এক মায়ের ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস এটি। কত চমৎকারভাবেই না তিনি বড় করে তুলছেন তাঁর বাচ্চাগুলোকে! মা সাদিয়া নাসরিন ও তাঁর বাচ্চাদের জন্য অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা।

সাদিয়া নাসরিন: আমার মেয়েটা তার ছোট দুই ভাইকে পড়ায়, মাসে ৫০০০ টাকা টিউশন ফি পায়। প্রতিমাসের সাত তারিখ ওর বেতন বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এটা তার নিজের রোজগার। ওখান থেকে প্রতিমাসে তার স্টুডেন্ট একাউন্টে বাধ্যতামূলক জমা দিতে হয় ৩০০০ টাকা। বাকিটা তার হাতখরচ।

আমীমের মাসিক রোজগার প্রায় তিনহাজার টাকার মতো। সে প্রতিবার গাড়ি পরিষ্কার করে পায় ১০০ টাকা, মাসে পনেরবার করলে ১৫০০। আমার ছবি তুলে ভালো ছবি প্রতি ২০ টাকা নেয়। আমার আইটি সাপোর্ট দেয় তার সার্ভিস চার্জ পায় অন এ্যাভারেজ ১০০০ টাকা। তার স্টুডেন্ট একাউন্টে জমা দিতে হয় ২০০০ টাকা। বাকিটা তার হাতখরচ।

যামীম গাছে পানি দেয়। প্রতিবার ৫০ টাকা। মাসে কম বেশী ১৫০০ টাকা রোজগার করে। এছাড়া এই মাসে আমার ছবি তুলে পেয়েছে ৩০০ টাকা। ওরও স্টুডেন্ট একাউন্ট আছে ওখানে জমা দিতে হয় ১০০০ টাকা। বাকিটা হাতখরচ।

এতোগল্প করার উদ্দেশ্য হলো, তাদেরকে সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির শিক্ষা দেয়া হয়েছে ছোটবেলা থেকেই। যার যার আয় অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রত্যেকের একজন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর পড়ার খরচ স্পন্সর করতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে। প্রতি ঈদে ওদের স্পন্সর শিশুকে নতুন জামা আর খাবার কিনে দিতে হয়। একেবারে ছোটবেলার থেকেই এই নিয়ম।

তো, এইবার লকডাউনের শুরু থেকে ৪৭০ পরিবারের পাশে গিয়েছি আমি ও আমরা। তার মধ্যে ২১০টি পরিবারকে খাদ্য ও নগদ টাকা উপহার দিয়েছে আমার পরিবার। ওখানে তাদের কন্ট্রিবিউশন ছিলো। গত দুমাস তারা একটা বার বাইরের খাবার খায়নি, বায়না করেনি, একটা পাই পয়সা খরচ করেনি।

এর মধ্যে ৫০ টি পরিবার আছেন যাঁরা আমার সহকর্মী, স্বজন, পরিজন। সামাজিক অবস্থানের কারনে তাঁরা কারো সাহায্য চাইতে পারবেননা। কিন্তু তাঁরা কষ্টে আছেন। গতমাসে দেয়া খাবার, টাকা সব শেষ। তাঁদের কাজ নেই, হাতে টাকা নেই। এই মাসে রোজা। তাঁদের সেহেরী, ইফতার এর ব্যবস্থা না করে আমি কী করে খেতে বসি!

এদিকে, আমারই এখনো বেতন টেতন হয়নি আর কি! কী করা যায় সেটা নিয়ে বাচ্চাদের সাথে কথা বলছিলাম গত পরশুদিন। তারা সব শুনে বললো, "এইবছর যেহেতু ঈদের কেনাকাটার প্রশ্ন নেই, ঈদের খরচ পুরোটাই বেঁচে যাবে। আগামী দুমাসেও আমরা বাইরে খেতে বা ঘুরতে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেই খরচও হবেনা। তারপর ইফতারিতেও আমরা সিম্পল খাবো। খরচ কমবে। তুমি সেই টাকা মানুষকে দাও।"

আমার ইএমআই এবং ডিপিএস এর প্রিমিয়াম জুন পর্যন্ত পোস্টপন্ড করেছে ব্যাংক। সব হিসেব করে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, আগামী তিনমাস আমরা এই পঞ্চাশটি পরিবারের পাশে থাকতে পারবো। এই তিনমাস আমাদের সব বাড়তি কেনাকাটা, খরচ বন্ধ।

এই তিনমাস বাচ্চারা ওদের হাতখরচের টাকা পুরোটাই দেবে আমাকে। গত দুমাস স্কুল বন্ধ, তাই হাতখরচ লাগেনি ওদের। সুতরাং এই মাসের জন্য মারসাদ দিয়েছে ৫০০০ টাকা, আমীম ২৫০০ টাকা আর যামীম ৫০০ টাকা। (যামীম প্রথমে দিতে চায়নি। কিন্তু যখনি বলেছি "মানুষের ফুড নেই", সাথে সাথেই বললো, নাও মা। আরো লাগলে নিও)

সুতরাং, আমরা আবার ঝাঁপিয়ে পড়লাম। আবার বাজার করলাম। আবার মানুষের কাছে গেলাম ভালোবাসা নিয়ে। ৩০ টি পরিবারের কাছে একমাসের খাবার আর সামান্য নগদ টাকা পৌঁছে দিয়েছি আজকে। আর ২০ টি পরিবারে সদস্য এবং অবস্থা বিবেচনায় ২০০০-৩০০০ টাকা করে বিকাশ করে দিয়েছি কমিশন সহ। আপাতত রোজাটা তো শুরু করুক! জানিনা কতোদিন পারবো। তবে এমন জানবাচ্চা থাকলে আমি কি আর কোনকিছুকে ভয় পাই?


শেয়ারঃ


এই বিভাগের আরও লেখা