মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি সংসদে বলেছেন, চোর ধরেও আপনারা এখন সমালোচনার মুখে। সমালোচিত তো হবেনই! এমপি পাপলু-পাপিয়া-জি কে শামীম-পাপিয়া-সাবরিনা-শিকদার; এরা কাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠেছে?
একটা মানুষের বিরুদ্ধে ৫৬ টা মামলা। এই সরকারের আমলেই তিনি গ্র্রেপ্তার হয়েছিলেন। অথচ সেই মানুষটা কিনা রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আইজি-সচিব-সম্পাদক-সাংবাদিক সবার কাছে যাচ্ছেন। কখনো তিনি ছবি তুলছেন, কখনো হোটেল দখল করছেন, কখনো একে ওকে হুমকি দিচ্ছেন।
এত সব অপকর্ম করেও তিনি আবার টকশোতে যাচ্ছেন। জাতিকে জ্ঞান দিচ্ছেন। দেশের এতো প্রতিষ্ঠান থাকতে করোনাকালে তার রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চুক্তি করেছে, যে হাসপাতারের নাম কেউ শোনেনি। বোঝেন তাহলে দেশটার অবস্থা! বোঝেন আইনের শাসন কোথায়? বোঝেন দেশটা কীভাবে চলে।
রিজেন্ট লিজেন্ড সাহেদের কথা বলছি। এই ঘটনা পুরো রাষ্ট্রের ব্যর্থতাকেই প্রকট করে তুলেছে। প্রথম দায় যদি বলি, দেখেন একটা মানুষের বিরুদ্ধে এতোগুলো মামলা এবং সে একটার পর একটা প্রতারণা করছে, অথচ পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছুই করতে পারছে না, তার মানে পুলিশ ব্যর্থ।
দেখেন সাহেদ এর ওর বিরুদ্ধে মামলা করছে, যেভাবে ইচ্ছে হয়রানি করছে, রাতারাতি হোটেল দখল করে সেই মালিকের বিরুদ্ধেই দিনে দিনে আদালত থেকে আদেশ বের করছে, অথচ তার নিজের বিরুদ্ধে এতোগুলো মামলায় কিছু হচ্ছে না। তার মানে এই দেশের বিচার ব্যবস্থায় যথেষ্ট সমস্যা।
আমলাতন্ত্রের কথা বলবেন? আমাদের সচিবরা সব সাহেদের পেছনে। তার হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করার জন্য ব্যাকুল সবাই। এমনকি দায়িত্বরত ডাক্তাররা সচিবকে সব জানিয়ে চিঠি দেবার পরেও শাহেদের কিছু হয়নি। উল্টো ডাক্তারকে বদলি করা হচ্ছে। সাবেক মহাপরিচালক তো বলেই বসলেন, সচিবের নির্দেশই রিজেন্টকে বাছাই। আমলাতন্ত্রও শুধু ব্যর্থ নয়, সাহেদকে নানা সময় তারা রীতিমতো প্রশয় দিয়েছে।
এবার বলেন একটা লোক এতোগুলো অপকর্ম করছে, এতোগুলো লোককে প্রতারিত করছে, হাসপাতালের ব্যবসা রমরমা করতে ভাড়া করা ড্রাইভার দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে অথচ তার বিরুদ্ধে কোথাও কোন প্রতিবাদ নেই। একটা সংবাদ সম্মেলন নেই। আমরা সাধারণ জনগন এই মানুষটার বিরুদ্ধে না কিছু করতে পেরেছি, না তার মুখোশ উম্মোচন করতে পেরেছি। তার মানে আমরা জনগণ ব্যর্থ।
এবার দেখেন রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপিদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে শাহেদ তার মানে পুরো ব্যবস্থাপনায় কতো সমস্যা! আর গণমাধ্যম? আমাদের সাংবাদিকরা তো শুধু ব্যর্থ নয়, বলতে হবে তাদের অনেকেই রীতিমতো সাহেদের সহযোগী। এরা তাকে টকশোতে ডেকেছে, তাকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে, তাকে হিরো বানিয়েছে।
এই যে এতোসব ব্যর্থতার মূল কারণ রাজনীতি। দেখেন এই দেশের রাজনীতি দিনের পর দিন সাহেদদের মতো প্রতারককে কাছে টেনেছে। তাকে পদ-পদবী দিয়েছে। তার মানে টাকা থাকলেই দলের পদ কেনা যায়। এসএসসি পাস না করেও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির পদ কেনা যায়। ভাবেন তাহলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা।
একবার পুরো ঘটনাগুলো যোগ করুন। দেখবেন আমরা পুরো জাতি সম্মিলিত ব্যর্থ। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ। এই ঘটনা প্রমাণ করে আমাদের রাষ্ট্রের কোন দপ্তর ঠিকমতো তার দায়িত্ব পালন করে না। একবার ভাবেন যে কোন একটা প্রতিষ্ঠান তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলেই করলে সাহেদের মতো লোক এত দূর আসতে পারতো না।
কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করতে পারেন সাহেদ ধরা পড়লো কী করে? হ্যাঁ, ধরা পড়লো কারণ এর মধ্যেও ধন্যবাদ দিতে হয় সবার আলোচনায় আড়ালে থাকা সেই তরুণ গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং তাদের দলবলকে যারা রিজেন্ট হাসপাতালের সনদ জালিয়াতির ঘটনা ধরে শাহেদের অপকর্মগুলো তুলে এনেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেছে সরাসরি সেই দলিল দস্তাবেজ পাঠিয়েছে। এরপর অভিযান হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি সংসদে বলেছেন, চোর ধরেও আপনারা এখন সমালোচনার মুখে। সমালোচিত তো হবেনই। আপনি বলেন তো দিনের পর দিন সাহেদের প্রতারণা কেন ধরা পড়লো না। পুরো রাষ্ট্র কেন ব্যর্থ হলো? আমাদের পুলিশ-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থা-রাজনীতি সব কেন ভেঙে পড়েছে? বলেন তো আপনার নেতারা কতো টাকায় সাহেদকে পদ দিলো? কী করে এমন লোক কী প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির সঙ্গে হাসিমুখে ছবি তোলে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ, ব্যবস্থা নিন। আমি এখনো বিশ্বাস করি এই দেশে বঙ্গবন্ধু যেমন কোনদিন এক টাকার দুর্নীতি করেননি, আপনিও করেন না। আপনি নিজে যদি দুর্নীতি না করে থাকেন তাহলে রাষ্ট্রে কেন এই সর্বগ্রাসী দুর্নীতি বন্ধ করতে পারছেন না।
আর দেশে তো শুধু একজন সাহেদ নন, এমপি পাপলু-পাপিয়া-ঠিকাদার জি কে শামীম-পাপিয়া-সাবরিনা-শিকদার এমন বহু নাম আছে। পুরো দেশটাই তো সাহেদ তৈরির কারখানা। এই যে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে, কর ফাঁকি দিয়ে, টাকা পাচার করে, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়, সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় সাহেদদের জন্ম বা বেড়ে ওঠা এসবের শেষ কোথায়?
ঢাকা শহরে আজ জলাবদ্ধতা। বলেন তো কতো শত শত কোটি টাকা ওয়াসা পানিতে ফেলেছে। এই দুর্নীতির কি বিচার হয়েছে? স্বাস্থ্যখাতে তো ভয়াবহ দুর্নীতি। কর্মচারীদেরই সেখানে শত শত কোটি টাকা। ভূমি অফিস থেকে শুরু করে সর্বত্রই কম-বেশি একই চিত্র। আপনি আমাদের করের টাকায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন শতভাগ বাড়লো, দুর্নীতি কি বন্ধ হয়েছে? টানা ১২ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, তারপরেও কেন এই লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না। গত ১২ বছরে কোন দুর্নীতিবাজ বড় রাজনীতিবিদ বা আমলার সাজা হয়েছে?
রাষ্ট্রকে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতেই হবে। কারণ, এই যে আমরা যারা জীবনে কখনো কোন অন্যায় করার কথা ভাবি না, অসৎ পথে চলি না, যারা এখনো এই দেশটা নিয়ে সব স্বপ্ন দেখি, যাদের একটাই পাসপোর্ট, যারা তাদের সন্তানদের জন্য একটা সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে তাদের দোষটা কী বলতে পারেন?
আচ্ছা বাংলাদেশটাকে ভালোবাসা কী আমাদের অপরাধ? যদি অপরাধ না হয় তাহলে কেন এই দেশের সব দু্নীতিবাজ-লুটেরা-টাকা পাচারকারীদের বিচার হবে না? কেন সাহেদ তৈরির কারখানা বন্ধ হবে না? এই রাষ্ট্রের জনগন-সব প্রতিষ্ঠানকে বলবো, আমরা সবাই মিলে বারবার যদি ব্যর্থ হই তাহলে তো সাহেদরা তৈরি হবেই।
রাষ্ট্রকে বলবো, দেশটাকে কোনভাবেই সাহেদ তৈরির কারখানা হতে দেওয়া উচিত নয়। কাজেই সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করুন। নয়তো ভবিষ্যত অন্ধকার। আপনাদের সবার কাছে আকুতি বিশেষ করে রাষ্ট্রের কাছে, চলুন আমরা এই দেশটাকে বাঁচাই। নয়তো প্রজন্ম কোনদিন আমাদের ক্ষমা করবে না।
-
* প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন
* সমাজের নানান অসঙ্গতি নিয়ে আওয়াজ তুলুন। অংশ নিন আমাদের মিছিলে। যোগ দিন 'এগিয়ে চলো বাংলাদেশ' ফেসবুক গ্রুপে