সাদাত রহমান: আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার জয়ী বাংলাদেশী বিস্ময়বালক!
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
- পড়তে সময় লাগবে মিনিট
মাত্র সতেরো বছর বয়সী বাংলাদেশী সাদাত পৌঁছে গিয়েছে এমন বিশ্বমঞ্চে, যেখানে বিশ্বনেতারা তার ভূয়সী প্রশংসা করছে অকুন্ঠভাবে। কে এই সাদাত? কী করেছে সে? কেনই বা তাকে নিয়ে এত মাতামাতি?
দেশব্যাপী তুমুল সহিংসতা, মারামারি, হানাহানির এ যুগেও মাঝেমধ্যে দুয়েকটা ভালো খবর হুশ করে চলে আসে আমাদের সামনে। যে খবরগুলো বিক্ষিপ্ত সময়ের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়েও আমাদের মন ভালো করে দেয়। এই যেমন, সম্প্রতি বাংলাদেশের এক কিশোর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশি সেই কিশোরের নাম সাদাত রহমান৷ যার প্রশংসায় এখন মুখর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের অনেক মানুষজন। মালালা ইউসুফজাই, মাশরাফি বিন মর্তুজা, জুনায়েদ আহমদে পলক সহ অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অল্পবয়সী এই বিস্ময়কর প্রানশক্তিকে।
এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, ২০০৫ সালে রোমে অনুষ্ঠিত নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের এক শীর্ষ সম্মেলন থেকে এই পুরস্কার চালু করে ‘কিডস-রাইটস’ নামের একটি সংগঠন। ‘কিডস রাইটস’ নামের নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক এই সংগঠন ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোরদের আবেদনের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে একজনকে বিজয়ী নির্বাচিত করে চূড়ান্তভাবে। এ বছরে ৪২টি দেশের ১৪২ জন প্রতিযোগীর আবেদন জমা পড়ে এই প্রতিযোগিতায়৷ যেখান থেকে শেষপর্যন্ত সাদাতকে এই পুরস্কারের জন্য বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
যে কারণে সাদাত পেয়েছেন আন্তর্জাতিক এ সম্মান, সেটা সম্পর্কে জানা গেলো, সতেরো বছর বয়সী সাদাত বানিয়েছেন একটি মোবাইল এ্যাপ, যে এ্যাপের মাধ্যমে সাইবার বুলিং এর ভিকটিম কেউ চাইলে অনলাইনে অভিযোগ জানাতে পারবেন। তাছাড়া এই এ্যাপের মাধ্যমে সাইবার বুলিং, অনলাইন থ্রেট সম্পর্কে শিশুদের প্রাথমিক ধারণাও দেয়া হয়। সাদাত এই এ্যাপ বানাতে অনুপ্রাণিত হন, যখন সে জানতে পারে, সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে তার এলাকাতেই মারা গেছে এক কিশোরী। এরপরেই সে এই এ্যাপ নিয়ে কাজ করতে মনোযোগী হয়। যে এ্যাপ এখন সাদাতের জেলার প্রায় ১৮০০ কিশোরের মধ্যে ছড়িতে পড়েছে। জেলা ছাড়িয়েও এই এ্যাপটি ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশে, সবখানে।
'সাইবার টিনস' নামের এই এ্যাপের মাধ্যমে তরুণেরা তাদের গোপনীয়তা বজায় রেখে সাইবার বুলিং এর অভিযোগ দায়ের করতে পারবে। এরপর তাদেরকে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে। ঠিক এভাবেই এই এ্যাপ ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত তিনশো তরুণ পেয়েছেন সহায়তা। এখন পর্যন্ত সাইবার বুলিং এর দায়ে আট জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। সাদাত সাথেসাথে এও জানিয়েছেন, পুরস্কার হিসেবে পাওয়া এক লাখ ইউরো সে ব্যয় করবে এই এ্যাপ্লিকেশন দেশব্যাপী আরো অজস্র মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার কাজে। দেশব্যাপী একটা আলোড়ন তুলতে চায় সে, এই এ্যাপ দিয়ে। এছাড়াও সাদাত তার বন্ধুদের নিয়ে ‘নড়াইল ভলেন্টিয়ারস’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন শুরু করেছে। যে সংগঠন বেসরকারি সংস্থা একশনএইডের ‘ইয়ুথ ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ-২০১৯’-এ বিজয়ীও হয়। বর্তমানেে সাদাত 'সেফ ইন্টারনেট, সেফ টিনএজার’ নামের একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে সাদাত।
গত বছর এই শিশু শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন সুইডেনের কিশোরী পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। গ্রেটাকে চেনে না, পৃথিবীতে এমন মানুষজন খুব কমই আছে৷ তার পরের বছরই পুরস্কারটি পেলেন সাদাত। আবার যার হাত থেকে সাদাত পেলেন এই পুরস্কার অর্থাৎ মালালা ইউসুফজাই, সেই মালালাও এই শিশু শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন ২০১৩ সালে। যার পরের বছরেই মালালা পেয়েছিলেন নোবেল পুরস্কার। এবার সাদাত কতটুকু কী করতে পারবেন, সেটা এখনই কারো পক্ষে সঠিকভাবে বলা সম্ভব না। তবে যেভাবে সাদাত এগোচ্ছেন, পথ ও শপথ যদি ঠিক থাকে, কেউ আটকাতে পারবেনা তাকে, এটা নিশ্চিত। এবং সাদাতের মত কিশোরেরা আস্তে আস্তে যদি ধরে ফেলেন দেশের হাল, তাহলে অসভ্যের বিষাক্ত নিশ্বাস থেকে দেশ যে মুক্ত হবে পুরোপুরি, তাও আমরা হলফ করে বলতে পারি।
সাদাতের জন্যে ভালোবাসা রইলো।
*
প্রিয় পাঠক, চাইলে এগিয়ে চলোতে লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই লিংকে ক্লিক করে- আপনিও লিখুন