শ্বশুরকে দেখে অনেকটা খেয়ালের বশেই পেঁয়াজের বীজের চাষ করা শুরু করেছিলেন সাহিদা বেগম। সময়ের ফেরে তিনিই এখন বছরে আয় করেন কয়েক কোটি টাকা। তাও শুধুমাত্র পেঁয়াজের বীজ বিক্রি করে!

আমরা ও আমাদের সমাজ বরাবরই টিপিক্যাল কিছু কনসেপ্টে বিশ্বাসী। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। তা সম্ভব না হলে নিদেনপক্ষে ভালো একটা সরকারি চাকরী করতে হবে। কৃষিকাজ, হাঁস-মুরগির খামার করে যতই টাকা ইনকাম করা যাক না কেন, এ কাজের  সম্মান নেই। করা যাবেনা। সামাজিক বিভিন্ন বিধিনিষেধের প্রকোষ্ঠে আটক অজস্র মানুষ তাই শেষমেশ কিছুই করতে পারে না। অনেক কিছু হওয়ার কথা থাকলেও সাধারণ এক ছা-পোষা জীবনের ক্রাচে ভর করে একসময়ে শেষ হয় সব। আবার কিছু মানুষ আছেন, যারা সামাজিকভাবে অজনপ্রিয় পথে হেঁটেই হয়ে যান সফল। তেমনই একজন ফরিদপুরের কৃষক পরিবারের গৃহবধূ সাহিদা বেগম।

সাহিদা বেগমের শ্বশুর পেঁয়াজের বীজ চাষ করতেন জমিতে। শ্বশুরকে দেখেই মূলত সাহিদা ভাবলেন, এই কাজটির চেষ্টা করে দেখা যাক। কৃষক পরিবারে বড় হওয়ার কারণে সাহিদা ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ বিষয়ে দক্ষ। তাই শ্বশুরের পরামর্শ নিয়ে ২০০৪ সালে বিশ শতক জমিতে প্রথমবারের মতন পেঁয়াজের বীজের চাষ করেন তিনি। দুই মন বীজ উৎপাদন হয়েছিলো তখন। সেগুলো বিক্রি করে পেয়েছিলেন ৮০০০০ টাকা। উৎসাহ পেয়ে জমি বাড়ান। লোকবল বাড়ান। আরো বেশি জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা শুরু করেন। পরের বছর ১৩ মণ বীজ উৎপন্ন হয়। এভাবেই আস্তে আস্তে বছর গড়ায়। তিনি জমি বাড়ান। বেশি বীজ উৎপাদন করেন। সেগুলো বিক্রি করেন। এভাবে করতে করতে এ বছরে তিনি উৎপাদন করেছেন ২০০ মন বীজ। শুধুমাত্র এ বছরেই চার কোটি টাকারও বেশি ইনকাম করেছেন তিনি।

সাহিদা বেগম প্রতিবছরেই ইনকাম করেন কয়েক কোটি টাকা! 

সাহিদা বেগমের বীজ বেশ জনপ্রিয় বাজারে। 'খান সিডস' নামে বাজারজাত করা হয় এই বীজ। ফরিদপুর ছাড়িয়ে এই বীজগুলো ছড়িয়ে পড়েছে সারা বাংলাদেশেই। তার জমির বীজের চাহিদা ক্রমশই হচ্ছে প্রবল থেকে প্রবলতর। জমি বাড়ালেও, উৎপাদন বাড়ালেও, শ্রমিক বাড়ালেও অনেক সময় চাহিদার সাথে তাল রাখতে পারছেন না তিনি।

বাজারে 'খান সিডস' এর জনপ্রিয়তার পেছনেও আছে বেশ কিছু কারনও। শ্রমিক রেখে বারো মাসই সাহিদা বেগম পেঁয়াজ বীজের যত্ন নেন। পেঁয়াজ বীজ নষ্ট হয় অল্প অযত্নেই। তাই এদিকে খেয়াল রাখতে হয় প্রচণ্ড। সাহিদা বেগমে সেদিকে কোনো কার্পণ্য করেন না। প্রতিবছরে তাই সুস্থ-সবল পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করতে সক্ষম হন তিনি। এই নীরোগ-সবল বীজের কারণেই বাজারে 'খান সিডস' এর এত দাম।

ব্যাঙ্কার স্বামী, দুই সন্তান নিয়ে তার ছোট সংসার। কৃষিক্ষেত্রে তার এই অসামান্য কাজের সুবাদে ফরিদপুর জেলার 'সেরা চাষী'র খেতাবও পেয়েছেন তিনি। প্রতিবছরেই তিনি ব্যস্ত থাকছেন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন নিয়ে। বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে এখন ফরিদপুর আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। এবং সেখানেই সাহিদা লিখছেন সাফল্যের একেকটা গল্প।

সাহিদা বেগমের এই গল্প আমাদের সেই জিনিসটিই বোঝায়- সাফল্যের জন্যে কাজের পেছনে লেগে থাকাটাই আসল। প্রচলিত সামাজিক ধ্যানধারণার বাইরে গিয়ে কাজ করাই মুখ্য। যেকোনো ক্ষেত্রেই অসাধ্যসাধন করা সম্ভব,  যদি থাকে দৃঢ় মনোবল আর অদম্য ইচ্ছেশক্তি।

এই অদম্য সাহিদা বেগমের জন্যে রইলো শুভকামনা৷

*

প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা