মোঃ শাহেদ করিমের গ্রেপ্তারে কার কী প্রতিক্রিয়া?
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
কেউ বলছেন সরকারের সফলতা, কেউ বলছেন সাজানো নাটক- সময়ের আলোচিত চরিত্র, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং বিশিষ্ট প্রতারক শাহেদ করিমের গ্রেফতার নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া আসতে পারে, সেটাই কল্পনা করার চেষ্টা করেছেন আখতারুজ্জামান আজাদ...
আওয়ামি চাটুকার:
কোথায়? শাহেদ কেন গ্রেপ্তার হয় না, শাহেদ কেন গ্রেপ্তার হয় না— বলে-বলে যারা চিল্লাচ্ছিল, মুখে ফেনা তুলছিল; তারা আজ কোথায়? এখন তারা চুপ কেন? তাদেরকে এখন পাই না কেন? আগেই বলেছিলাম— আস্থা রাখেন, শাহেদ গ্রেপ্তার হবে, আপা কাউকে ছাড় দেবে না। আপা একা মানুষ, একা কয় দিক আর সামলাবে। চারদিকে সব তো চোর। আপনি-আমি কতটুকু ভালো? আপা ঠিকই শাহেদকে ধরেছে। আপাকে আর ভুল বোঝানো যাবে না, ভুল বোঝানোর দিন শেষ।
এক শ্রেণির লোক আছে, যারা শুধু এই আমলের দুর্নীতিই দেখবে। কিছু সুশীল অতীতের দুর্নীতি দেখবে না। বখতিয়ার খলজি যে দুর্নীতি করে লক্ষ্মণ সেনকে সরিয়ে গদিতে বসেছিল, সন্তান হয়েও আওরঙ্গজেব শাহজাহানের সাথে যে প্রতারণাটা করেছিল, মির জাফর-জগৎশেঠ উমিচাঁদ-রায়বল্লভ ইয়ার লতিফ-ঘষেটি বেগমরা নবাবের সাথে যে বাটপারি করেছিল; এই সুশীলেরা তা নিয়ে কিছুই বলবে না। এদের সবকটাকে চিনে রাখলাম। সময়মতো উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
জাতীয়তাবাদী জংলি:
সাতক্ষীরায় এই ফ্যাসিস্ট সরকারের আবারও একটা নাটক মঞ্চস্থ হলো— শাহেদ নাটক। স্ক্রিপ্ট অত্যন্ত দুর্বল। এই শাহেদ সেই শাহেদ না, ও রেপ্লিকা। আসল শাহেদকে অনেক আগেই হিন্দুস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে এখন প্রণব বাবুর কোলে বসে দেশবিরোধী চক্রান্ত করছে। অথচ 'দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও' স্লোগান দিয়ে দেশনেত্রী আজ মিথ্যা মামলায় নাজেহাল, তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমান নির্বাসনে, হাজার-হাজার নেতাকর্মী কারাগারে। মধ্যরাতের অবৈধ নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করা অবৈধ সরকার পারলে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিক, ছিয়ানব্বইয়ের পনেরোই ফেব্রুয়ারির মতো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করুক।
নির্বাচন অবাধ হলে হারিছ চৌধুরী, গিয়াস আল মামুন, লুৎফুজ্জামান বাবরের মতো সৎ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের তরুণরা নির্বাচিত হয়ে এসে দেশের হাল ধরতে পারতেন; তারেক রহমান দেশে ফিরে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারতেন, কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারতেন পিরোজপুরের পাখি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এসব শাহেদনাটক করে লাভ হবে না। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে তারেক-মামুন-হারিছকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে, আল্লামা সাঈদীকে মুক্তি দিতে হবে।
ভয়ংকর নারীবাদী:
আজ দেখলাম শাহেদ নামে একটা জলহস্তী গ্রেপ্তার হয়েছে। তাকে নিয়ে কিছুটা মাতামাতিও হচ্ছে। তবে পরশু গ্রেপ্তার হওয়া সাবরিনাকে নিয়ে যত মাতামাতি ফেসবুকে দেখেছি, শাহেদকে নিয়ে এর সিকিভাগও হচ্ছে না। হবেই বা কেন, শাহেদ তো মেয়ে না! শাহেদের শরীরটা নিয়ে তো আর শকুনির মতো ব্যবচ্ছেদ করা যায় না! সাবরিনা মেয়ে বলে ওর ছবিগুলো নিয়ে যত নোংরামি হলো। দেখে আমার সেরেফ গা ঘিনঘিন করেছে, লোম রি রি করেছে, ওয়াক-ওয়াক করে বমি পেয়েছে। আমি পরশু থেকে এখন পর্যন্ত বমি করেছি। মা কেমন সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে। এর আগে কয়েকবার বমি করতে দেখে মা আমাকে নির্মমভাবে পিটিয়েছিল। এখন আমি সতর্ক থাকি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ওদেরকে বাধ্য করি, যথাসময়ে পিপিপি পরিয়ে নিই নিজহাতে। তাই এখন আর বমিও করতে হয় না।
সাবরিনাকে নিয়ে নোংরামি দেখে এই যে বমি করতে দেখে মা আমার দিকে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে তাকাচ্ছে, এই একই পুরুষতন্ত্র আমি সাবরিনাকে নিয়ে নোংরামি করা পুরুষদের চোখেও দেখেছি। যারা সাবরিনার বডি শেমিং করেছে, তারা শাহেদ নামের হোঁৎকা-মোটা-ভোম্বলটার বডি শেমিং করছে না কেন? শাহেদ পুরুষ বলে? আমার মা থেকে শুরু করে সাবরিনাবিরোধী কারো খুলিতে মগজ নেই, সবার মাথাভর্তি পুরুষতন্ত্রের থিকথিকে বীর্য। আমি এই পচাগলা পুরুষতন্ত্রের মুখে দাঁড়িয়ে হড়হড় করে প্রস্রাব করি। ছিঃ ওয়াক থুঃ
ফেসবুক সমাজবিজ্ঞানী:
শাহেদকে নিয়ে খুব মাতামাতি হচ্ছে দেখলাম। খুব সস্তা ট্রলও হচ্ছে একে নিয়ে। কিন্তু ট্রল করে লাভ নেই। ট্রল করে-করে শাহেদের অপরাধ হালকা করে দিচ্ছে অকর্মা আহাম্মকের দল। এই সমাজে শাহেদ একজন না; হাজার-হাজার, লাখ-লাখ, কোটি-কোটি। আজ একজন শাহেদকে নিয়ে কথা হচ্ছে কেন? কেন অন্য শাহেদদেরকে নিয়ে হচ্ছে না? ব্যক্তি শাহেদের কী দোষ? সে তো সিস্টেমের শিকার, এ দেশের সিস্টেমই তাকে শাহেদ বানিয়েছে। সে আমাদের সমাজব্যবস্থারই ফসল। ফেসবুকে সস্তা ট্রল করলে হবে না। শাহেদদেরকে নির্মূল করতে হলে মূলে হাত দিতে হবে, শিক্ষাব্যবস্থা বদলাতে হবে, কাজ করতে হবে সবাইকে একযোগে।
ফেসবুক কবি:
প্রিয়তমা, আমার মনের রিজেন্ট হাসপাতালে শুধু তোমারই করোনাপরীক্ষা হবে। থাকবে না আর কোনো ডাক্তার-নার্স-রোগী। শুধু তুমি আর আমি মিলে সাজাব আমাদের ব্যক্তিগত হাসপাতাল। নমুনা যেমনই হোক, রেজাল্ট আসবে শুধুই পজিটিভ। এই বাংলায় তিনটি নদী— পদ্মা, মেঘনা যমুনা; তোমার ভেতরে ঢালব আমি আমার যত নমুনা। তোমার চিকিৎসা করব আমি, আমার চিকিৎসা করবে তুমি। হাসপাতালেই আমাদের বিয়ে হবে, হবে ফুলশয্যা। প্রতিরাতে আমি ভাঙব হাসপাতালের একটি করে খাট, প্রতিবছর তোমার পেট আমি শাহেদের পেটের মতো বানাব, প্রিয়তমা।
ওয়াজি হুজুর:
এই যে শুনলাম সাতক্ষেরা থেইকে এক যুবক গ্রেপ্তার হইয়েছে। কী নাম? কী নাম? নাম কী? কী, কথা বলে না কেন? শাহেদ। ঠিক কি না? ইন্টারনেটে রিচার্জ কইরে দেইখিছি- ঐ যুবক বোরকা পইরে পালাইতিছিল। কী পইরে? কী পইরে? কী পইরে? কথা কয় না কেন, মোছলমান? গলায় আওয়াজ নাই? ঐ সাবরিনা বেগমের কথা কইলি তো আওয়াজ ঠিকই বেইর হইতো। ঠিক কি না?
শাহেদ বোরকা পইরে পালাইতিছিল। ঠেকায় পড়লি বিড়ালও গাছে ওঠে, বাঘেও ঘাস খায়, পুরুষেও বোরকা পরে। বোরকা পরে না খালি মেয়েছেলেরা। এরা একেকটা বুক বের কইরে, পাছা ঢুলায়ে, মাজা নাচায়ে রাস্তাঘাটে এইকেবেইকে চলে; যুবকদের মাথা যায় আউলে, করে ধর্ষণ, দোষ হয় যুবকদের। হয় কি না? ওরে হয়, হয়, হয়। আ রে, পর্দার আড়ালে ও আমার মা-বোনেরা, তোমরা যদি হেন্দি সিরিয়াল না দেইখতে, ঠেকঠাকমতো বোরকা পইরতে; দেশে বন্যা আইসতো না, আম্ফান হইতো না, করোনা ঢুইকতো না।
করোনা পর্দাকে ভয় পায়, বোরকাকে ভয় পায়। যেই দেশের সকল মেয়েছেলে বোরকা পরে; সেই দেশে করোনা আসে না, আসে না, আসে না। কথা কও ঠিক কি না! আমার মা-বোনেরা, বিপদে পড়লে পুরুষরা পর্যন্ত বোরকা পরে, অথচ তোমরা পরো না। এই জন্যই গজব আমাদের পেছু ছাড়ে না। আজকে যুবক শাহেদের গায়ে বোরকা। অথচ সাবরিনার গায়ে বোরকা নাই, মাথায় ঘোড়ার ল্যাজের মতো চুল। কেয়ামতের ময়দানে ওর প্রত্যেকটা চুল থেইকে বাহাত্তইরটা কইরে সাপ বেইর হবে। সাবরিনা জাহান্নামি, জাহান্নামি, জাহান্নামি। কথা কন- ঠিক না বেঠিক?
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন