষণে দেয় সেখানে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করা উচিত, তাহলে সেখানকার ফতোয়া কাউন্সিলেরও উচিত সেটাকে গাইডলাইন হিসেব গ্রহণ করা।

আজান পরিবর্তন করার ব্যাপারে ইয়াসির ক্বাদি অবশ্য এই ভিডিওতে কিছু বলেননি, কিন্তু অন্য রেফারেন্স থেকে দেখলাম, সাহাবিদের সময়ও খারাপ আবহাওয়ার (প্রচণ্ড ঝড় বা বৃষ্টি) কারণে মুসল্লিদের পক্ষে মসজিদে আসা সম্ভব না হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আজানের শেষে এ ধরনের কথা যোগ করার উদাহরণ ছিল।


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা